হতবাক আত্মীয়রা। মোহন শীলের ছেলে তপন শীল (বাঁ দিকে) ও মৃতা মালতি সরকারের স্বামী গৌরপদ সরকার। — নিজস্ব চিত্র।
কেউ মারা গিয়েছেন পাঁচ বছর আগে, কেউ গত বছর। কিন্তু ইহজগতে না থাকা সেই মানুষগুলোর অনেকেই নাকি গত শনিবার এসেছিলেন ভোট দিতে! বিধাননগরের এফডি ব্লকের একটি বুথে। অন্তত বিরোধী দল এবং প্রয়াতদের অনেকের পরিবারের দাবি তেমনই! তা সত্ত্বেও ওই বুথে কেন পুনর্নির্বাচন হবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছে ওই মৃতদের পরিবার।
নামী হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার মালিক গৌরপদ সরকার থাকেন সল্টলেকের এফডি ব্লকের ২৮৫ নম্বর বাড়িতে। স্ত্রী মালতী গত হয়েছেন পাঁচ বছর আগে। ৩ অক্টোবর বিধাননগরে পুরসভা নির্বাচনের দিন সকালেই ব্যবসার কাজে দিল্লি গিয়েছিলেন গৌরপদবাবু। ফিরেছেন ভোটের পরের দিন। এবং জানতে পেয়েছেন, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ (এটিআই)-এর দু’ নম্বর ঘরে তাঁর ভোটটি অন্য কেউ দায়িত্ব নিয়ে তো দিয়েইছে, বাদ দেয়নি মালতীদেবীর ভোটও! ৩ তারিখ এটিআইয়ের ৩৪৩ নম্বর বুথের দু’ নম্বর ঘরে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট ছিলেন গৌতম ঘোষ, স্নেহাংশু সিংহরায় এবং জ্যোতির্ময় রুদ্র। তাঁদের রিপোর্টেও একই কথা জানানো হয়েছে!
শুক্রবার সল্টলেকের ন’টি বুথে পুনর্নির্বাচনের সময় নিজের হতাশা, ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি গৌরপদবাবু। বললেন, ‘‘যে বুথে মৃত লোকের ভোট পরে যায়, যে বুথে আমি অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও আমার ভোট হয়, সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে প্রশাসন দাবি করছে! কোথায় যে বাস করছি আমরা!’’
মালতীদেবী একা নন, এটিআইয়ের ৩৪৩ নম্বর বুথের ২ নম্বর ঘরে ভোট পড়েছে প্রয়াত মনোরঞ্জন মণ্ডল এবং মোহন শীলেরও! এফডি ব্লকের ২৮৯ নম্বর বাড়িতে থাকেন বছর আটষট্টির তপন শীল ও তাঁর স্ত্রী পূরবী শীল। তপনবাবুর বাবা মোহন শীল গত বছর ৯২ বছর বয়সে মারা যান। অথচ এটিআইয়ের দু’ নম্বর ঘরে ৩ তারিখ দিব্যি ভোট পড়েছে তাঁর নামে! এ নিয়ে পোলিং এজেন্টদের রিপোর্টও জমা পড়েছে।
তপনবাবুদের দু’টো বাড়ি পরে এফডি ২৯১ নম্বর বাড়িতে থাকে মণ্ডল পরিবার। বাড়ির কর্তা মনোরঞ্জন মণ্ডল গত বছর মারা গিয়েছেন। অথচ ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৪৩ নম্বর বুথের ২ নম্বর ঘরে তাঁর নামেও ভোট পড়েছে! তাঁর মেয়ে মধুমিতার আক্ষেপ, ‘‘শুধু বাবা-র নামে ভোট পড়াই নয়,
আমাদের পাড়ার অনেকেই ওই দিন মারামারির চোটে মাঝরাস্তা থেকে ফিরে এসেছেন। তাঁরা কেন পুনর্নির্বাচন-এর অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন?’
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, মৃতের নামে ভোট পড়ে যাওয়ার সংখ্যা খুব বেশি না-হলে শুধু তার ভিত্তিতে কোনও বুথে পুনর্নির্বাচন-এর নির্দেশ দেওয়া যায় না। তার ফলেই ফের ভোটের সুযোগ পায়নি এটিআইয়ের বুথ নম্বর ৩৪৩।