রাজ্যে প্রতিবন্ধীদের চাকরি, পদ চিহ্নিত হল না ২০ বছরেও

আইন তৈরি হয়েছে প্রায় কুড়ি বছর আগে। হাইকোর্টের নির্দেশও বছর আটেক আগের ঘটনা। তাতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে তিন শতাংশ আসন প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। এত কিছুর পরেও চাকরি দেওয়া দূর স্থান, সরকারের ৪৪টি দফতর এখনও প্রতিবন্ধীদের জন্য পদই চিহ্নিত করে উঠতে পারেনি! সরকারের যে ১৭টি দফতর নিয়ম মেনে পদ তৈরি করেছে, তারা আবার প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেওয়ার প্রশ্নে বিশেষ এগোয়নি।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১০
Share:

আইন তৈরি হয়েছে প্রায় কুড়ি বছর আগে। হাইকোর্টের নির্দেশও বছর আটেক আগের ঘটনা। তাতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে তিন শতাংশ আসন প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। এত কিছুর পরেও চাকরি দেওয়া দূর স্থান, সরকারের ৪৪টি দফতর এখনও প্রতিবন্ধীদের জন্য পদই চিহ্নিত করে উঠতে পারেনি! সরকারের যে ১৭টি দফতর নিয়ম মেনে পদ তৈরি করেছে, তারা আবার প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেওয়ার প্রশ্নে বিশেষ এগোয়নি।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, এই নিয়ে গত এক মাসে সরকারি দফতরগুলির সঙ্গে দু’বার বৈঠক করেছেন নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং প্রতিবন্ধী কমিশনার মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের কথায়, “প্রতিটি দফতরে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে প্রতিবন্ধীদের জন্য পদ চিহ্নিত করতে বলেছি। কারণ, এ ভাবে চলতে পারে না।” যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রাপ্য চাকরি ও সুযোগ থেকে প্রতিবন্ধীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সমাজকল্যাণ দফতরেই। কিন্তু বৈঠক বা চিঠিতে পরিস্থিতির বিশেষ

পরিবর্তন হবে বলে মনে করছে না প্রশাসনের একাংশ।

Advertisement

সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে আইন করে চাকরিতে প্রতিবন্ধী সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে ১৯৯৫ সালে। তাতে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০০ পয়েন্ট রোস্টারে ১২তম পদে দৃষ্টিহীন প্রার্থী, ৪২তম পদে শ্রবণজনিত প্রতিবন্ধী এবং ৭২তম পদে অস্থিসংক্রান্ত প্রতিবন্ধী প্রার্থী নেওয়ার কথা হয়েছে। তাঁরা সর্বাধিক ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরির আবেদন করতে পারেন। এ, বি, সি, ডি প্রতিটি গ্রুপেই চাকরি পাওয়ার যোগ্য এক জন প্রতিবন্ধী। লিখিত পরীক্ষায় পাঁচ শতাংশ ছাড়ের কথাও বলা আছে আইনে। এই আইনের ভিত্তিতে ২০০৫-০৬ সালে একটি নির্দেশও দেয় হাইকোর্ট।

প্রতিবন্ধী কমিশন সূত্রের খবর, এ পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন দফতরে সব মিলিয়ে ৪৭০টি পদ চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে সমাজকল্যাণ দফতর ১৬০টি এবং পশুপালন দফতরে ২০০টি পদ তৈরি হয়। কিন্তু আদালতের রায়ের পরে রাজ্যে ৩৫০ জনের মতো প্রতিবন্ধী চাকরি পেয়েছেন। যে সমাজকল্যাণ দফতর এই নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার, তারাও ৬০ জনের বেশি প্রতিবন্ধীকে চাকরি দিতে পারেনি। প্রতিবন্ধী কমিশনারের মন্তব্য, “গত কয়েক বছরে রাজ্যে অন্তত ৩৫০০ জনের চাকরি হওয়া উচিত ছিল।”

কেন সরকারের অধিকাংশ দফতর প্রতিবন্ধীদের জন্য পদ সংরক্ষণ করেনি? নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়, “বিষয়টি জানতাম না। এ রকম হয়ে থাকলে তা অন্যায় হয়েছে। নির্বাচনের পরে সচিবদের দেখতে বলব।” রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে অবশ্য দায় চাপিয়েছেন সমাজকল্যাণ দফতরের উপরেই। তাঁর কথায়, “সমাজকল্যাণ দফতর বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়নি বলেই এই অবস্থা। ওরা আগে বললে সকলে নড়ে বসতেন।” স্বাস্থ্য, সমবায়, অর্থের মতো একাধিক দফতরের কর্তাদের দাবি, প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন চিহ্নিত করেও যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। কর্তাদের অভিযোগ, চাকরি পেলেও অনেক প্রতিবন্ধী কর্মী শারীরিক কারণে কাজ করতে পারছেন না। ফলে পদ তৈরিতে দফতরের আগ্রহ কম। পাল্টা অভিযোগ, বিজ্ঞাপনে সংরক্ষিত পদ নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না। ফলে প্রতিবন্ধীরা বুঝতে না পেরে আবেদন করছে না।

সরকারি দফতরে কর্তাদের এই যুক্তিকে ‘আমানবিক’ বলে মনে করেন শশী পাঁজা। তাঁর কথায়, “প্রতিবন্ধীদের শারীরিক সক্ষমতা না দেখে কাজ দেওয়াতেই সমস্যা হচ্ছে। যে পদে চাকরি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে পদোন্নতির সুযোগ খুব কম।” প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি সমাজকল্যাণ দফতরের পাশেই দাঁড়িয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন