রেজিস্ট্রার বরখাস্তে চরমে চাপানউতোর

সমাবর্তনের প্রাক্কালে কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির বিভাগীয় তদন্তে দোষী সাব্যস্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারকে বরখাস্তের চিঠি পাঠানো হবে কি না তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১২
Share:

সমাবর্তনের প্রাক্কালে কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির বিভাগীয় তদন্তে দোষী সাব্যস্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারকে বরখাস্তের চিঠি পাঠানো হবে কি না তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। আজ, সোমবার দুপুরে কর্মসমিতির বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনাও চাইছেন অনেকে। কারণ, আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সমাবর্তন হবে। তার আগে একদিকে বাম মনোভাবাপন্ন অফিসার-কর্মীদের একাংশ চাইছেন, কর্মসমিতি ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ির মেয়র তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য কর্মসমিতির সিদ্ধান্তের আড়ালে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম প্রভাবিত সংগঠনের অনেকেই সরব হয়েছেন।

Advertisement

উল্টো দিকে, তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠন চাইছে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত দিলীপবাবুকে দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হোক। কারণ, প্রায় ৬ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় অস্থায়ী রেজিস্ট্রার কাজ চালাচ্ছেন। তাই গত ২১ জানুয়ারি কর্মসমিতি রেজিস্ট্রারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তের পরেই শিক্ষা দফতরের কাছে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের আর্জি জানান অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অফিসার জানান, বরখাস্তের সিদ্ধান্তের কথা দিলীপবাবুকে না জানানো পর্যন্ত স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য শিক্ষা দফতরকে জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব নয়। তবে কোনও চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে আজ, কর্মসমিতির বৈঠকের পরে রেজিস্ট্রারকে চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সংগঠনের কয়েকজন প্রবীণ সদস্য জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, পরীক্ষা নিয়ামক থাকার সময়ে দিলীপবাবু প্রায় কোটি টাকার বেশি টাকা অপচয় করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত হয়। একাধিক অডিটও হয়। তৎকালীন উপাচার্য দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর করেন। দিলীপবাবু সাসপেন্ড হন। তিনি নিজেকে পুরোপুরি নির্দোষ দাবি করে উচ্চ আদালতে যান। বিভাগীয় তদন্ত বৈধ কি না, সেটা চ্যালেঞ্জ করেন। বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট অবধি। গত বছর সুপ্রিম কোর্ট বিভাগীয় তদন্তকে যথার্থ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে দিলীপবাবুর ব্যাপারে ‘যুক্তিগ্রাহ্য পদক্ষেপ’ করতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। সেই সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে দিলীপবাবুর আদালতে যাওয়ার অধিকার রয়েছে বলেও সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দেয়।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সম্পাদক সুমন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ আদালত দিলীপ সরকারের বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি তাঁকে বরখাস্ত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করি না। তাড়াহুড়ো করে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পুলিশেও অভিযোগ হয়েছে। আদালতে তা বিচারাধীন। তার রায় হওয়ার আগেই শাস্তি দেওয়া হল। কর্মসমিতির ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত পোষণ করি না।’’ দিলীপবাবু ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতেও গেলে সুমনবাবুরা তাঁর পাশেই থাকবেন বলে জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি কিন্তু অন্য মত পোষণ করছে। সমিতির সম্পাদক সমর বিশ্বাস বলেন, ‘‘দিলীপবাবুর পাশে দাঁড়াতে অশোক ভট্টাচার্যর মতো মানুষ যা বলছেন, তাতে তাঁরা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করছেন বলে মনে হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি এত কিছু অন্যায় করেছেন তা প্রমাণিত। কর্মসমিতির কেউ কেউ বলছেন, তেমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন বলছেন, তা আমরা জানি।’’ এর পরেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘আসলে অনেকে নানা ভাবে দিলীপবাবুর কাছ থেকে উপকার পেয়েছেন। সেটা মাথায় রেখে তাঁদের পদক্ষেপ করতে হচ্ছে।’’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির আহ্বায়ক গুরুচরণ রায়ের মতে, কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলীপবাবুকে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠানো উচিত ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘সামনে সমাবর্তন রয়েছে বলে দেরি হচ্ছে বলে মনে হয়। তবে দ্রুত ওই চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা করা দরকার। এমনিতেই দেরি হয়েছে।’’

(সহ প্রতিবেদন: সৌমিত্র কুণ্ডু)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন