মঞ্চ অ-মাইক, ধর্না সেই ভাঙা হাটই

দুপুরেই বিকেলের আমেজ! শীতের বিকেলের মতোই চতুর্থ দিনেই মলিন ময়দানে তৃণমূলের ধর্না মঞ্চ। অনতিদূরে শহিদ মিনার ময়দানে সিপিএমের সমাবেশ ঘিরে উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু ময়দানে গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রায় ভাঙা হাট ধর্না মঞ্চের। শহিদ মিনার ময়দানের মাইক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় ও মদনের বিরুদ্ধে চোখা চোখা বাক্যবাণ মাইকের মাধমে পৌছে যাচ্ছে ধর্না মঞ্চে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

দুপুরেই বিকেলের আমেজ! শীতের বিকেলের মতোই চতুর্থ দিনেই মলিন ময়দানে তৃণমূলের ধর্না মঞ্চ।

Advertisement

অনতিদূরে শহিদ মিনার ময়দানে সিপিএমের সমাবেশ ঘিরে উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু ময়দানে গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রায় ভাঙা হাট ধর্না মঞ্চের। শহিদ মিনার ময়দানের মাইক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় ও মদনের বিরুদ্ধে চোখা চোখা বাক্যবাণ মাইকের মাধমে পৌছে যাচ্ছে ধর্না মঞ্চে। তবে নিশ্চুপ ধর্না মঞ্চ। মাইক বন্ধ। কেন? তৃণমূলের এক রাজ্য সম্পাদক শঙ্কুদেব পণ্ডা বলেন, “আমরা সৌজন্য দেখিয়ে মাইক বন্ধ রেখেছি।”

এ দিন ধর্না মঞ্চ ভরিয়ে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হুগলির তৃণমূল নেতৃত্বকে। দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত দায়িত্ব পালনে কোনও খামতি রাখেননি। একমাত্র অনুপ ঘোষাল ছাড়া জেলার বাকি ১৫ বিধায়ককে এ দিন ধর্না মঞ্চে দেখা গিয়েছে। সেইসঙ্গে জেলার ১৮০ ক্লাবের ক্রীড়াবিদ, সদস্যদের আনা হয়েছিল। বারোটা নাগাদ মঞ্চে পৌছে গিয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। আগে থেকেই মঞ্চে ছিলেন রচপাল সিংহ। এক ঘন্টা পরে যোগ দেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ প্রায় শ পাঁচেক কর্মী মঞ্চের আশেপাশেই ছিলেন। তবে কখনই মঞ্চ ফাঁকা হতে দেননি। এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, “আজ আমাদের প্রেস্টিজ ফাইট। মঞ্চ ফাঁকা হতে দেওয়া যায় না।” ধর্নার এদিনের হাল নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও। তাঁর কথায়, “ধর্না করুণ দশায় পৌঁছেছে। তৃণমূল কর্মীদের ২% ধর্নায় সামিল হননি। তাঁরা ভাবছেন চুরি করবে ওরা, আর রাস্তায় নামব আমরা!”

Advertisement

মাইক না চললেও মঞ্চে ক্রীড়াবিদদের কেউ কেউ মদন-বন্দনা করছেন। গত তিনিদিনই এমন বন্দনা হয়েছে। আর এই প্রেক্ষিতেই এ দিন শহিদ মিনারের সভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলছেন,“মদনবাবুর সমর্থনে মিছিলে কেন এসেছেন, জিজ্ঞাসা করলে লোকে বলছেন, উনি ক্লাবকে টাকা দিয়েছেন। কার টাকা দিয়েছেন? জনগণের, আমার-আপনার করের টাকা।” তিনি তৃণমূলের সরকারকে ‘চোর-ডাকাতের সরকার’ বলে অভিহিত করে বলেন, “এখন চোরের সমর্থনে মিছিল হচ্ছে।” ওই সভায় তৃণমূলের মিছিলের প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “সবার বুকে লেখা আমি চোর। যেন আমরা সবাই চোর আমাদের এই চোরের রাজত্বে। যদিও আমি মনে করি না, তৃণমূলের সবাই চোর।” যাঁরা চোর তাঁদের নামে সিবিআইকে চার্জশিট দিতে হবে এবং বিচার করে তাঁদের শাস্তি দিতে হবে এই দাবি তুলে সাধারণ তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে সূর্যবাবু বলেন, “আপনারা চোরেদের মিছিলে যাবেন না।”

শহিদ মিনারের সমাবেশ এবং ধর্না মঞ্চ নিয়ে পুলিশও যথেষ্ট আটোসাঁটো ব্যবস্থা নিয়েছিল। ধর্না মঞ্চের পিছন দিক পুরো টাই বাঁশের ব্যারিকেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল। সিপিএমের সভায় আসা মিছিল ও বাস, গাড়ি রাখার জন্য পুরো মাঠটিকেই রাখা হয়েছিল। শহিদ মিনারের সভা শেষে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা সারিবদ্ধ ভাবে সেই বাস-গাড়িতে ওঠেন। সিপিএমের লোকজন বোঝাই বাস-গাড়ি যখন ধর্না মঞ্চের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে, তখন ওই যাত্রীদের অনেককেই মঞ্চে বসে থাকা গৌতম সরকার, বিদেশ বসু, তুষার শীল-সহ তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা যায়। বাসে বসা সিপিএম-যাত্রীদের কেউ কেউ আবার ধর্নাকারীদের ‘টা টা, বাই বাই’ বলে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন