সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যায় নিষিদ্ধপল্লির কাছে পায়ে হেঁটে টহল দিচ্ছিলেন মেখলিগঞ্জের এসডিপিও আশিস সুব্বা। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মী ছিলেন। মদ্যপ দুই যুবককে নিষিদ্ধপল্লির ভিতরে বেপরোয়া ভাবে মোটরবাইক চালানোর অভিযোগে আটক করেন তিনি। তাদের নিয়ে চ্যাংরাবান্ধায় নিজের অফিসে যান। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে হাজির হন তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা। অভিযোগ, কেন ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করা হল, সে প্রশ্ন তুলে অফিস চত্বরের মধ্যে খোদ এসডিপিওকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। ক্ষুব্ধ এসডিপিও ঘটনাস্থলেই ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেন। পরে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় মেখলিগঞ্জ থানায়। শনিবার রাত ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। গ্রেফতারির খবর পেয়ে তৃণমূল সেই নেতাকে তড়িঘড়ি বহিষ্কার করে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত ওই তৃণমূল নেতার নাম গোবিন্দ রায়। তিনি আইএনটিটিইউসির মেখলিগঞ্জ ট্যাক্সি চালক ইউনিয়নের সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। বাকি দু’জন পিন্টু মহম্মদ এবং ভব রায়। তারা তৃণমূল কর্মী। ওই ঘটনায় বিপাকে পড়েছে আইএনটিটিইউসি নেতৃত্ব। রবিবার তড়িঘড়ি করে বৈঠক করে গোবিন্দবাবুকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা করেন আইএনটিটিইউসির জেলা নেতৃত্ব। গোবিন্দবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “মদ্যপ অবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগে ধৃত ৩ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” মেখলিগঞ্জের এসডিপিও বলেন, “দুই মদ্যপকে নিষিদ্ধপল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি করে এক ব্যক্তি আমার অফিস চত্বরে এসে মদ্যপ অবস্থায় হুমকি দিতে শুরু করে। এর পরে তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।”
রবিবার ধৃতদের মেখলিগঞ্জ আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন জনের জামিন মঞ্জুর করেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তিন জনের বিরুদ্ধেই মদ খেয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আইএনটিটিইউসির কোচবিহার জেলা সভাপতি প্রাণেশ ধর বলেন, “অসামাজিক কাজ করার অভিযোগ ওঠায় গোবিন্দবাবুকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২ জনের ক্ষেত্রে আইন আইনের পথে চলবে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।” মেখলিগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত রায় বলেন, “মদ্যপ অবস্থায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে গণ্ডগোলের অভিযোগ উঠেছে বলে শুনেছি। আমি দলীয় কাজে বাইরে রয়েছি। বিষয়টি আইএনটিটিইউসিসি নেতৃত্ব দেখছে।”
গোবিন্দবাবু অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, তাদের সংগঠনের দুই সদস্য একটি স্কুটি নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাঁদের আটক করে কাগজপত্র দেখতে চায়। সেই সময় গাড়ির কাগজ তাঁদের সঙ্গে ছিল না। তাঁদের আটক করে এসডিপিও অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতে পেরে আমি এসডিপিও-র কাছে যাই। ওই দুইজনকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। গরিব পরিবারের সদস্য আমরা। গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাই। সে জন্যই বিষয়টি বিবেচনা করার আর্জি জানাই। এসডিপিও তাঁদের ছাড়তে রাজি হয়নি। এর পরে আমি বাইরে চলে আসি।” তিনি দাবি করেন, প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এসডিপিও বাইরে আসেন। ধৃত ২ জনকে মেখলিগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
গোবিন্দবাবু দাবি করেন, ‘‘আমি সেখানে যাব কি না জিজ্ঞেস করতেই আমাকে মারধর করা শুরু করা হয়। লাঠি দিয়ে মেরে আমাকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।’’
গোবিন্দবাবু আরও বলেন, “আমি যদি হুমকি দিতাম তা হলে আমাকে শুধু ২৯০ ধারায় মামলা দেওয়া হত না। এ থেকেই সব পরিষ্কার।”
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “তিন জনই তো মদ্যপ অবস্থায় গণ্ডগোল করেছিল। তাই ওই ধারাতেই মামলা করা হয়েছে।”