নিতিন গডকড়ীর পরে এ বার অরুণ জেটলি। সে বার ছিল রাস্তায় কুস্তি, নবান্নে দোস্তি। এ বার যুবভারতীতে সহযোগিতার কূটনৈতিক সুর আর শরৎ সদনে রাজনৈতিক আক্রমণ!
উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতা চলবে কিন্তু রাজনীতিতে তৃণমূলকে জমি ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন নেই এই দ্বিমুখী নীতি নিয়েই চলছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। এবং একের পর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যে এসে সেই দ্বিমুখী কৌশলই প্রয়োগ করে দেখাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জেটলি এ দিন যেমন হাওড়ায় বিজেপির সভায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে তাঁদের লক্ষ্য ২০১৬। তাই দুর্নীতির অস্ত্র হাতছাড়া করবেন না তাঁরা। জেটলির ওই বক্তৃতা শুনে বোঝার উপায়ই ছিল না, তার আগে এ দিন সকালেই মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শিল্প সম্মেলনে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে সহযোগিতার বার্তাই দিয়ে এসেছেন তিনি!
মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে উন্নয়নের প্রশ্নে কংগ্রেসের আহমেদ পটেলের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা মোটেও অপ্রত্যাশিত বিষয় ছিল না! কিন্তু এ বঙ্গে উন্নয়ন এবং রাজনীতির লড়াই পৃথক করার চেষ্টার নজির বিশেষ নেই। যে কারণে জেটলিদের এই দ্বৈত ভূমিকা আরও বেশি করে নজরে পড়ছে। জেটলি যেমন এ দিনই রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যসভা অচল করে তৃণমূলের কোনও লাভ হবে না! সারদার দিকে ইঙ্গিত করেই জেটলি বলেছেন, “একটা দলের কিছু নেতা-মন্ত্রী চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তাই সংসদ অচল কেরে দেবেন সেই দলের সাংসদেরা! এটা হতে পারে না!” পাশাপাশিই জেটলির দাবি, তাঁদের দলের কেউ কোনও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে তাঁকে বলা হয় আগে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করো! তার পরে দলের কাছে এসো!
রাজ্য রাজনীতিতে রাহুল সিংহদের উত্থানের রাস্তা আরও পরিষ্কার করতে প্রত্যাশিত ভাবে বামেদেরও আক্রমণ করেছেন জেটলি। দাবি করেছেন, এ রাজ্যেও বামপন্থীরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। তাঁর কথায়, “এই অবস্থায় আমরা একটা জুতসই জায়গা আবিষ্কার করতে পেরেছি। মানুষ বামেদের প্রত্যাখ্যান করার পরে তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছিল। এখন মানুষ হতাশ! তাই বিজেপি-ই তাদের একমাত্র বিকল্প।” একই সঙ্গে বোঝাতে চেয়েছেন, সংসদের অভ্যন্তরে তৃণমূল এবং বাম যত গাঁটছড়া বাঁধে, রাহুলবাবুদের পক্ষে এখানে ততই লাভ! এ রাজ্যে বিজেপি-র জনসমর্থন যে বাড়ছে, তা বোঝাতে গত লোকসভা ভোটে বাংলায় দলের দু’টি আসন জয় ছাড়াও দু’টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে থাকার তথ্য উল্লেখ করেছেন জেটলি।
জেটলির জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, “শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এক রকম কথা বলেছেন। আবার দলের মঞ্চে গিয়ে অন্য সুরে কথা বলেছেন! উনি ওঁর মতাদর্শ অনুযায়ী বলেছেন। আর আমরা আমাদের মতাদর্শ অনুযায়ী কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য টাকা দাবি করছি।”