জবুথবু এই শীতের আমেজ আর মিলবে কি না, সংশয়ে হাওয়া অফিসও।—ফাইল চিত্র।
খেজুরের রস, খেজুর পাটালিতেও ভেজাল ঢোকায় শীতের মজাই মাটি বলে রসিকদের খেদ। আর খোদ শীতপ্রেমিকদের খেদ এ বারের শীতের টালমাটাল চরিত্রের জন্য। থিতু হওয়ার নামগন্ধ নেই। শুধুই ওঠানামা। তাই জুটেছে নানান তকমা ‘ছদ্ম-শীত’, ‘অ-শীত’, ‘কুৎ-শীত’। সব থেকে মানহানিকর ‘নকল শীত’!
ডিসেম্বরের গোড়াতেই মহানগর-সহ দক্ষিণবঙ্গে হাজির হয়েছিল শীত। কিন্তু তার আসল রূপ দেখা যায়নি। মাঝেমধ্যে দিনের বেলায় শীত পড়লেও আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা মোটেই আসল শীত নয়।
প্রশ্ন উঠছে, শীত তো শীতই। তার আবার আসল-নকল কী?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ঠান্ডা পড়লেই বিজ্ঞান তাকে শীত বলে না। প্রকৃত শীতের একটি নির্দিষ্ট রীতি আর নিজস্ব ছন্দ থাকে। কী রকম?
শীতকালে দিনের বেলা আকাশ পরিষ্কার থাকবে। দেখা মিলবে কড়া রোদের। সূর্য অস্ত গেলেই নামতে শুরু করবে পারদ। রাত যত গভীর হবে, বাড়বে হাড়ে কাঁপুনি ধরানো ঠান্ডা। কিন্তু এ বার তা দেখা যায়নি। উল্টে দিনের বেলা তাপমাত্রা কম থাকছে। মিলছে স্যাঁতসেঁতে শীত ভাব। রাতে পারদ নামছে না। তৈরি হচ্ছে গুমোট আবহাওয়া। তাই এটাকে নকল শীত বলছেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা।
আবহবিদদেরই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, শীতের চরিত্রে কি বদল আসছে? কয়েক বছর ধরে বর্ষার চরিত্রে একটা বদল দেখা যাচ্ছে। ইদানীং সেই বদল নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে দিল্লির মৌসম ভবনও। সেই ধাঁচেই কি শীত-চরিত্রে পরিবর্তন?
শীতের চরিত্রে একটা বদল ধরা পড়ছে, মানছেন অনেক আবহবিদ। এ ভাবে শীতের চরিত্রভ্রষ্ট হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণও দেখানো হচ্ছে। এক দল আবহবিদ বলছেন, শীতের চরিত্র-বদলের পিছনে বর্ষার প্রকৃতি-বদলও অনেকাংশে দায়ী। কয়েক বছর ধরেই বর্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে। তার ফলে বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকছে। জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় শীত জাঁকিয়ে বসতে পারছে না। “জাঁকিয়ে শীত পড়তে গেলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমতে হবে,” বলছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী।
হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীদের অন্য একটি অংশ অবশ্য বলছেন, চেনা মেজাজে শীতের চলার পথে মূল বাধাটা হল বঙ্গোপসাগরের বিরূপ মতিগতি। বঙ্গোপসাগরে একের পর এক নিম্নচাপ তৈরি হয়ে শীতের পথে পাঁচিল তুলছে। কী ভাবে?
মৌসম ভবনের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় কখনও দক্ষিণ ভারত থেকে দক্ষিণবঙ্গ পর্যন্ত অক্ষরেখা বিস্তৃত হচ্ছে। আবার কখনও কখনও দক্ষিণ ভারতের নিম্নচাপ চলে আসছে পূর্ব ভারতের দিকে। এই নিম্নচাপ ও অক্ষরেখার হাত ধরে শীতের ভরা মরসুমেও সাগরের জোলো হাওয়া ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গে। মেঘলা আকাশের ফলে দিনের তাপমাত্রা কম থাকছে। রাতে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ মেঘের আস্তরণ ভেদ করে যেতে পারছে না। ফলে রাতে জাঁকিয়ে শীত পড়ছে না। উল্টে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে গুমোট আবহাওয়া।
অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, দু’মাসে চারটি ঘূর্ণিঝড় এবং একটি জোরালো নিম্নচাপের জেরেই অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে রয়ে গিয়েছিল। একটানা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবপুষ্ট ঠান্ডাও সেই জলীয় বাষ্পের দাপট কমাতে পারেনি।
আবহবিদদের কেউ কেউ শীতের চরিত্র-বদলের জন্য দোষী সাব্যস্ত করছেন বিশ্ব উষ্ণায়নকেও। তাঁদের মতে, সাগরের জল একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছলে বা তাপমাত্রা তার চেয়ে বেশি হলেই নিম্নচাপ তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি হয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সাগরজলের তাপমাত্রা বাড়ছে, আবহবিদ ও পরিবেশবিদেরা এ কথা বলছেন বারে বারেই। ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসি-র পঞ্চম রিপোর্টেও তার ইঙ্গিত রয়েছে।
তবে এ-সবের সঙ্গে শীতের সরাসরি সম্পর্ক মেনে নিতে এখনই রাজি নয় মৌসম ভবন। তাদের আবহবিদেরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন বা বর্ষার পিছিয়ে যাওয়া নয়। এ বার যে শীতের দফারফা হয়ে গেল, তার জন্য দায়ী দুর্বল পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। কী ভাবে?
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের বিজ্ঞানীরা জানান, বাংলার কনকনে ঠান্ডার রহস্য লুকিয়ে থাকে উত্তর ভারত কিংবা দার্জিলিং-সিকিমের বরফে। সেখানে বরফ পড়ে জোরালো পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে। সেই বরফের উপর দিয়ে বয়ে আসা উত্তুরে হাওয়াই কনকনে ঠান্ডা নিয়ে আসে বাংলায়। শুরু হয় শৈত্যপ্রবাহ। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, জানুয়ারিতে অন্তত দু’দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়াটাই দক্ষিণবঙ্গের দস্তুর। কলকাতায় না-হোক, শ্রীনিকেতন ও পানাগড়ের তাপমাত্রা কখনও কখনও পাহাড়ি এলাকাকেও হার মানায়! কিন্তু এ বার সেখানে পরিস্থিতিটা কেমন?
হাওয়া অফিসের খবর, বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান-শিল্পাঞ্চলের কিছু এলাকায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলেও কনকনে ঠান্ডার দেখা নেই। আর কলকাতায় শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি বেশি।
তা হলে কি এ বার কনকনে শীত ছাড়াই মরসুম কেটে যাবে?
বাংলার শীতপ্রেমীদের বিশেষ কোনও আশ্বাস দিতে পারছে না আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তাদের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, একটি ঝঞ্ঝা উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে সরে যাচ্ছে। সেটির প্রভাব কেটে গেলে রবিবার রাত থেকেই তাপমাত্রা ফের কমতে শুরু করবে। “কিন্তু উত্তর ভারত কিংবা দার্জিলিং পাহাড়ে বরফ না-পড়লে কনকনে শীতের আশা নেই,” বলছেন গোকুলবাবু।
রাজ্য চেয়ে আরএসএসকে দাবি জিটিএ-র
নিজস্ব সংবাদদাতা • দার্জিলিং
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কাছে দাবি জানানোর পরে এবার পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আরএসএসের কেন্দ্রীয় নেতাকেও স্মারকলিপি দিল জিটিএ। শুক্রবার দার্জিলিঙের গোর্খা রঙ্গ মঞ্চে দিল্লির একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং জিটিএ-এর উদ্যোগে সেমিনারের আয়োজন হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আরএসএসের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ইন্দ্রেশ কুমার। জিটিএ-এর চিফ বিমল গুরুঙ্গের উপস্থিতিতেই জিটিএর তরফে তাঁকে একটি দাবিপত্র তুলে দেওয়া হয়। ইন্দ্রেশবাবু অবশ্য গোর্খাল্যান্ডের নাম উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেন, আপনাদের দাবি অন্যায্য নয়। তবে সেই দাবি পূরণ কবে হবে বা হবে কিনা তা আমি জানি না।”