সাগর-হত্যা

ভয়ে সব তথ্য দেননি সাক্ষীরা, ধারণা কোর্টের

সিআইডি-র তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ বার নিজেদের গড়ে দেওয়া ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তকারী দলের রিপোর্ট পেয়ে তারা বলল, বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যার সাক্ষীরা নির্ভয়ে পুলিশের সঙ্গে কথাই বলতে পারছেন না। কিন্তু সাক্ষীরা মন খুলে সব কথা না-বললে খুনের জট খোলা মুশকিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ১০:১৯
Share:

সিআইডি-র তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ বার নিজেদের গড়ে দেওয়া ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তকারী দলের রিপোর্ট পেয়ে তারা বলল, বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যার সাক্ষীরা নির্ভয়ে পুলিশের সঙ্গে কথাই বলতে পারছেন না। কিন্তু সাক্ষীরা মন খুলে সব কথা না-বললে খুনের জট খোলা মুশকিল।

Advertisement

কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)-এর জমা দেওয়া রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বুধবার বলেন, সাক্ষীরা উপযুক্ত তথ্য দিতে ভয় পাওয়ায় তদন্ত বিঘ্নিত হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জিজ্ঞাসাবাদের সব ডিভিও ফুটেজ তাঁর এজলাসে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে এই মামলার কেস ডায়েরিও তলব করেছে হাইকোর্ট। এই মামলার ফের শুনানি হবে ১২ মার্চ।

রাজ্য পুলিশের ডিজি গোটুর মহারেড্ডি প্রভু রাজাশেখর রেড্ডির নেতৃত্বাধীন বিশেষ তদন্তকারী দল মঙ্গলবার তাদের প্রথম রিপোর্ট পেশ করেছে। সেই রিপোর্ট পড়ার জন্য সময় চেয়ে নিয়ে বিচারপতি দত্ত বলেছিলেন, তিনি বুধবার মতামত জানাবেন। এ দিন তিনি মন্তব্য করেন, “রিপোর্ট খতিয়ে দেখে আমার মনে হচ্ছে, তদন্তকারী অফিসারদের সামনে সাক্ষীদের অনেকেই খোলা মনে কথা বলেননি। তাঁদের মনে ভয় কাজ করেছে। তাই প্রতিটি জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ফুটেজ দেখা প্রয়োজন।”

Advertisement

গত বছর ২১ জুলাই চতুর্থ দফার পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে পাড়ুইয়ের বাঁধ-নবগ্রামে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মী সাগরবাবু। সেই হত্যাকাণ্ডের পুলিশি তদন্ত নিয়ে দফায় দফায় ক্ষোভ প্রকাশ করে উচ্চ আদালত। বিশেষ করে মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন, হাইকোর্টে সেই প্রশ্ন ওঠে। পুলিশের গড়িমসিতে হতাশ হয়ে সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষ এই হত্যাকাণ্ডের সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

নিহতের বৌমা শিবানী ঘোষের অভিযোগ ছিল, আক্রমণের পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শ্বশুরমশাইকে ফেলে রেখে পুলিশ জোর করে তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিল। সেই সাদা কাগজে কয়েক জনের নাম লিখে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পায় সিআইডি। সাগরবাবুর পরিবারের অভিযোগ, এফআইআরে তৃণমূলের বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং বিকাশ রায়চৌধুরীর নাম একেবারে প্রথমে থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেনি। তদন্তেও অগ্রগতি হয়নি। হাইকোর্ট তার পরেই সিআইডি-র কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে।

বিচারপতি দত্ত চেয়েছিলেন, ডিআইজি (সিআইডি) দময়ন্তী সেন পাড়ুই মামলায় তদন্তের দায়িত্ব নিন। দময়ন্তীদেবী মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণ এবং ধর্ষিতার পুড়ে মৃত্যুর তদন্তভার নিয়েছিলেন হাইকোর্টের নির্দেশেই। কিন্তু শারীরিক কারণে তিনি সাগর-হত্যার তদন্তভার নিতে চাননি। তার পরে ওই তদন্তের জন্য অন্য দুই আইপিএস অফিসার সৌমেন মিত্র ও নীরজ সিংহের নাম উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নেতৃত্বে বিশেষ তদন্ত দল গড়ে তাদেরই দায়িত্ব দেয় হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। মঙ্গলবার সেই প্রাথমিক রিপোর্টই জমা পড়ে।

সিটের মতোই আবেদনকারীদের তরফে ওই দিন একটি পৃথক রিপোর্ট পেশ করা হয়। আবেদনকারীদের বক্তব্য, তাঁদের রিপোর্ট বিশেষ তদন্তকারী দলকে সাহায্য করবে। বাদী পক্ষের রিপোর্টে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন অর্থাৎ গত বছরের ২০ জুলাই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রতবাবু হুমকি দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে বিক্ষুব্ধদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিতে হবে। ওই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, সাগরবাবুর স্ত্রী সরস্বতী ঘোষকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে পঞ্চায়েতে দাঁড় করানোর ইচ্ছে ছিল জেলা সভাপতির। সেই ইচ্ছে পূরণ না-হওয়ায় ঝামেলা বাধে। কারণ, বিক্ষুব্ধ প্রার্থী হিসেবে ওই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষ। কিন্তু অনুব্রতবাবু তা চাননি। তাই সমস্যার সৃষ্টি হয়।

আবেদনকারীদের রিপোর্টটিও পড়ে দেখার জন্য সময় চেয়েছিলেন বিচারপতি। জোড়া রিপোর্ট পড়ার পরেই এ দিন তিনি জানান, সাক্ষীরা কেন মন খুলে সব তথ্য জানাতে পারেননি, সেটা যাচাই করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন