যাদবপুরে অবশেষে ধৃত শ্লীলতাহানির দুই অভিযুক্ত

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগের তদন্তে সরকার গঠিত কমিটি বৃহস্পতিবার রিপোর্ট জমা দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। দু’জনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ২৮ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান ওই ছাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগের তদন্তে সরকার গঠিত কমিটি বৃহস্পতিবার রিপোর্ট জমা দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। দু’জনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

Advertisement

২৮ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান ওই ছাত্রী। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম নিখিল দাস ও সোনু কুমার। নিখিল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সোনু পড়েন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষে। এই ঘটনার তদন্তভার যাদবপুর থানার হাত থেকে লালবাজারের উইমেন্স গ্রিভ্যান্স সেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

ঘটনার পরে মেয়েটির বাবা দেখা করেছিলেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি দু’দিন বাদে তাঁকে আসতে বলেন। তার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কমিটিকে ঘটনাটির তদন্তের নির্দেশ দেন কর্তৃপক্ষ। তিন সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলেও সেই কমিটি এখনও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে কমিটির স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আন্দোলন ছড়িয়েছে ক্যাম্পাসে। কমিটির এক সদস্যের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে পৃথক তদন্তের দাবি জানান পড়ুয়ারা।

Advertisement

পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীই সরকারকে শ্লীলতাহানির অভিযোগের তদন্তের পরামর্শ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসতে থাকে। খানিকটা বাধ্য হয়েই সোমবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি তৈরি করে পৃথক তদন্তের নির্দেশ দেয় সরকার। কমিটিকে তদন্ত-রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। গত কাল রিপোর্ট জমা পড়ে। তার পরেই সক্রিয় হয় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত এ দিন সন্ধ্যায় ওই দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারি সূত্রে খবর, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে একটি অপ্রীতিকর ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে অনেকেই জড়িত ছিলেন বলে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও পরোক্ষে প্রশ্ন তুলেছে সরকারের তদন্ত কমিটি।

পুলিশ সূত্রে খরব, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ওই হস্টেলের সুপারকে জেরা করে কিছু ছাত্রকে চিহ্নিত করা হয়। তার ভিত্তিতেই এ দিন ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এঁদের মধ্যে নিখিল ও সোনুও ছিলেন। দীর্ঘ ক্ষণ জেরার পর ওই দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। লালবাজারের খবর, ওই ঘটনায় আরও কয়েক জন জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁদেরও গ্রেফতার করা হতে পারে। কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই নিয়ে মুখ খোলেননি। রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষকে বারবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। ফোন ধরেননি উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীও।

ছাত্রী-নিগ্রহের ঘটনায় দুই ছাত্রের গ্রেফতারের পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে প্রায় এক মাস আগের ঘটনাকে কি এত দিন লঘু করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন কর্তৃপক্ষ? এই প্রশ্নের এর জবাব মেলেনি। বস্তুত, শ্লীলতাহানির অভিযোগের স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের দাবিতেই আন্দোলন শুরু করেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি (আইসিসি) ও তার কাজের প্রক্রিয়ায় গলদ আছে। ১৬ সেপ্টেম্বর এই নিয়েই উপাচার্য-সহ এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্যদের ঘেরাও করেন তাঁরা। পরে পুলিশ গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বেদম মারধর করে মুক্ত করেন আটক শিক্ষক ও কর্তাদের।

সেই রাতে পুলিশি হামলা ও উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিদেশেও। দাবির সমর্থনে এখনও ক্লাস বয়কট চালিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। একই দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সংগঠন জুটা-ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন