রজতের কথাতেই চলত সারদা রিয়েলটি: সিবিআই

রিয়েলটি-র ব্যবসাকে সামনে রেখে সারদা গোষ্ঠী বাজার থেকে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছিল বলে আদালতে জানাল সিবিআই। সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত দ্বিতীয় চার্জশিটে তারা আরও জানিয়েছে, যে সংস্থার নামে ওই টাকা তোলা হয়েছিল সেই সারদা রিয়েলটি-র অন্যতম মাথা ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তা তথা তৃণমূলের সহ-সভাপতি রজত মজুমদার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

রিয়েলটি-র ব্যবসাকে সামনে রেখে সারদা গোষ্ঠী বাজার থেকে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছিল বলে আদালতে জানাল সিবিআই। সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত দ্বিতীয় চার্জশিটে তারা আরও জানিয়েছে, যে সংস্থার নামে ওই টাকা তোলা হয়েছিল সেই সারদা রিয়েলটি-র অন্যতম মাথা ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তা তথা তৃণমূলের সহ-সভাপতি রজত মজুমদার।

Advertisement

সোমবার আলিপুর আদালতে সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত দ্বিতীয় চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, রজতবাবু খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি। কার্যত তাঁরই পরামর্শে গোটা রিয়েলটি ব্যবসাটা চলত। রজতবাবু নিজের প্রভাব খাটিয়ে বাজার থেকে যে টাকা তুলেছিলেন তা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরিয়েও ফেলেছিলেন বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের।

সারদা রিয়েলটি ছাড়াও সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, সারদা গার্ডেন রিসর্ট অ্যান্ড হোটেলস এবং সারদা হাউজিং-এর নাম এ দিনের চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। তাতে রজত মজুমদার, সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায় ছাড়াও নাম আছে ব্যবসায়ী সজ্জন অগ্রবাল, তাঁর ছেলে সন্ধির অগ্রবাল, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত ওরফে নিতু সরকার এবং অসমের গায়ক সদানন্দ গগৈয়ের। তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষের নাম অবশ্য এই চার্জশিটে নেই। এমনকী, তদন্ত চলাকালীন যে সব রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর নাম বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে, তাঁদেরও কারও নাম নেই দ্বিতীয় চার্জশিটে।

Advertisement

সিবিআই অধিকর্তা রঞ্জিত সিন্হা জানিয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সারদা-কাণ্ডে জড়িত বলে যদি তাঁরা প্রমাণ পান, তা হলে তাঁদের নামে অবশ্যই চার্জশিট দেওয়া হবে।

সোমবার দেওয়া চার্জশিটের অনেকটাই জুড়ে রয়েছেন রজতবাবু। সিবিআইয়ের অভিযোগ, রাজ্য পুলিশের ডিজি-র পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় যোগ দেন। তখন তাঁর মাসিক বেতন ছিল এক লক্ষ টাকা। পরবর্তী কালে সারদার প্রেসিডেন্ট পদে চাকরি নেওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে যে চুক্তি হয়, সেখানে মাসে সাত লক্ষ টাকা বেতন দেওয়ার কথা লেখা আছে।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, সারদার সঙ্গে রজতবাবুর চুক্তি ছিল, মাসে ১০০ ঘণ্টা, অর্থাৎ দিনে তিন ঘণ্টার কিছু বেশি সময় কাজ করবেন তিনি। এর বেশি কাজ করলে তাঁকে দিতে হবে ঘণ্টাপিছু পাঁচ হাজার টাকা। এ ভাবেই রজতবাবু সারদা থেকে মাসে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা রোজগার করতেন বলে জানিয়েছে সিবিআই।

সারদার রমরমার পিছনে রজতবাবু ছাড়াও নিতু, সজ্জন ও সন্ধিরের ভূমিকা খতিয়ে দেখেছে সিবিআই। চার্জশিটে বলা হয়েছে, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-র কিছু অফিসারের সঙ্গে সুদীপ্ত সেনের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার নাম করে ওই তিন জন সারদা থেকে টাকা নিয়েছেন। সেই যোগাযোগেই বেশ কয়েক বার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে গিয়ে সেবি-র ওই অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সুদীপ্ত। সিবিআই বলেছে, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের স্পনসর হিসেবে ২০১২ সালে সারদার কাছ থেকে দু’কোটি টাকা নিয়েছিলেন নিতু। পরের বছর কোনও চুক্তি ছাড়া আরও দু’কোটি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি গায়ক সদানন্দও বিভিন্ন পুলিশি সমস্যা সমাধানের নাম করে সুদীপ্তর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। ৪২ জন সাক্ষীর বক্তব্য ও চার জনের গোপন জবানবন্দির ভিত্তিতেই ওই চার্জশিট তৈরি করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মামলায় কুণাল, সুদীপ্ত ও দেবযানীর নামে সিবিআই যে প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছিল, আদালতে এ দিনই তার চার্জ গঠনের দিন ছিল। কিন্তু সেই চার্জশিট নিয়ে আইনজীবীরা আপত্তি তোলায় তা পিছিয়ে যায়। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগ, সিবিআই চার্জশিটের যে প্রতিলিপি দিয়েছে তা অসম্পূর্ণ। তার ভিত্তিতে বিচারক অরবিন্দ মিশ্র ওই অভিযোগ লিখিত ভাবে জানানোর নির্দেশ দেন। আগামী ২১ নভেম্বর ফের চার্জ গঠনের দিন ধার্য করা হয়েছে।

সারদা নিয়ে এ দিন হইচই হয় বিধানসভাতেও। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “সারদায় প্রতারিত বেশ কিছু মানুষকে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছে তদন্ত কমিশন। তারা রাজ্যকে এ নিয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে তা সভায় পেশ করা হোক। সদস্যদের আলোচনার সুযোগ দেওয়া অবধি সভা মুলতবি রাখা হোক।” স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সভা মুলতবির প্রস্তাবে সাড়া দেননি। প্রতিবাদে বাম বিধায়কেরা ওয়েলে নেমে স্লোগান দেন। তবে কক্ষত্যাগ হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন