মারোয়াড়ি মন জয়ে এ বার অমিতের আড্ডা

শুরুটা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। লোকসভা ভোটের বাজারে এ বার এগিয়ে দিলেন অর্থমন্ত্রীকে। রাজ্যের মারোয়াড়ি সমাজের মন পেতে সপ্তাহখানেক আগে এক বৈঠকি সভায় কিছু অ-বাংলাভাষী ব্যবসায়ীর সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০২:৫৯
Share:

শুরুটা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। লোকসভা ভোটের বাজারে এ বার এগিয়ে দিলেন অর্থমন্ত্রীকে।

Advertisement

রাজ্যের মারোয়াড়ি সমাজের মন পেতে সপ্তাহখানেক আগে এক বৈঠকি সভায় কিছু অ-বাংলাভাষী ব্যবসায়ীর সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝেরহাটের সেই ঘরোয়া সভায় নানা কথার মধ্যে তিনি মারোয়াড়ি-সমাজের মনের হদিস পাওয়ার চেষ্টা করেন। তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশে এ বার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ময়দানে নামছেন তাঁদের মন জয়ে। রাজ্যের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা মারোয়াড়ি সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে বসবেন তিনি। প্রথম বৈঠক ২৮ মার্চ, শিলিগুড়িতে।

তৃণমূলের এক নেতা জানান, এ বারে লোকসভা নির্বাচনের যা গতিপ্রকৃতি তাতে মারোয়াড়ি সমাজের সিংহ ভাগ ভোট নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে যেতে পারে। এ ছাড়া ঐতিহ্যগত ভাবেও রাজ্যের অ-বাংলাভাষী ভোটের বেশিটাই পায় কংগ্রেস ও বিজেপি। এত দিন এ দিকে বিশেষ নজর দেননি মমতা। কিন্তু এ বার চারমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রতিটি ভোটই মূল্যবান। তাই মারোয়াড়ি সমাজকে নিয়েও আলাদা পরিকল্পনা করা হয়েছে।

Advertisement

গত বেশ ক’টি ভোটেই দেখা গিয়েছে, রাজ্যের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বিজেপির কিছু ভোট রয়েছে। যেমন, কলকাতার দু’টি কেন্দ্র, বারাসত, মালদহ, আসানসোল, দুর্গাপুর, খড়্গপুর, আলিপুরদুয়ার ইত্যাদি। তৃণমূল মনে করছে, এ বারে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করতে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ প্রকাশ্যে বিজেপিকে সমর্থন জানাচ্ছেন। ঘটনাচক্রে, এগুলির প্রায় সবই মারোয়াড়িদের সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাই বাছাই করা আট-দশটি কেন্দ্রের মারোয়াড়ি সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিলিত হবেন অমিতবাবু। সভা হবে বৈঠকি মেজাজে।

ভোজ বা নৈশভোজের আসর বসিয়ে আজকাল দলের ভোট তহবিলে টাকা তুলছে বিজেপি ও আম আদমি পার্টি। সম্প্রতি দলের ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে এর কড়া সমালোচনা করেছেন মমতা। অমিতবাবুর ওই বৈঠকগুলি নিয়ে যাতে কোনও রকম বিতর্ক না তৈরি হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে চান মমতা। তারই কৌশল হিসেবে ভোটের প্রচার থেকে এই বৈঠকগুলিকে যতটা সম্ভব আলাদা রাখার চেষ্টা হবে। বৈঠক হবে অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে। কোনও শহরে বৈঠকের জায়গা ঠিক করার দায়িত্ব থাকবে কোনও সংস্থা বা তৃণমূলের কোনও প্রাক্তন বিধায়কের উপরে। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী যেমন তাঁদের মান-অভিমান, চাহিদা, পাওয়া না-পাওয়ার কথা শুনবেন, তেমনই তাঁদের বোঝাবেন, পরবর্তী সরকার গঠনে তৃণমূলই নির্ণায়ক শক্তি হতে চলেছে। তৃণমূল ছাড়া অন্য দলকে ভোট দেওয়া যে কার্যত অর্থহীন, সে কথা জানাবেন অমিতবাবু।

তৃণমূলের আশা, মারোয়াড়িরা মূলত ব্যবসায়ী। তাই যে সরকার ব্যবসার কাজে সহায়তা করবে, সাধারণ ভাবে তাদেরই ভোট দেবেন তাঁরা। তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কথায়, অমিতবাবু শিল্প ও অর্থ দুই দফতরেরই দায়িত্বে রয়েছেন। তাই তাঁকে পাঠিয়েই এই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছে বার্তা দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। ঘরোয়া বৈঠক হলে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অমিতবাবুর কাছে সমস্যার কথা খোলাখুলি জানিয়ে প্রতিকার চাইতে পারবেন। অমিতবাবুও নির্দিষ্ট ভাবে আশ্বাস দিতে পারবেন। রাজ্যের খোদ শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী তাঁদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে এলে মোদী-মুখী ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে টেনে আনা যাবে।

এ কাজের জন্য অমিতবাবুকে বেছে নেওয়ার আরও একটি কারণ হল, মন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি বণিকসভা ফিকি-র সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বণিকমহলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। সরকারে আসার পর থেকে হলদিয়া, কলকাতা, নয়াদিল্লিতে শিল্পপতিদের সম্মেলন ‘বেঙ্গল লিডস’ কোনও সাড়া ফেলতে না পারলেও মূলত অমিতবাবুর উদ্যোগে মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলন অনেকটাই সফল হয়েছিল। সেই সম্মেলনে মুকেশ অম্বানীকেও হাজির করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। সেই সাফল্যের উপর ভর করে এ বার বড়বাজার থেকে শিলিগুড়ির মারোয়াড়ি সমাজের ভোট ধরতে আসরে নামছেন তিনি।

রাজ্যের মারোয়াড়ি সমাজ গত কয়েক বছর ধরে শাসক দলের উপর কিছুটা বিরূপ ছিলেন বলে মনে করেন তৃণমূল নেতারা। কলকাতার এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর মতে, ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পর শহরের মারোয়াড়ি সমাজের সঙ্গে মমতা সরকারের সম্পর্কে ফাটল ধরেছিল। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী এক দিকে যেমন ওই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করে মালিকদের (যাঁরা সকলেই মারোয়াড়ি) জেলে পাঠান, তেমনই দীর্ঘদিন নতুন করে হাসপাতালটি খোলার অনুমতি দেননি তিনি। পরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমরি খোলে। মুখ্যমন্ত্রীও রাজস্থান থেকে আসা বৃহৎ অংশের এই অ-বাংলাভাষী বাসিন্দাদের মন পেতে উদ্যোগী হন। প্রথমে তিনি মারোয়াড়ি সমাজের এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পাঠান পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সেখানে হাজির ছিলেন জামিনে মুক্ত আমরির মালিকরাও। বলা যায়, বরফ গলার সূত্রপাতও সেখান থেকেই। পরে সরকারের বিজয়া সম্মিলনীতে মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীদের কাছে আমন্ত্রণপত্রও পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন সেই সম্পর্ক আরও মজবুত করতে চান মমতা, তাঁদের সমর্থন-প্রত্যাশায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন