লোক জোটানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অগত্যা ধর্না তোলার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল। শেষ দিন এমনই ছিল প্রতিবাদের ছবি। নিজস্ব চিত্র।
সাত দিনেই ত্রাহি রব উঠেছিল! আট দিনে ইতি!
ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ময়দানে গোষ্ঠ পালের মূর্তির পায়ের নীচে যাঁরা ধর্নার আয়োজন করেছিলেন, শনিবারের বার বেলায় সেই উদ্যোক্তাদের অনেকেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধর্নায় বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। উদ্যোক্তারা জানালেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলেই আন্দোলনের ইতি টানা হল।
ধর্না-ভঙ্গের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের অদূরে চেয়ারে বসে থাকা এক তৃণমূল নেতা সজোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন, “ওফ্, বড়দিনের ছুটিটা মিলল তা হলে!”
ধর্না কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন থেকেই উসখুস চলছিল তৃণমূলের অন্দরে। কথা ছিল, যত দিন না ক্রীড়ামন্ত্রীকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তত দিনই ধর্না চলবে। খাতায় কলমে আয়োজক ছিলেন তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ ক্রীড়াবিদরা। কিন্তু শনিবার ধর্নার শুরুতেই দলনেত্রী থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতারা বুঝে যান, লোক আনতে তৃণমূল ও দলের শাখা সংগঠনই ভরসা। এগিয়ে আসতে হয়েছে দলের ছাত্র, যুব, মহিলা শাখা তো বটেই, আইনজীবীদেরও। কিন্তু সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মঞ্চ আগলে বক্তৃতা করার লোক মিললেও, তা শোনার লোক জমছিল না। বাস-ম্যাটাডোরে কলকাতা ও জেলা থেকে লোক এনেও আসর জমছিল না। বিরোধীরাও এ নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করছিলেন। সিপিএমের জনসভায় সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “চুরি-প্রতারণার দায়ে জেলে গিয়েছেন নেতা। মানুষ কেন তাঁর সমর্থনে ধর্নায় আসবেন?”
কিন্তু শুক্রবারও জামিন পাননি মদন। তাঁকে জেলে পাঠায় আদালত। প্রমাদ গোনেন নেতারা। অনেকেই জনান্তিকে বলতে থাকেন, “আর কত দিন ধর্নার বোঝা টানতে হবে?” দলের ছাত্র-যুব নেতাদের কেউ কেউ জানান, সামনে বড়দিন। নিউ ইয়ার। মানুষ উৎসবের মেজাজে। এই অবস্থায় ধর্না টেনে যাওয়াটা অসম্ভব।
এই অবস্থায় এ দিন বিকেলে ময়দানে ধর্নার ইতি ঘোষণা ছাড়া বোধ হয় উপায়ও ছিল না পার্থবাবুর। তার আগে মঞ্চ থেকে ফুটবলার গৌতম সরকার বলেন, “আজই ধর্নার শেষ দিন। এর পর ক্রীড়ামন্ত্রীর গ্রেফতারের প্রতিবাদ ছড়াবে জেলায় জেলায়।” ইঙ্গিত মিলতেই, মঞ্চের নীচে বসা তৃণমূলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ বলতে থাকেন, “বাঁচা গেল!” মিনিট দশেকের মধ্যেই শুনশান ধর্না মঞ্চ!
পার্থবাবু অবশ্য বুকের হতাশা মুখে আনতে রাজি নন। তাঁর কথায়, “ময়দানের ধর্না উঠে গেল মানে এই নয় যে প্রতিবাদ বন্ধ হল। প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়বে জেলায়!” পার্থবাবুর দাবি, জেলাগুলি থেকে ক্রীড়াবিদেরা এর প্রতিবাদ জানাতে অনুমোদন চাইছিলেন। তাই এই পদক্ষেপ। তবে মদনকে ‘অন্যায় ভাবে’ গ্রেফতার করার প্রতিবাদ জানাতে ময়দানে যেমন ধর্না মঞ্চ খোলা হয়েছিল, তেমনই ২৪ ঘণ্টা আগে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে দরবারও করেছেন পার্থবাবু, সুব্রত মুখোপাধ্যায়-সহ পাঁচ সিনিয়র মন্ত্রী। তার পরেও মদন যে সহজে মুক্তি পাচ্ছেন না, তা বুঝেই এ দিন ধর্নায় যবনিকা টানার সিদ্ধান্ত।
শাসক দলের এই ফ্লপ ধর্না নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। তাঁর কথায়, “গোষ্ঠ পাল এ বার সসম্মানে থাকতে পারবেন! এই ধর্নায় ক্রীড়া জগতের অসম্মান হচ্ছিল।”