পশ্চিমবঙ্গ আর ওড়িশা। পড়শি দুই রাজ্যেই বেসরকারি বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। দু’রাজ্যেরই বাস-মালিকেরা ওই আন্দোলন থেকে পিছিয়ে এসেছেন। এই মিলের সঙ্গে সঙ্গে ফারাকও আছে। সেটা হল, ওড়িশায় ধর্মঘটের ডাক তুলে নেওয়া হয়েছে সরকার বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবি মেনে নেওয়ার পরে। আর ভাড়া বাড়ানোর দাবি পূরণের আগেই প্রস্তাবিত ধর্মঘট স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন বাংলার বাস-মালিকেরা।
এই নিয়ে এক বছরে চার বার ধর্মঘট ডেকেও পিছিয়ে এল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বাস-মালিক সংগঠন। অন্যান্য বারের মতো এ বারেও জানাল, ভাড়া বাড়ানোর জন্য সরকারকে আরও কয়েকটা দিন সময় দিতে চায় তারা। আগামী ৩০ অগস্টের মধ্যে নবান্ন কোনও সিদ্ধান্ত না-নিলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে ফের ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে।
ওড়িশা সরকার অবশ্য ওই রাজ্যের বাস-মালিকদের দাবি মেনে মঙ্গলবার ভাড়া বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছে। তাই আজ, বুধবার ওই রাজ্যে বেসরকারি বাসের মালিকেরা ধর্মঘটের যে-ডাক দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সংস্থার খবর, ওড়িশায় এখন সাধারণ বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৬৪ পয়সা, এক্সপ্রেস বাসে ৬৭ পয়সা, ডিলাক্স বাসে ৮৯ পয়সা এবং বাতানুকূল বাসে এক টাকা আট পয়সা। এ দিন অল ওড়িশা প্রাইভেট বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকের পরে সরকার জানায়, কয়েক দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বাসের ভাড়া কিলোমিটার-পিছু পাঁচ থেকে আট পয়সা বাড়ানো হল। ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে।
পশ্চিমবঙ্গেও বুধবার থেকে টানা তিন দিনের বাস-মিনিবাস ধর্মঘট ডেকেছিল ছ’টি বাস-মালিক সংগঠন। তাদের মধ্যে একটি সংগঠন সোমবারেই ধর্মঘটের ডাক তুলে নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছিল। মঙ্গলবার একই কথা জানায় বাস-মালিকদের অন্যান্য সংগঠনও। ধর্মঘটের ডাক তুলে নেওয়ার কারণ হিসেবে মালিকেরা আগের কয়েক বার সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। এ বার অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের অনুরোধের কথা জানান সংগঠনের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের বাইরে। এখন ধর্মঘট না-করার জন্য মুকুলবাবু অনুরোধ জানান। তাই ধর্মঘট স্থগিত রাখা হচ্ছে।
বাস-মালিকদের একাংশ অবশ্য জানান, মুকুলবাবুর অনুরোধের মধ্যেই হুমকি ছিল। বাস-মালিকদের পরোক্ষে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে নেই। এই সময়ে ধর্মঘট করলে যেটুকু ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, তা-ও আর থাকবে না। তাঁদের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী এমনিতেই বাসভাড়া বাড়াতে নারাজ। এই অবস্থায় ধর্মঘট করলে দলের নেতারা যে কোনও অবস্থাতেই মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন না, তা-ও পরোক্ষে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। “তাই আমরা ধর্মঘটের ডাক প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছি,” বলেছেন ওই সব বাস-মালিক।
বাস-মালিকদের এই সিদ্ধান্তে খুশি পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেন, “বাস-মালিকদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করব, বাস-মালিকেরা আগের মতোই সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেবেন।” নেতার অনুরোধে ধর্মঘট স্থগিত রাখলেন বাস-মালিকেরা। তাঁদের দাবি মেনে সরকার কি এ বার বাসভাড়া বাড়াবে?
জবাবে নীরব থেকেছেন মন্ত্রী। তৃণমূলের তরফে অন্য কেউই নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারেননি।