শিল্প-খতিয়ান দিলেন অমিত, উঠছে প্রশ্নও

গত এক বছরে ২৮ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে রাজ্যে। মঙ্গলবার বিধানসভায় এই তথ্য দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। পরে নবান্নে ফিরে তাঁর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত তিন বছরে (জুন ২০১১ থেকে জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত) আরও ৭৮ হাজার ৯২ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের সংখ্যা ৪৫২। আর এই প্রকল্পগুলি পুরোমাত্রায় কাজ শুরু করলে প্রায় তিন লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু তাঁর এই খতিয়ান নিয়েই উঠেছে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০৩:৩৩
Share:

গত এক বছরে ২৮ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে রাজ্যে। মঙ্গলবার বিধানসভায় এই তথ্য দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। পরে নবান্নে ফিরে তাঁর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত তিন বছরে (জুন ২০১১ থেকে জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত) আরও ৭৮ হাজার ৯২ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের সংখ্যা ৪৫২। আর এই প্রকল্পগুলি পুরোমাত্রায় কাজ শুরু করলে প্রায় তিন লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু তাঁর এই খতিয়ান নিয়েই উঠেছে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন।

Advertisement

অমিতবাবুর দেওয়া তথ্য বলছে, ২৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে ১৫৬টি প্রকল্পে। যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে দেড় লক্ষের। বাকি ২৯৬টি প্রকল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে ৭৮ হাজার কোটি টাকা, যেখানে সরাসরি কাজ পাবেন ১ লক্ষ ৫৫ হাজার লোক।

শিল্পমন্ত্রীর এই সব দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। শিল্পমহলের একাংশ বলছেন, বিনিয়োগের প্রস্তাব আসা থেকে বাস্তবায়নের যাবতীয় কাজ কি শুধুই নতুন সরকারের আমলে হয়েছে? নাকি বহু ক্ষেত্রেই বাম আমলের প্রস্তাবগুলিই এখন পরিণতি দিকে এগনোয় তাকেই এই সরকারের কৃতিত্ব বলে দাবি করা হচ্ছে?

Advertisement

যদিও শিল্পমহলের এই সংশয় উড়িয়ে দিয়েছেন অমিতবাবু। তিনি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উল্লেখ করে বলেছেন, ৭৮ হাজার কোটি টাকার লগ্নি টানার পুরো কৃতিত্বই বর্তমান সরকারের। তিনি জানান, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে রিলায়্যান্স এবং ইমামি গোষ্ঠীর দু’টি সিমেন্ট কারখানায় ১১০০ কোটি, পানাগড়ে ম্যাটিক্সের সার কারখানায় ৫৫০০ কোটি, হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়ামে ৫০০ কোটি, বেঙ্গল শিপইয়ার্ডে ২৫০০ কোটি, গ্রেট ইস্টার্ন এনার্জির কোল্ড বেড মিথেন গ্যাস উত্তোলনে দু’হাজার কোটি টাকা লগ্নি হয়েছে। এ ছাড়াও, বেদান্ত গোষ্ঠীর ‘মান্যবর’ ব্র্যান্ড-এর পোশাক কারখানা, হলদিয়ায় ইন্ডিয়ান অয়েলের কোকার প্ল্যান্ট, রিলায়্যান্সের ফোর-জি প্রযুক্তির বিনিয়োগও অন্যতম বলে দাবি অর্থমন্ত্রীর।

অমিতবাবু বলেন, “অনেক প্রস্তাব জমি আইনের ঊর্ধ্বসীমার ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য আটকে ছিল। নতুন সরকারের মন্ত্রিগোষ্ঠী দ্রুত সেই সব প্রকল্পের ছাড়পত্র দিয়েছে। সেই সূত্রেই রাজ্যে বিপুল বিনিয়োগ এসেছে।” শিল্পমহলের ওই অংশ মনে করে, বাম জমানায় আসা শিল্পের প্রস্তাবগুলি আর্থিক মন্দা-সহ নানা কারণে আটকে ছিল। সেই সব বিলম্বিত প্রকল্পই এখন রূপায়ণের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। কোথাও সবে কাজ শুরু হয়েছে, কোথাও নির্মাণের কাজ শেষ। কোনও প্রকল্প আবার উৎপাদনের পথে।

শিল্পমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যকে ‘অস্পষ্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। এ দিন অধিবেশনের শেষে তিনি বলেন, “কতগুলি শিল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, কোথায় কী বাস্তবায়নের পথে রয়েছে, কতগুলি নিয়ে রাজ্য উদ্যোগী হয়েছে সে সব স্পষ্ট বুঝতে পারিনি। সে জন্য বিধানসভার কার্যবিবরণীর নথি চেয়ে পাঠানো হয়েছে।”

রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র ও তৃণমূলের কল্লোল খান অর্থমন্ত্রীর কাছে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চান। অসিতবাবুর প্রশ্ন ছিল, গত এক বছরে রাজ্য সরকার কতগুলি শিল্প সংক্রান্ত ‘মউ’ (মেমোরান্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) স্বাক্ষর করেছে? জবাবে অমিতবাবু বলেন, “একটিও নয়।” তবে বাম জমানাকে খানিকটা কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ২০০৭, ’০৮ এবং ’০৯ সালে যথাক্রমে সাত, সাত এবং পাঁচটি মউ স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার মধ্যে চারটি বাস্তবায়িত হয়েছিল। কল্লোল খানের প্রশ্ন ছিল, রাজ্যের শিল্প ক্ষেত্রে ‘এক জানলা’ (সিঙ্গল উইন্ডো) পদ্ধতি নিয়ে। এর জবাবে শিল্পমন্ত্রী বিধানসভায় জানান, সরকার ‘শিল্পসাথী’ নামে এক জানলা পদ্ধতি চালু করে লগ্নিবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। যার ফলে, অতি সরলীকৃত ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে আসতে আগ্রহী হয়েছেন।

মউ স্বাক্ষর না করেও কী ভাবে লগ্নি আসছে?

সরকারি সূত্রের খবর, বর্তমান জমানায় মউ স্বাক্ষরের প্রক্রিয়াটিই তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন কোনও লগ্নি প্রস্তাব এলে তা মন্ত্রিসভার কোর কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোর কমিটি প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে করলে সেটি যায় টাস্ক ফোর্সের কাছে।

শিল্পমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, আগে শিল্প গড়ার জন্য ৯৯ পৃষ্ঠার আবেদনপত্র জমা দিতে হত। সেটির সরলীকরণ করার পর এখন পৃষ্ঠাসংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭-এ। এ ছাড়া, শিল্প প্রকল্পগুলি ছাড়পত্র দিতে মন্ত্রিসভার কোর কমিটি পাশাপাশি একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে লগ্নি সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন বণিকসভা ছাড়াও শিল্প গড়তে গেলে যে ৬টি সরকারি দফতরের অনুমতি প্রয়োজন হয়, সেগুলির যুগ্মসচিবদের সদস্য করা হয়েছে। এর পরেও শিল্প নিগম এবং শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন দফতর থেকে শিল্পায়নের সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য রিলেশনশিপ ম্যানেজার রাখা হয়েছে। এই সব ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এখন লগ্নিকারীদের আর অযথা জটিলতায় পড়তে হয় না। সেই কারণেই গত এক বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব আসার পাশাপাশি তিন বছরে ৭৮ হাজার কোটি টাকার লগ্নি বাস্তবায়িত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন