মেধাবী সুমন্তিকার মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না পাহাড়ি পাড়া

সাধারণ পরিবারের একটি মেয়ে একটার পর একটা বাধা সসম্মানে ডিঙিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর কাছে প্রত্যাশাও বেড়ে যাচ্ছিল সকলের। সুমন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (২৩) এমন আচমকা মৃত্যু তাই কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না জলপাইগুড়ির পাহাড়ি পাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ও তাঁদের পরিজনেরা। সুমন্তিকার বাবা পেশায় বিমা কর্মী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ও যে ভাবে এগোচ্ছিল, তাতে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল ওকে নিয়ে। কিন্তু আচমকা যে কী করে এমন কাণ্ড হল, কিছুতেই বুঝতে পারছি না।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

সুমন্তিকার বাবা দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সন্দীপ পাল

সাধারণ পরিবারের একটি মেয়ে একটার পর একটা বাধা সসম্মানে ডিঙিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর কাছে প্রত্যাশাও বেড়ে যাচ্ছিল সকলের। সুমন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (২৩) এমন আচমকা মৃত্যু তাই কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না জলপাইগুড়ির পাহাড়ি পাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ও তাঁদের পরিজনেরা।

Advertisement

সুমন্তিকার বাবা পেশায় বিমা কর্মী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ও যে ভাবে এগোচ্ছিল, তাতে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল ওকে নিয়ে। কিন্তু আচমকা যে কী করে এমন কাণ্ড হল, কিছুতেই বুঝতে পারছি না।”

রবিবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুমন্তিকার দেহ উদ্ধার করা হয়েছে কলকাতার আরপুলি লেনে একটি বাড়ির দরজা ভেঙে। ওই বাড়িতে আরও তিন বন্ধুর সঙ্গে পেয়িং গেস্ট থাকতেন সুমন্তিকা। তবে শনিবার রাতে ওই ঘরে ছিলেন কেবল সুমন্তিকা এবং তাঁর বান্ধবী সুবর্ণা লামা। সুবর্ণা কার্শিয়াঙের বাসিন্দা। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে তিনি এখন চাকরির খোঁজ করছিলেন। সুবর্ণাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি এখন কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

সুবর্ণার বাবা সঞ্জয় লামা ক্যাসলটন চা বাগানের সুপারভাইজার পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। সুবর্ণার মা দুর্গিদেবী ওই বাগানেরই কর্মী। সঞ্জয়বাবুও বুঝতে পারছেন না, তাঁর মেয়ে হঠাৎ কী করে এতটা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। তাঁর দাবি, “সুবর্ণা সাধারণ মেয়ে ছিল না। এই ঘটনার ভাল করে তদন্ত হওয়া দরকার।”

ছুটির দিন খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই জলপাইগুড়ির অন্যতম পুরনো এলাকা পাহাড়ি পাড়ায় সুমন্তিকাদের বাড়ি ঘিরে ভিড় ভেঙে পড়ে। সুমন্তিকার ডাক নাম ছিল রিয়া। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত জলপাইগুড়ির হোলি চাইল্ড স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলের অধ্যক্ষ সিস্টার ক্রিস্টিনও চলে আসেন সুমন্তিকার বাড়িতে। ২০১০-এ ওই স্কুল থেকে ৯২% নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সুমন্তিকা পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হন। মাধ্যমিকেও ৯০% নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। প্রিয় ছাত্রীর পরিবারের সামনে দাঁড়িয়ে সিস্টার ক্রিস্টিন বলেন, “খুব ভাল এবং মেধাবী মেয়ে ছিল। সব দিক থেকে ব্যতিক্রমী। আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। সেটা সবে পূরণ করার পথে পা বাড়িয়েছিল। হল না।”

একই অনুভূতি রিয়ার পরিবার-প্রতিবেশীদেরও। নাচ-গানে দক্ষ ছিলেন তিনি। ইংরেজি রহস্য উপন্যাস পড়তে ভালবাসতেন। দেবাশিসবাবু বলেন, “বলত গবেষণা করবে। ছুটিতে বাড়িতে এলে গল্প-আড্ডায় বেশি সময় না দিয়ে ল্যাপটপ খুলে পড়াশোনা করত।” মেয়ের সঙ্গে দেবাশিসবাবু এবং তাঁর স্ত্রী শিপ্রাদেবীর শেষ কথা হয় শনিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ। তখন রিয়া রাতের খাবার খাচ্ছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। সকাল সাড়ে নটা নাগাদ সুমন্তিকার মৃত্যুর খবর পেয়ে বিমানে কলকাতায় চলে যান দেবাশিসবাবুর ভাই ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

২৪ ডিসেম্বর বাড়িতে এসেছিলেন সুমন্তিকা। কয়েকটা দিন লেখাপড়া নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। দুই ভাইবোন তাঁরা। ভাই রাজ এ বার আইসিএসই দেবে। রিয়া পছন্দ করতেন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে।

একই অবস্থা কার্শিয়াঙের স্প্রিং বস্তিতে সুবর্ণার বাড়িতেও। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কল্যাণীতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান সুবর্ণা। পাশ করে চাকরি খুঁজছিলেন। সেপ্টেম্বরে বাড়িতে এসে ১৮ অক্টোবর কলকাতা ফিরে যান। তার পর ফোনে যোগাযোগ ছিল বাড়ির সঙ্গে। দুর্গিদেবী জানান, শনিবার বিকেলেও সুবর্ণার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সুবর্ণা ছোট থেকেই শান্ত স্বভাবের বলে পড়শিরা জানিয়েছেন। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, কোনও অসুখের কথা সুবর্ণা কখনও জানাননি। আজ, সোমবার সুর্বণার বাবা-মা কলকাতায় রওনা দিচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন