শিক্ষায় অরাজকতা আগের তুলনায় ৬০ ভাগ কমেছে বলে খোদ শিক্ষামন্ত্রীর পরিসংখ্যান। কিন্তু তাঁর দাবিকে কার্যত নস্যাৎ করেই শিক্ষা ক্ষেত্রে বহাল রয়েছে আন্দোলন-অবস্থান-অনশন।
কলেজ স্ট্রিটের মতো ব্যস্ত রাস্তার অর্ধেক জুড়ে অবস্থান চলছে এক দল পার্শ্বশিক্ষকের। আর চাকরির দাবিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর সামনে ২৭ জানুয়ারি থেকে অনশন-অবস্থানে বসেই আছেন এক দল প্রার্থী। এ দিন সল্টলেকে এসএসসি-র দফতর থেকে সরে কমিশনের কলকাতা আঞ্চলিক দফতরের সামনে অবস্থানে বসেন প্রার্থীদের একাংশ। এর সঙ্গে সোমবার যুক্ত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসারদের একাংশের আন্দোলন। অন্যায় ভাবে ফিনান্স অফিসারকে সাসপেন্ড করার অভিযোগ তুলে এ দিন আধ ঘণ্টার জন্য অবস্থান করেন তাঁরা।
রবিবার সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, শিক্ষায় অরাজকতার ঘটনা আগের থেকে ৬০ ভাগ কমে গিয়েছে। এই দাবি প্রতিষ্ঠা করতে তিনি তথ্যও পেশ করতে পারেন বলে জানান মন্ত্রী। কিন্তু সে-দিন থেকেই প্রশ্ন উঠছে, অশান্তি ও সংঘর্ষের ঘটনা যখন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কার্যত রুটিনে পরিণত হয়েছে, তখন মন্ত্রী এমন দাবি করছেন কী ভাবে?
প্রশ্ন যে অমূলক নয়, প্রমাণ কলেজ স্ট্রিট। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পার্শ্বশিক্ষকদের অবস্থান-আন্দোলনে যানবাহনের গতি মন্থর। যানজটও হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রশিক্ষণ, বেতন, কাজ নিয়ে নানান দাবিদাওয়ায় শুক্রবার থেকে কলেজ স্ট্রিটের অর্ধেক জুড়ে ত্রিপল টাঙিয়ে অবস্থান করছেন তাঁরা।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, পার্শ্বশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। কোন জেলায় কত প্রশিক্ষণহীন পার্শ্বশিক্ষক আছেন, তার হিসেব চাওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের তরফে রমিউল ইসলাম শেখ কিন্তু জানান, দফতরের এই উদ্যোগের কথা তাঁদের জানা নেই। বেতন বৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষকদের সঙ্গে যৌথ ভাবে পথে নামার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তাঁরা। দাবি আদায়ে গত সপ্তাহেই কলেজ স্কোয়ারের ভিতরে আন্দোলন করছিলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের অনেক শিক্ষক।
এ ধরনের আন্দোলনে তিনি যে উদ্বিগ্ন, বারবার তা জানিয়েছেন পার্থবাবু। রবিবারেও তিনি বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্স যেতে পারছে না। অথচ কলেজ স্ট্রিটে রাস্তা আটকে আন্দোলন হচ্ছে। যখন-তখন আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন কেউ কেউ। এ-সব কী হচ্ছে? বারবার বোঝানো সত্ত্বেও কেউ কিছু বুঝছেন না।” এসএসসি-র প্রার্থীদের আন্দোলনের বিরোধিতা করেও কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর কোনও বার্তাই যে আন্দোলনকারীদের কানে পৌঁছচ্ছে না, এ দিন ফের তার প্রমাণ মিলেছে। সল্টলেকে এসএসসি-র মূল দফতরের সামনে চাকরির দাবিতে অনশন চালানোর সঙ্গে সঙ্গে শরৎ বোস রোডে কমিশনের কলকাতা অফিসের সামনে অবস্থানে বসেন এক দল প্রার্থী।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার সকলেরই আছে বলে সোমবার মন্তব্য করেন পার্থবাবু। তবে তাঁর প্রশ্ন, কিছু মানুষ অন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করলে কী করা যেতে পারে? সরকার আবেদন জানাচ্ছে, এই ধরনের আন্দোলন থেকে সরে আসুন। আশা করি, ওঁদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।”
এসএসসি-র পরীক্ষা পাশ প্রার্থীদের অনশন, পার্শ্বশিক্ষকদের অবস্থানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিকারিকদের অবস্থান-আন্দোলন মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসনের। সেখানকার ফিনান্স অফিসার হরিসাধন ঘোষকে অন্যায় ভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এ দিন টিফিনের সময় বেলা ২টো থেকে আড়াই ঘণ্টা দ্বারভাঙা ভবনে অবস্থান করেন বেশ কিছু আধিকারিক। এক আধিকারিক জানান, হরিসাধনবাবু বিনা অনুমতিতে ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন এবং তা ভেঙেছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু প্রায় ৩০ বছর ধরে তো এ ভাবেই কাজ চলেছে। কখনও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। তা হলে ফিনান্স অফিসারের উপরে কোপ কেন? “কোনও রকম আর্থিক দুর্নীতি হয়নি। তা সত্ত্বেও অকারণে তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে,” বলেন ওই আধিকারিক। উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে স্মারকলিপিও দেন তাঁরা।
ফিনান্স অফিসারের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে কমিটি গড়া হয়েছে। ফিনান্স অফিসারও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাই কোনও মন্তব্য করতে চাননি উপাচার্য। সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে আধিকারিকদের আন্দোলন নিয়ে। আধিকারিকেরা কেন আন্দোলন করছেন, সেই প্রশ্নে চিৎকার-কটূক্তিও করেন তাঁরা। তবে উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয় উদ্যাপনের জন্য এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই মিছিল ও সভা করেন তাঁরা এবং সেটাই প্রধান হয়ে ওঠে। কর্মচারীদের ব্যবহার অবশ্য সমর্থন করেননি শিক্ষামন্ত্রী।