ম্যানেজার, ডাক্তারের আতঙ্ক এখনও কাটছে না

কয়েক ঘণ্টা আগেও সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই চলছিল। চা বাগানের ভিতরে অনেকটা ছবির মতো প্রশস্ত বাংলো। ডাকলেই হাজির হন পাচক, পরিচারক। শনিবার বিকেলের আধ ঘণ্টার তাণ্ডবের পরে সেই দৃশ্য আমূল বদলে গিয়েছে। সোনালি চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালাকে (৪৬) শনিবার সন্ধ্যায় যে ভাবে খুন করা হয়েছে, তা ভুলতে পারছেন না বাগানের ম্যানেজার অঞ্জনকুমার মেদী এবং চিকিৎসক উত্তম রাজবংশী। বকেয়া নিয়ে বচসার পরে শ্রমিকদের একটি দল তাঁদের হাত ধরে রাখেন।

Advertisement

সব্যসাচী ঘোষ

মালবাজার শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৩
Share:

কয়েক ঘণ্টা আগেও সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই চলছিল। চা বাগানের ভিতরে অনেকটা ছবির মতো প্রশস্ত বাংলো। ডাকলেই হাজির হন পাচক, পরিচারক। শনিবার বিকেলের আধ ঘণ্টার তাণ্ডবের পরে সেই দৃশ্য আমূল বদলে গিয়েছে।

Advertisement

সোনালি চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালাকে (৪৬) শনিবার সন্ধ্যায় যে ভাবে খুন করা হয়েছে, তা ভুলতে পারছেন না বাগানের ম্যানেজার অঞ্জনকুমার মেদী এবং চিকিৎসক উত্তম রাজবংশী। বকেয়া নিয়ে বচসার পরে শ্রমিকদের একটি দল তাঁদের হাত ধরে রাখেন। আর কিছু শ্রমিক চা বাগানের ঝোপে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে খুন করে রাজেশবাবুকে। এরপরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ পুলিশ গিয়ে অঞ্জনবাবু ও উত্তমবাবুকে উদ্ধার করে মালবাজারে নিয়ে যায়। তখন নিজেদের জিনিসপত্র কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। টুথব্রাশ, জামাকাপড় থেকে মোবাইল চার্জার, এটিএম কার্ড সব পড়ে রয়েছে চা বাগানের সেই প্রশস্ত আবাসনে। এখন মালবাজারের বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি হোটেলের ছোট ঘরে মাথা গুঁজে কোনও মতে দিন কাটছে তাঁদের। আপাতত কত দিন হোটেলে থাকতে হবে, তা নিয়েই চিন্তায় দু’জন।

সেই সঙ্গে রয়েছে নাছোড় আতঙ্ক। রাত কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো। দু’জনেই দাবি করেছেন, রাতভর তাঁদের কানে বেজেছে উন্মত্ত শ্রমিকদের হুঙ্কার। অঞ্জনবাবু বলেন, “রাতভর যেন শ্রমিকদের হুঙ্কার আর বড়সাহেবের আর্তনাদ কানে বেজেছে। যত বারই ঝিমুনি এসেছে, আতঙ্কের একটা ধাক্কা জাগিয়ে দিয়েছে।” অঞ্জনবাবুর বাঁ হাতে আর কাঁধেও শ্রমিকদের টানা হ্যাঁচড়ায় চোট লেগেছে। ব্যথার ওষুধও খেয়েছেন। রবিবার সকালে তিনি জানান, টাকা ফুরিয়ে আসছে। সঙ্গে জামাকাপড়ও নেই। এক পোশাকে কত ক্ষণ মালবাজারে থাকতে হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরা। উত্তমবাবুর কথায়, “দু’বছর ধরে এই চা বাগানে রয়েছি। কিন্তু এরকম অভিশপ্ত দিন যে আসবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি।”

Advertisement

মাস ছ’য়েক আগেই সোনালি চা বাগানের দায়িত্ব নিয়েছেন অঞ্জনবাবু। তার আগে ডুয়ার্সের রেডব্যাঙ্ক গোষ্ঠীর ধরণীপুর চা বাগানের ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অসমের ডিব্রুগড়ের বাসিন্দা অঞ্জনবাবুর বাবা হংসনাথ মেদী শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। শিলিগুড়িতে ভাড়াবাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী আর ১০ বছরের ছেলেও। তাঁরা সকলেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

উত্তমবাবুর বাড়ি ফালাকাটা ব্লকের পশ্চিম শালকুমারে। তিনি বাড়িতে কাউকে কিছু না জানালেও, সংবাদপত্র পড়ে বাড়ির সকলেই ঘটনার খবর জেনে গিয়েছে। বাগানের আবাসনে তাঁর টাকা, আসবাবপত্র-সহ চিকিৎসার যাবতীয় সরঞ্জামও পড়ে রয়েছে। উত্তমবাবু বলেন, “সেগুলি কীভাবে ফেরত পাব, জানি না।”

অঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, গত ৬ দিন ধরে বাগানেই থাকছিলেন রাজেশবাবু। তাঁরও ল্যাপটপ-সহ অনেক কিছু বাগানের ঘরে রয়ে গিয়েছে। অঞ্জনবাবুর কথায়, “সব ছেড়ে ছুড়ে এ ভাবে বাগান থেকে চলে আসতে হবে, তা ভাবতে পারছি না। তেমনই দুঃস্বপ্নের মতো এক সন্ধ্যায় যা অভিজ্ঞতা হল, তা-ও যতদিন বাঁচব কোনও দিনই ভুলতে পারব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন