ছিঁড়ছে না প্যাকেজের শিকে।
রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার থাকলে পশ্চিমবঙ্গবাসীর দু’হাতেই থাকবে লাড্ডু। কলকাতায় গিয়ে ভোট-প্রচারে গিয়ে এমনটাই বলে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তৎকালীন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ প্রাপ্তির আশা আরও ধাপ বাড়িয়ে তুলতে আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাকে প্যাকেজ দেবে কেন্দ্র!
কিন্তু ভোট-বাজারে প্রতিশ্রুতি বিলোনো আর বাস্তবের ফারাকটা সামনে চলে এল নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেও। লোকসভায় সাধারণ বাজেট নিয়ে বিতর্কের জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ সাফ জানিয়ে দিলেন, পশ্চিমবঙ্গকে এই মুহূর্তে কোনও প্যাকেজ দিতে কেন্দ্র অপারগ। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ঋণগ্রস্ত তিনটি রাজ্যের আর্থিক পুনর্গঠনের বিষয়টি চতুর্দশ অর্থ কমিশন খতিয়ে দেখছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই ভবিষ্যতে পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র।
অর্থ কমিশন ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে। এর পর আগামী অর্থ বর্ষ থেকে সেই সুপারিশ রূপায়িত হওয়ার কথা। তবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, পরিস্থিতি এমন যে, অর্থ কমিশনও যে পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার সুপারিশ করবে, সেই আশা কম। বরং উল্টে আরও কঠোর আর্থিক শৃঙ্খলার পথে হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে রাজ্যকে। পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক প্যাকেজের দাবি নিয়ে গত তিন বছর ধরে লাগাতার সরব রয়েছেন তৃণমূলের সাংসদরা। রাজ্যের ঋণের উপর তিন বছরের সুদ মকুবের দাবিতে সংসদ চত্বরে গাঁধী-মূর্তির পাদদেশে একাধিক বার ধরনায় বসেছেন তাঁরা। কেন্দ্রে তখন মনমোহন সিংহের সরকার। দফায় দফায় তাঁর কাছেও দরবার করা হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দাবি, “এখন প্রতি বছর প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ঋণের উপর সুদ মেটাতে চলে যায়। ফলে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন তা করতে পারছে না রাজ্য।” তাই পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অন্তত ৩ বছরের জন্য ওই সুদ মকুবের দাবি জানিয়ে আসছিল তৃণমূল নেতৃত্ব।
ইউপিএ জমানায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রথমে প্রণব মুখোপাধ্যায় ও পরে পি চিদম্বরম বারবারই জানিয়েছেন, আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গ বা কোনও রাজ্যকে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে কেরল, পঞ্জাব-সহ অন্য রাজ্যগুলিও একই দাবি তুলবে। পরবর্তী কালে ঋণগ্রস্ত ওই রাজ্যগুলির আর্থিক পুনর্গঠনের বিষয়টি খতিয়ে দেখে অর্থ কমিশনকে সুপারিশ জানাতে বলেন চিদম্বরম। বস্তুত, অর্থমন্ত্রী থাকা কালে চিদম্বরম যা বলেছিলেন, তার সঙ্গে জেটলির এ দিনের বক্তব্যে কোনও ফারাকই দেখা গেল না। বরং, পরোক্ষে পশ্চিমবঙ্গকে বার্তা দিয়ে জেটলি আজ এ-ও বলেন যে, “কেন্দ্রের আর্থিক ঘাটতির তুলনায় কিছু কিছু রাজ্যে ঘাটতির পরিমাণ কম। কেন্দ্রের আর্থিক ঘাটতি যেখানে ৪.৫%, সেখানে রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে তা ৪.১%। তবে এ-ও ঠিক কয়েকটি রাজ্যে আর্থিক শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে।”
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই কথার ফাঁকেই বাম আমলের ভ্রান্তির দিকে আঙুল তুলতে তৃণমূলের সৌগত রায় বলেন, “শৃঙ্খলার অভাবের কারণটার একটা ইতিহাস রয়েছে।” জেটলি জবাবে বলেন, “আমি তা জানি। আমি আশা করব অর্থ কমিশন সেই বিষয়টি মাথায় রাখবে। কমিশনের সুপারিশ মেনে পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র।” প্রথমে মূল বাজেটে ও পরে বাজেট বিতর্কের জবাবে বাংলার জন্য আর্থিক প্যাকেজের বিষয়টি জেটলি এড়িয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল শিবির। সৌগতবাবু বলেন, “সেই কারণে জেটলির জবাবি ভাষণ শেষ হওয়ার পরে আলাদা করে আর্থিক প্যাকেজের প্রশ্নে ব্যাখা চাওয়া হয়। কিন্তু সরকার যে জবাব দিয়েছে তাতে আমরা হতাশ। রাজ্যের মানুষের সঙ্গে ফের বঞ্চনা করা হল।” আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি যে খনিজের রয়্যালটি (পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে মূলত কয়লার সেস) বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল, আজ তা নিয়েও বিশেষ কোনও ইতিবাচক বার্তা দেননি জেটলি। তিনি কেবল বলেন, “নতুন হার গত দু’বছর ধরে বকেয়া রয়েছে। সরকার বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব মেটাতে চায়।” রয়্যালিটির কাঠামোয় পরিবর্তন হলে কয়লার সেসের মাধ্যমে রাজ্যের কোষাগারে কিছুটা বাড়তি অর্থ আসতে পারত। তাও কার্যত খারিজ করে দিয়েছেন অরুণ জেটলি।