রাস্তায় দেখা হবে, তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি বুদ্ধের

তাদের জন্য তৃণমূল নেত্রীর দরজা খুলে রাখার প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গেই জল ঢেলে দিয়েছিল সিপিএম। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বললেন, তৃণমূলের মতো ‘সমাজবিরোধীদের দলে’র সঙ্গে আলোচনার কোনও প্রশ্নই নেই। বরং, তাঁরা রাস্তায় নেমে শাসক দলের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছেন! বুদ্ধবাবুর কথায়, “ওদের সঙ্গে রাস্তাতেই দেখা হবে!”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৪
Share:

বক্তা বুদ্ধ। রবিবার শহিদ দিবসের সমাবেশে। নিজস্ব চিত্র

তাদের জন্য তৃণমূল নেত্রীর দরজা খুলে রাখার প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গেই জল ঢেলে দিয়েছিল সিপিএম। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বললেন, তৃণমূলের মতো ‘সমাজবিরোধীদের দলে’র সঙ্গে আলোচনার কোনও প্রশ্নই নেই। বরং, তাঁরা রাস্তায় নেমে শাসক দলের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছেন! বুদ্ধবাবুর কথায়, “ওদের সঙ্গে রাস্তাতেই দেখা হবে!”

Advertisement

বিজেপিকে রুখতে নীতীশ কুমার-লালুপ্রসাদ ও কংগ্রেসের বিহার মডেলের প্রশংসা করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এ রাজ্যেও তেমন কোনও সম্ভাবনা ভেবে দেখতে তিনি রাজি। এমনকী, তাঁর চিরশত্রু সিপিএমের দিক থেকেও কোনও প্রস্তাব এলে কথা বলতে কোনও আপত্তি নেই। বিজেপির ভয়ে তৃণমূল নেত্রী শেষ পর্যন্ত বাম-সঙ্গেও রাজি হয়ে গেলেন কি না, তা-ই নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। সিপিএম নেতারা অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তৃণমূলকে তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ বা গণতান্ত্রিক কোনওটাই মনে করছেন না। খাদ্য আন্দোলনের শহিদ দিবসের বাৎসরিক সমাবেশে রবিবার সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু আরও চাঁছাছোলা ভাষায় বলেছেন, “একটা টিভি চ্যানেল বাজারে ছেড়ে দিল তৃণমূলের সঙ্গে আমরা নাকি কথা বলব! উপর থেকে নীচ পর্যন্ত একটা সমাজবিরোধীদের দল! হিংস্র দল। বাংলার সভ্যতা-সংস্কৃতি, সব শেষ করে দিচ্ছে! তাদের সঙ্গে কথা বলবে বামপন্থীরা?” তাঁর আরও মন্তব্য, “ওদের সঙ্গে রাস্তাতেই দেখা হবে। কোনও কথা নয়!” সমাবেশে বিপুল হাততালিও পেয়েছেন বুদ্ধবাবু।

বস্তুত, তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন ধারালো করার জন্য সিপিএমের মধ্যেও এখন নিরন্তর চাপ আসছে। কয়েক দিন আগে রাজ্য কমিটির বৈঠকেই এমন দাবির মুখে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বুঝিয়েছিলেন, সরকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাতে যাওয়ার মতো সাংগঠনিক পরিস্থিতি এখনও নেই। সে দিন রাজ্য সম্পাদকের জবাবি ভাষণের সময় বৈঠক ছেড়ে উঠে গিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। আর এ দিন প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের সমাবেশে বিমানবাবুর উপস্থিতিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনিও চাইছেন আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ুক। বুদ্ধবাবু বলেছেন, “এ বার মুখোমুখি লড়াই। তার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। মানুষকে বুঝিয়ে দিতে হবে, এ ভাবে আর চলতে পারে না!”

Advertisement

বুদ্ধবাবুকে অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “বুদ্ধবাবু নিজে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলেন কবে? তিনি আবার অন্যকে কী রাস্তা দেখাবেন! দলের কর্মীরা যা চাইছেন, সেটা মেনে নিয়ে ওঁর বরং অবসরের রাস্তায় যাওয়া উচিত!” মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর আমলে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-নেতাই বা জঙ্গলমহল, পাহাড়ে অনেক অশান্তি হয়েছে। তাই তাঁর মুখে অন্যদের ‘সমাজবিরোধী’ পাওয়া শোভা পায় না বলেও কটাক্ষ করেছেন পার্থবাবু।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ের কথা বলার পরেই বিমানবাবু অবশ্য এ দিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, “বামফ্রন্টে এই নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। তাই বামফ্রন্টের মত বলতে পারব না। তবে বামফ্রন্টের দলগুলির নেতারাও কেউ তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা চাইছেন না।” স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিমানবাবু হঠাৎ এই কথা বলতে গেলেন কেন, তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরেই কিঞ্চিৎ বিস্ময় দেখা দিয়েছে!

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে না চাইলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এ দিন রাজ্য সরকারকে মূলত নিশানা করেছেন শিল্পের বেহাল দশা এবং কর্মসংস্থানের অভাব নিয়েই। শিল্প-নীতি না থাকলে সিঙ্গাপুর সফরে কী হবে, প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশিই আলু-কাণ্ড নিয়ে বলেছেন, “মিলন মেলা নামটা আমার দেওয়া। তাই শুনলে কেমন লাগে! মিলন মেলার তিনটে ঘরে আলু ভর্তি করেছে! তার পর সেগুলো পচে যেতে ধাপার মাঠে ফেলে দিয়েছে! এ সব কী হচ্ছে? আর কত দিন মানুষ এ সব আলু-পচা দেখবেন?” বুদ্ধবাবুর আগে জয়ন্ত রায়, ক্ষিতি গোস্বামী, প্রবীর দেবের মতো বাম শরিক নেতারা অবশ্য বলেছেন, ট্রেনে-বাসে মানুষ তৃণমূলের ৩৯ মাসের শাসনেই তিতিবিরক্ত। কিন্তু সব মানুষ এখনও প্রতিবাদ করতে বামেদের পাশে আসছেন না। তাই আত্মসমীক্ষা করে আন্দেলনের রাস্তাকেই বেছে নেওয়ার কথা বলেছেন তাঁরা।

ঘটনাচক্রে, কলকাতায় এসে এ দিনই রেল প্রতিমন্ত্রী মনোজ সিংহ বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অবস্থা ভাল হচ্ছে বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তাঁদের কাছে কেউ অচ্ছুৎ নয়। কিন্তু তিনি মানুষের মন বুঝতে পারছেন না। এ রাজ্যের মানুষ পরিবর্তন চাইছেন।” তৃণমূলের সরকারি কর্মচারী সংগঠনের দুই নেতা প্রাণবন্ধু নাগ এবং দেবাশিস শীলও সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন