...ডুবিয়ে আমায় স্নিগ্ধ করো। দগ্ধ দুপুরে, আলিপুর চিড়িয়াখানায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
জ্বালা ধরানো গরমে আপাতত ইতি পড়ছে না। আর লু’র দাপট দু’দিন বাদে যদি কমেও যায়, তবু রেহাই মিলবে না। কারণ, প্রবল আর্দ্রতার দৌলতে তখন ঘেমে-নেয়ে একশা হতে হবে। অন্তত এমনই বার্তা দিচ্ছে আলিপুর হাওয়া অফিস।
অর্থাৎ, স্বস্তি দূর অস্ত্। পূর্বাভাস মতো পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে মহানগর কলকাতাও বৃহস্পতিবার লু’য়ে পুড়ে ভাজা-ভাজা হয়েছে। ইতিমধ্যে আলিপুরের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণবঙ্গের উপরে নিম্নচাপ-অক্ষরেখা তৈরির ক্ষীণ ইঙ্গিত মিলছে, যার জেরে রবিবার থেকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়লেও বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে শুকনো তাপের বদলে দিনে-রাতে ভ্যাপসা গরমের অস্বস্তি সইতে হবে। জলীয় বাষ্পের সুবাদের ঝড়-জল কিছু হবে কিনা, আবহবিদদের কাছে সেটাও এ মুহূর্তে স্পষ্ট নয়।
বুধবারের তুলনায় এ দিন মহানগরের গ্রীষ্ম-পরিস্থিতির কোনও উন্নতি তো হয়ইনি, বরং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ০.১ ডিগ্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ সময়ের স্বাভাবিক সর্বোচ্চের চেয়ে ৫ ডিগ্রি বেশি। গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের পাঁচ ডিগ্রি উপরে থাকলেই ‘তাপপ্রবাহ’ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেই হিসেবে বুধবারের মতো এ দিনও শহরে তাপপ্রবাহ বয়েছে। শুকনো গরম বাতাস বা ‘লু’র দাপটে মানুষ নাজেহাল হয়েছেন। বেলা যত গড়িয়েছে, গরম হাওয়ায় চোখে-মুখে জ্বালা ধরেছে। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া-বীরভূমের মতো পশ্চিমাঞ্চলের
জেলায় গরম আরও বেশি। ওই সব তল্লাটে ভরা গ্রীষ্মে লু বয়ে যাওয়াটা অবশ্য স্বাভাবিক। কিন্তু গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এমন শুকনো গরমের প্রাবল্য কিছুটা অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন আবহবিদদের একাংশ। তাঁদের পূর্বাভাস: আজ শুক্রবার, ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিনেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহ বইতে পারে।
এই অবস্থা চলবে কত দিন?
আলিপুরের প্রাথমিক অনুমান, শনিবার পর্যন্ত। রবিবারে পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করলে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে। তখন আবার ঘামের বাড়াবাড়িতে অস্বস্তি বাড়বে। এক আবহবিদের ব্যাখ্যা: বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকলে আকাশ পরিষ্কার থাকে। ফলে রাতের বেলা ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণের হার বেশি হয়। এতে রাতে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমতে পারে। কিন্তু জলীয় বাষ্প বৃদ্ধি পেলে আকাশ মেঘলা হয়ে পড়ে, দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও রাতে ভূপৃষ্ঠের তাপ বেশি বিকিরিত হতে পারে না। “তাই তখন দিনে-রাতে অস্বস্তিকর গুমোট গরম মালুম হবে।” বলছেন আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।
সাধারণত নিম্নচাপ-অক্ষরেখা তৈরি হলে কিংবা বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়লে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে। এ বার তা হলে তেমন পূর্বাভাস নেই কেন?
আবহবিজ্ঞানীদের মতে, বৃষ্টি নামানোর জন্য পরিমণ্ডলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি প্রয়োজন, যা এখন মজুত নেই। উপরন্তু নিম্নচাপ-অক্ষরেখাটি কতটা জোরদার হবে, সেটাও এই মুহূর্তে স্পষ্ট নয়। শুক্রবার বিকেলের পরে এর একটা আন্দাজ মিলতে পারে বলে জানিয়েছেন আলিপুরের এক কর্তা। তাঁর মন্তব্য, “দু’-তিন দিনের মধ্যে জ্বালা ধরানো গরম থেকে হয়তো রেহাই মিলতে পারে। তবে বৃষ্টি-সুখ এখনও অনেক দূরে।”