পিএসসি কাণ্ড

রাজ্যপালের কাছে সূর্য, সরব কংগ্রেস-বিজেপিও

পিএসসি কাণ্ডে অনিয়মের প্রতিবাদে সরব হল বিরোধী দলগুলি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর দ্বারস্থ হলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। শনিবার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তিনি পিএসসি-র পরিচালন বোর্ড ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর আরও দাবি, যত দিন না নতুন বোর্ড হচ্ছে, তত দিন সব ধরনের ইন্টারভিউ স্থগিত রাখা হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৪
Share:

পিএসসি কাণ্ডে অনিয়মের প্রতিবাদে সরব হল বিরোধী দলগুলি।

Advertisement

বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর দ্বারস্থ হলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। শনিবার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তিনি পিএসসি-র পরিচালন বোর্ড ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর আরও দাবি, যত দিন না নতুন বোর্ড হচ্ছে, তত দিন সব ধরনের ইন্টারভিউ স্থগিত রাখা হোক।

একই সঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান শেখ নুরুল হকের পদত্যাগের দাবি তুলেছে কংগ্রেস এবং বিজেপি। একই দাবি উঠেছে প্রশাসনের অন্দরেও।

Advertisement

কমিশন-সূত্রের খবর, পিএসসি-চেয়ারম্যানের কাছে কমিশনের দুই সদস্য দাবি করেছিলেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নাম-ঠিকানা ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য যেন ইন্টারভিউয়ের যথেষ্ট আগে তাঁদের সরবরাহ করা হয়। তাঁদের জোরাজুরিতে কার্যত বাধ্য হয়েই চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন, লিখিত পরীক্ষায় সফল প্রার্থীদের ঠিকুজি-কুলুজি কমিশনের সব সদস্যের হাতে তুলে দিতে হবে ইন্টারভিউয়ের অন্তত সাত দিন আগে। নিয়ম-নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী এই ঘটনার খবর আনন্দবাজারে প্রকাশিত হতেই রাজ্য প্রশাসন ও রাজনীতিকদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।

শনিবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি লিখে ওই দুই সদস্যকে সরিয়ে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন সূর্যবাবু। রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠির প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, “সাধারণ ভাবে এই বোর্ডের সদস্যদের সরানো যায় না। কিন্তু সংবিধানের ১৪৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টকে পাঠালে তখন রাজ্যপাল এই সদস্যদের সাসপেন্ড করতে পারেন বা সরিয়ে দিতে পারেন। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।”

সূর্যবাবুর অভিযোগ, “পিএসসি একটি সাংবিধানিক সংস্থা। যে দু’জন সদস্য এর মর্যাদা লঙ্ঘন করতে চেয়েছেন তাঁদের রাজনৈতিক যোগও রয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, তাঁরা আগে থেকে জেনে প্রার্থীদের বাড়িতে ডেকে অথবা যোগাযোগ করে দলীয় আনুগত্য যাচাই করতে চান বা টাকাকড়ির লেনদেনও হতে পারে।” এর আগেও টেট পরীক্ষা, এসএসসি-র ক্ষেত্রেও টাকার খেলা হয়েছে বলে দাবি বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার। সূযর্বাবুর প্রশ্ন, “এমন ব্যক্তিদের যদি সিভিল সার্ভিসে আনা হয়, তা হলে তাঁরা কী ভাবে রাজ্যের প্রশাসন চালাবেন?”

পিএসসি-র এই অনিয়মের প্রতিবাদে শেখ নুরুল হকের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এবং কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। রাহুলের কথায়, “যে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসেছেন, তাঁদের আর এই বোর্ডের উপর কোনও আস্থা থাকবে না। ফলে বোর্ডের সব সদস্যেরই পদত্যাগ করা উচিত।” সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়ে তাঁরা পিএসসি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানাবেন বলেও জানিয়েছেন রাহুল।

মানস ভুঁইয়াও সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ফেরাতে প্রয়োজনে পিএসসি-র নতুন বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন। “পিএসসি এমন একটি সংস্থা, যার কাজকর্ম নিয়ে কোনও প্রশ্ন কোনও কালেই ওঠেনি। এখন যদি তা ওঠে, তা হলে সরকারের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত” বক্তব্য মানসবাবুর।

এই ঘটনার পরে পিএসসি-র চেয়ারম্যান পদে শেখ নুরুল হকের থাকার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আমলাদের একাংশও। এ দিন নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “নুরুল হকের সততা নিয়ে আমাদের মনে সংশয় নেই। কিন্তু তাঁর মতো এক জন সজ্জন আমলা কী ভাবে অন্য সদস্যদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করলেন, সেটাই আশ্চর্যের! এখন তাঁর নেতৃত্বে এই বোর্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রেখে কাজ করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে।”

তা হলে নুরুল হকের কী করা উচিত? ওই আমলা জানান, বোর্ড পুর্নগঠন করতে হলে নুরুল হককে অবশ্যই সরে দাঁড়াতে হবে। চেয়ারম্যান নিজে কী বলছেন? তাঁর মতামত জানতে বহু বার ফোন করা হলেও সাড়া দেননি নুরুল হক। এসএমএস করা হলেও কোনও জবাব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন