মোদীকে হ্যাঁ, রাহুলকে না, ক্ষুব্ধ কংগ্রেস

ফের পার্ক সার্কাস ময়দানে রাহুল গাঁধীর নির্বাচনী জনসভা করার অনুমতি দিল না কলকাতা পুর প্রশাসন। আগামী ৮ মে ওই পার্কে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুলের সভা করার কথা জানিয়ে পুরসভার কাছে সোমবার চিঠি পাঠিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার কংগ্রেস প্রার্থী সোমেন মিত্র। সেই আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে বলে পুর সূত্রের খবর। অথচ তার আগের দিন, ৭ তারিখ বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর সভার জন্য পুরসভার পার্ক ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০৩:১২
Share:

ফের পার্ক সার্কাস ময়দানে রাহুল গাঁধীর নির্বাচনী জনসভা করার অনুমতি দিল না কলকাতা পুর প্রশাসন। আগামী ৮ মে ওই পার্কে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুলের সভা করার কথা জানিয়ে পুরসভার কাছে সোমবার চিঠি পাঠিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার কংগ্রেস প্রার্থী সোমেন মিত্র। সেই আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে বলে পুর সূত্রের খবর। অথচ তার আগের দিন, ৭ তারিখ বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর সভার জন্য পুরসভার পার্ক ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। স্বভাবতই এ বার বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে দ্বিচারিতা এবং বৈষম্যের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে কংগ্রেস।

Advertisement

মোদীকে এখন নিয়ম করে কড়া আক্রমণ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদীও রাজ্যে এসে নিশানা করছেন তৃণমূল নেত্রীকে। এই সময়ে পুরসভার মাঠে মোদী সভার অনুমতি পাচ্ছেন অথচ রাহুল পাচ্ছেন না, এমন ঘটনায় রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছে কংগ্রেস। ২৫ মার্চ পার্ক সার্কাস ময়দানেই রাহুলের কর্মিসভার জন্য আর্জি জানানো হয়েছিল পুরসভায়। সে বার পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে তা দেওয়া যাবে না বলে মৌখিক ভাবে জানিয়েছিল পুর প্রশাসন। এ বারের ঘটনায় এ দিনই দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত-সহ কমিশনের ফুল বেঞ্চ এবং পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসির কাছে অভিযোগ জানান প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, “পুর কমিশনারকে শো-কজ করার দাবি জানিয়েছি কমিশনের কাছে। এটা তৃণমূলের রাজনৈতিক অভিসন্ধি, তা-ও জানিয়েছি কমিশনকে।” প্রদীপবাবুর অভিযোগ, “তৃণমূল রাহুলকে নিয়ে ভীত। মোদীর সঙ্গে ওদের গোপন সখ্য রয়েছে! তাই এমন দ্বিচারিতা করছে তৃণমূল। এই দ্বিমুখী চরিত্রটাই তৃণমূলের আসল চেহারা!”

পুরসভার এক মেয়র পারিষদ জানিয়েছেন, গত মার্চে পরীক্ষার কারণে কংগ্রেসকে পার্ক সার্কাস ময়দান ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যায়নি। তখনই কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল তারা। তার পরেই কমিশন পুরসভাকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, নির্বাচনের জন্য ওই পার্ক কোনও দলকেই ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। তার ভিত্তিতেই এ বার পার্ক সার্কাস ময়দানের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে কংগ্রেসকে জানানো হয়েছে। কলকাতায় কমিশনের তরফে অবশ্য এই বিষয়ে মন্তব্য করা হয়নি। কমিশন সূত্রের বক্তব্য, গোটা অভিযোগই দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর দ্বিচারিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে কিছু জানা নেই।”

Advertisement

পার্ক সার্কাস ময়দানের অনুমতি না পেয়ে আগের বারের মতোই সেনাবাহিনীর অধীনস্থ শহিদ মিনার ময়দানে রাহুলের সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস। সেনাবাহিনীর অনুমতিও মিলেছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। ওই দিন বেলা ১টা নাগাদ ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ডেবরায় হরিমতি স্কুলের কাছে রাহুল প্রথম সভা করবেন বলে জানিয়েছেন ওই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে কলকাতায় এসে শহিদ মিনারে বিকেল তিনটে নাগাদ তাঁর সভা করার কথা। কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের দুই প্রার্থী মালা রায় এবং সোমেনবাবুর সমর্থনে তাঁর ওই সভা।

সোমেনবাবুর চিঠি নিয়ে এ দিন পুর কমিশনারের কাছে গিয়েছিলেন প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ঘোষ। তিনি জানান, ওই চিঠি দেখেই পুর কমিশনার তাঁকে জানিয়ে দেন, ওই পার্ক দেওয়া যাবে না। কেন দেওয়া যাবে না, পুর কমিশনারকে তা লিখিত ভাবে জানানোর দাবি করেন প্রদীপবাবু। যদিও তা দিতে পুর কমিশনার সম্মত হননি বলে প্রদীপবাবু জানান। তাঁর অভিযোগ, মোদীর সভার জন্য বিজেপি-র আবেদনের ভিত্তিতে পুর প্রশাসন দু’টো পার্কের অনুমোদন দিয়েছে। অথচ কংগ্রেসের ক্ষেত্রে আবেদন বাতিল করা হল! প্রসঙ্গত, ৭ তারিখ কাঁকুড়গাছির একটি পার্কে মোদীর সভার জন্য অনুমতি পেয়েছে বিজেপি। রাহুলকে পরপর দু’বার পার্ক সার্কাসে সভার ছাড়পত্র না দিলেও বিজেপি-কে অনুমতি দেওয়া নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সম্পতকে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী সোমেনবাবুও। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূলের বৈষম্যের নীতির এটা একটা প্রকট উদাহরণ। তৃণমূল সরকার এবং প্রশাসন আমাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে! এটা মেনে নেওয়া যায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন