মোদী-তত্ত্ব নিয়ে আক্রমণে বিজেপি, বাড়ল তরজা

অনুপ্রবেশ-বিতর্কে আরও চড়ল তৃণমূল এবং বিজেপি-র তরজা। শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারী নিয়ে তাঁর বক্তব্যের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্মীয় বিভাজন ঘটিয়ে নির্বাচনী ফায়দা তুলতে চেয়ে মোদী বিধিভঙ্গ করেছেন, এই মর্মে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে সোমবারই চিঠি পাঠিয়েছে তৃণমূল। পক্ষান্তরে, বিজেপি অনুপ্রবেশকারী-প্রশ্নেই তৃণমূল নেত্রীর পুরনো অবস্থানের প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: নির্মল বসু

অনুপ্রবেশ-বিতর্কে আরও চড়ল তৃণমূল এবং বিজেপি-র তরজা। শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারী নিয়ে তাঁর বক্তব্যের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্মীয় বিভাজন ঘটিয়ে নির্বাচনী ফায়দা তুলতে চেয়ে মোদী বিধিভঙ্গ করেছেন, এই মর্মে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে সোমবারই চিঠি পাঠিয়েছে তৃণমূল। পক্ষান্তরে, বিজেপি অনুপ্রবেশকারী-প্রশ্নেই তৃণমূল নেত্রীর পুরনো অবস্থানের প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে।

Advertisement

নিজে সাংসদ থাকাকালীন ২০০৫ সালে অনুপ্রবেশকারী প্রশ্নেই লোকসভায় স্পিকারের আসনের দিকে গুচ্ছ নথিপত্র ছুড়েছিলেন মমতা। সেই তিনিই এখন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কী ভাবে মোদীকে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন, প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন বলেন, “সাংসদ থাকাকালীন দেশে অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের দাবিতে স্পিকারের আসনের দিকে গোছা গোছা কাগজ ছুড়েছিলেন মমতা! এক দিন তিনি যে দাবিতে সংসদে কাগজ ছুড়েছিলেন, আজ মোদী তো সেই কথাই বলছেন। তা হলে এত রাগ হচ্ছে কেন?”

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গে এ দিনও মোদীকে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, হাবরা ও বেড়াচাঁপায় এ দিন তিনটি সভাতেই মোদীকে তুলোধোনা করেছেন তিনি। বনগাঁয় বলেছেন, “যারা জাতিদাঙ্গার কথা বলছে, তাদের কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া উচিত!” হাবরায় মোদীর নাম না-করেই ফের ‘হরিদাস পাল’ সম্বোধন ব্যবহার করেছেন। মোদী বলেছিলেন, অনুপ্রবেশকারীদের ফিরে যেতে হবেই। সেই সূত্রেই মমতা এ দিন মহিলাদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন, “যদি তাড়াতে আসে, হাতের কাছে হাতা-খুন্তি যা পাবেন, তা-ই নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন।” মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “ভোটের পরে কী ভাবে তাড়িয়ে দেয় দেখবো! এত বড় সাহস? তাড়িয়ে দেবে! ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও যারা এসেছে, তারাও ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী এ দেশের নাগরিক। যখন ওদের (বিজেপি) কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য থাকে না, তখন হিংসার আগুন জ্বালানোর কথা বলে!”

Advertisement

বিজেপি-র রাহুলবাবু অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, একই প্রসঙ্গে দু’জনে সরব হয়েছেন আলাদা আলাদা সময়ে। তা হলে মোদীর গ্রেফতারির দাবি উঠলে তৃণমূল নেত্রীকেও কেন গ্রেফতার করা হবে না? রাহুলবাবুর কথায়, “যে অপরাধে মোদীকে জেলে যেতে বলছেন, একই অপরাধে আপনাকেও কেন জেলে পাঠানো হবে না?” মোদীকে জেলে ভরার দাবি তোলার আগে সংসদে নিজের কৃতকর্মের জন্য মমতার ‘ক্ষমা’ চাওয়ার দাবিও তোলেন রাহুলবাবু। বিজেপি-র এই বক্তব্যের জবাব এড়িয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন কটাক্ষ করেছেন, “এ সব ছেঁদো কথা নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলছেন!”

মোদীকে আক্রমণ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষা ব্যবহার করছেন, তারও সমালোচনা করেছেন রাহুলবাবু। তাঁর বক্তব্য, “অতিথি বাৎসল্যের জন্য এ রাজ্যের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কিন্তু মমতা যে ভাষায় মোদীকে আক্রমণ করছেন, তা রাজ্যের মনোভাবকে ক্ষুণ্ণ করছে। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা সংযত হওয়া দরকার।” একই সঙ্গে রাহুলবাবুর হুঁশিয়ারি, “মোদী শিলাদিত্য চৌধুরী বা অম্বিকেশ মহাপাত্র নন যে, আপনার পছন্দের কথা না বললেই জেলখানা দেখাবেন!”

বস্তুত, অনুপ্রবেশ-প্রশ্নে বিজেপি বিরোধিতায় একই সুর নিয়েছে তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস। খড়গপুর, তেহট্ট এবং চাপড়ায় এ দিন তিনটি সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যেমন মোদীর ওই বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তেহট্টে অধীর বলেন, “আমার বাবা-ঠাকুরদাদারাও স্বাধীনতার পরে এ দেশে এসেছেন। তা হলে আমাকেও বাংলাদেশ যেতে হবে। কিন্তু তার আগে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীকে পাকিস্তানে পাঠাতে হবে! আডবাণীও স্বাধীনতার পর পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন!”

মোদীর শরণার্থী-তত্ত্বের বিরোধিতা করলেও তৃণমূল-বিজেপি’র ‘গড়াপেটা’ নিয়ে আবার এক সুর বজায় রেখেছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। যাদবপুরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, ব্যারাকপুরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বা কলকাতায় সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি সকলেই বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূলের পুরনো গাঁটছড়ার ইতিহাস তুলে ধরেছেন।

পাশাপাশি, রাজ্যে ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে মমতা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, মোদী রবিবার ফের এই অভিযোগ করেছিলেন। এর জবাবে অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমার জন্য ফের বিগত বাম সরকারকেই দায়ী করেছে তৃণমূল। বাম নেতা-কর্মীরা সেই সব সংস্থায় জমা দেওয়া লগ্নিকারীদের টাকা ভোগ করতেন বলেও অভিযোগ করেছেন পার্থবাবু। আর শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ প্রসঙ্গে মানিকবাবু মন্তব্য করেছেন, “মানুষ তৃণমূলের উপরে বিশ্বাস হারিয়েছেন। তৃণমূলও মানুষের উপরে বিশ্বাস হারিয়েছে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন