মাধ্যমিকের ফল আটচল্লিশ ঘণ্টায়

দুর্ঘটনায় পড়ে মাধ্যমিক দিতে পারার ঘটনা তো প্রতি বছরই ঘটে। তা বলে পরে ফের পরীক্ষা নেওয়া হবে, এমনটা কখনও ঘটেনি। যেমন ঘটেনি পরীক্ষার দু’দিনের মধ্যে ফল বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাও। মাধ্যমিক হয়ে গেল মানে রেজাল্ট বেরোতে অন্তত আড়াই মাস। দুরুদুরু বুকে ছুটি কাটাও! এ বার কয়েক জনের ক্ষেত্রে সেই নিয়মও ভাঙছে।

Advertisement

সুব্রত গুহ

কাঁথি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০২:৪৮
Share:

রেখা জানা। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনায় পড়ে মাধ্যমিক দিতে পারার ঘটনা তো প্রতি বছরই ঘটে। তা বলে পরে ফের পরীক্ষা নেওয়া হবে, এমনটা কখনও ঘটেনি।

Advertisement

যেমন ঘটেনি পরীক্ষার দু’দিনের মধ্যে ফল বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাও। মাধ্যমিক হয়ে গেল মানে রেজাল্ট বেরোতে অন্তত আড়াই মাস। দুরুদুরু বুকে ছুটি কাটাও! এ বার কয়েক জনের ক্ষেত্রে সেই নিয়মও ভাঙছে।

মাধ্যমিক দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ঘটায় যারা এক বা একাধিক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারেনি পরে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানান, আগামী ৩০ মে থেকে ৫ জুন বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষায় বসবে দুর্ঘটনায় আহত রাজ্যের ১৯ জন ছাত্রছাত্রী। ফল বেরোবে ৭ জুন।

Advertisement

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ে দুর্ঘটনায় পড়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগর থানার জুখিয়া কুঙরনারায়ণ বিদ্যাপীঠের রেখা জানা। আরও ন’জন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া করে সে যাচ্ছিল ১৪ কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণনগর মণীন্দ্রনাথ হাইস্কুলে। মাঝে খেজুরির জরানগরে দুর্ঘটনায় ১০ পরীক্ষার্থীই গুরুতর আহত হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চালকের। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জখম নয় পরীক্ষার্থীর বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু মাথার পিছনের হাড় ও মেরুদণ্ডে চিড় ধরায় রেখা পরীক্ষায় বসতে পারেনি। সে দিনই দুপুরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এ রকম দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে জখম পড়ুয়ারা সুস্থ হলে আলাদা করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।

এর পরে ৩ মার্চ অঙ্ক পরীক্ষা দিয়ে ট্রাক্টরে ফেরার সময়ে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয় ডুয়ার্সের লুকসান চা বাগানের বাসিন্দা, লালবাহাদুর শাস্ত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮ জন পড়ুয়া। জীবনবিজ্ঞান ও ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষা তারা আর দিতে পারেনি। দুর্ঘটনার আট দিন পরে কাঁথি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছিল রেখা। আরও দিন পনেরো বিশ্রাম নিয়ে সে সুস্থ হয়। কবে পরীক্ষা নেওয়া হবে জানতে সে বারবার গিয়েছে স্কুলে। সদুত্তর মেলেনি। মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের আগে উদ্বিগ্ন রেখার খবর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশের পরই নড়েচড়ে বসে পর্ষদ। সেই সময়ে পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছিল, সব জখম পরীক্ষার্থীরা সুস্থ হয়ে উঠলে তবেই এক সঙ্গে সকলের পরীক্ষা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে চা বাগানের পরীক্ষার্থীরাও সুস্থ হয়ে যাওয়া দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, যার যে বিষয়ের পরীক্ষা বাকি, নিজের স্কুলেই সেই পরীক্ষা দেবে ছাত্রছাত্রীরা। দায়িত্বে থাকবেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বিশেষ পরীক্ষক। বুধবার রেখার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমলেশ গিরি বলেন, “৩০ মে রেখার আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যেই আমাদের জানানো হয়েছে।” তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত মধ্যশিক্ষা পর্ষদের উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক কার্যালয়ে বিশেষ পরীক্ষার নির্দেশ পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন পর্ষদের আঞ্চলিক অধিকর্তা প্রদীপ বিশ্বাস। লুকসান লালবাহাদুর শাস্ত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনার্দন থাপা বলেন, “আমরা দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের বাড়িতে প্রস্তুতি নিয়ে যেতে বলেছি।”

এ বছর মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা হয়েছে গত ২২ মে। সব স্কুলেই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আহত পরীক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে সমস্যা হবে না? কল্যাণময়বাবুর বক্তব্য, “ওই সময়ে সব স্কুলেই ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে। ৭ জুন ফল প্রকাশ হলে সফলদের ভর্তি হতে কোনও অসুবিধা হবে না।” সে সব পরের কথা। আপাতত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েই পড়ুয়ারা খুশি।

ডুয়ার্সের দুর্ঘটনায় পরীক্ষায় বসতে না পারা ১৮ জনের মধ্যে ১৭ জনই ছাত্রী। তাদেরই এক জন রেশমি খাতুনের কথায়, “এক বছর নষ্ট হবে ভেবে মনখারাপ করছিলাম। খুব ভাল লাগছে।” রেশমির দাদা মহম্মদ জাভেদ বলেন, “ফের পরীক্ষা হলে ও পাশ করবেই।” হাসি মুখে রেখাও বলে, “আমি তো পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতই ছিলাম। দিন ঠিক হয়ে গিয়েছে জেনে স্বস্তি পেলাম।”

(সহ-প্রতিবেদন: সব্যসাচী ঘোষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন