শেষ রবি-প্রচারে মিশল উৎসবের রং

কাঁকুড়গাছি থেকে শুরু করে বেলেঘাটায় বেঙ্গল কেমিক্যালের কারখানার দিকে এগোচ্ছিল বাম প্রার্থী রূপা বাগচীর রোড-শো। মানিকতলা মেন রোডে ঢুকতে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিলটার সঙ্গে হঠাৎ দেখা! কয়েক মুহূর্তের অস্বস্তি।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৪ ০৩:২৮
Share:

কাঁকুড়গাছি থেকে শুরু করে বেলেঘাটায় বেঙ্গল কেমিক্যালের কারখানার দিকে এগোচ্ছিল বাম প্রার্থী রূপা বাগচীর রোড-শো। মানিকতলা মেন রোডে ঢুকতে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিলটার সঙ্গে হঠাৎ দেখা! কয়েক মুহূর্তের অস্বস্তি। তার পরই হেসে হাত নাড়লেন রূপার তারকা প্রচারসঙ্গী সব্যসাচী চক্রবর্তী। দু’পক্ষে অস্বস্তির গুমোট কেটে গেল।

Advertisement

ভোট প্রচারের শেষ রবিবারের সকালে এই দৃশ্যটিই যেন সার্বিক মেজাজটা বেঁধে দিল। সারা দিনের মেনুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত তাবড় রথী-মহারথীর ছড়াছড়ি। প্রচারমঞ্চ থেকে তোপ দাগাদাগির অভাব নেই। তবু রংবেরঙের মিটিং-মিছিলে উৎসবের আবহে চিড় ধরেনি।

শুধু রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাই নন, ছুটির দিনটায় সংস্কৃতি-জগতের বিশিষ্ট জনেরাও দলের হাতিয়ার হয়ে উঠেছেন। সব্যসাচী এসে পৌঁছতেই সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর জন্য কাস্তে হাতুড়ি তারা-মার্কা একটি পেল্লায় হ্যাট এগিয়ে দিলেন। সব্যসাচী প্রথমে বলছিলেন, রোদে তেমন কষ্ট হচ্ছে না। মাথায় চুলও যথেষ্টই। তবু অনুরোধটা রাখতে হল। টুপি মাথায় রাস্তার দু’ধারে হাত নাড়তে নাড়তে এগোলেন।

Advertisement

ভোটপ্রচারের এই শেষ ল্যাপে কলকাতার কপালে আরও একটি শিকে ছিঁড়তে দেখা গেল। বিকেল পাঁচটায় কসবার সমন্বয়ের মাঠে তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে মঞ্চে উঠলেন দেব। ঘাটালে তৃণমূল প্রার্থী দেবের প্রতিদ্বন্দ্বী সন্তোষ রানা, মানস ভুঁইয়ারা যখন দুপুরে-বিকেলে পিংলা-ঘাটালে পরিক্রমা সেরেছেন, দেব তখন যাদবপুরে শাসক দলের প্রার্থী সুগত বসুর জন্য প্রচার করছেন। প্রার্থী নিজে ছিলেন শুধু সোনারপুরের কালিকাপুরে। কিন্তু তাঁর জন্য ভাঙড় আর কসবায় আরও দু’টি সভা করে গেলেন দেব। সভায় জনতার উচ্ছ্বাস কানে তালা ধরিয়ে দিল।

দিনভর এ দিন রোদের তাপও ছিল অপেক্ষাকৃত কম। ফলে দৌড়ঝাঁপের তাগিদটা তাতে আরও বেড়েছিল। অধীর চৌধুরী নওদার অজগ্রামে এ দিন ধুলো মেখে হেঁটে-হেঁটে ঘুরলেন। তৃণমূলের ইন্দ্রনীল সেন শক্তিপুরে রঙিন রোড-শো করলেন। রঙের জেল্লায় লেকটাউনের রাস্তায় দমদম কেন্দ্রের বাম প্রার্থী অসীম দাশগুপ্তের সমর্থনে মিছিলও চোখ টানল। সারিবদ্ধ নারী-বাহিনীর হাতে থার্মোকলের মডেল। তাতে দলের প্রতীক ও প্রার্থীর নামের বর্ণগুলি তুলে ধরা হয়েছে। তৃণমূলের সুদীপবাবু অবশ্য স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কিছুটা বকুনিও খেলেন। সকালে মানিকতলায় ফুলের পাহাড়ে ঢেকে গিয়ে রোড-শো করেছিলেন সুদীপ। দুপুরে নমো-নমো করে ফলাহার সেরেও ম্যারাথন মিটিংয়ের অন্ত নেই! বাধ্য হয়েই রাশ টানলেন নয়না। বললেন, “শেষ রবিবার তো কী, এখন গোটা সপ্তাহটা সুস্থ থাকতে হবে তো? একটু না-জিরোলে শরীরে দেয় কখনও...!”

পোড় খাওয়া সোমেন মিত্র কিন্তু রোড-শোয়ের মধ্যেই জিরিয়ে নেওয়ার অভিনব বন্দোবস্ত করেছেন। ম্যাটাডরে প্রার্থীর দাঁড়ানোর জায়গায় সামান্য উঁচু মঞ্চ করা হয়েছে। তাতে একটা চেয়ার রাখা। রাস্তার দু’ধারে জনতাকে উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কারের ফাঁকে দু’দণ্ড ওই চেয়ারে বসেই বিশ্রাম নিয়েছেন সোমেনবাবু। বিজেপির রাজ্য নেতা রাহুল সিংহের অবশ্য বিশ্রাম মাথায় উঠেছে। সকালে কেন্দ্র-পরিক্রমা, সন্ধেয় উল্টোডাঙার মুচিবাজারে রোড-শোয়ের ফাঁকেও অনবরত গোটা রাজ্যের প্রচার-চিত্রের খোঁজ নিচ্ছেন। কলকাতায় মোদীর আসন্ন সভার প্রস্তুতির খেয়ালও তাঁকেই রাখতে হচ্ছে। রাত আটটায় হাড়োয়ায় প্রচারে ব্যস্ত বসিরহাটের বিজেপিরই প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের মোবাইলের নাগাল মিলতে জানা গেল, তখনও আরও চারটি সভা বাকি প্রার্থীর। রাত ১১টার আগে ছুটি নেই। বক্তৃতারত শমীকবাবুকে ফোন দেওয়া গেল না বলে তাঁর সঙ্গী দলীয় কর্মী মার্জনা চাইলেন। বারাসতের তরুণ কংগ্রেস প্রার্থী ঋজু ঘোষালও শেষ রবিবার ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিতে হিমশিম খেলেন। সকালে কলকাতার দক্ষিণদাঁড়ি, বিকেলে বাদুবাজার, সন্ধেয় কাজীপাড়া, আমতলার পরে দেগঙ্গাতেও মিটিং ফেলা হয়েছিল! ‘‘এক দিনে কলকাতা টু দেগঙ্গা প্রচার হয় কখনও?’’ রণে ভঙ্গ দিলেন ঋজু। দেগঙ্গার সভা পরের দিন পর্যন্ত মুলতুবি থাকল। শেষ রবিবার বলে দিনটা তো আর ২৪ ঘণ্টার বেশি নয়!

কাঁথিতে শিশির অধিকারীর কাছে অবশ্য এই সব শেষ রবিবার-টার বলে আলাদা কিছু নেই। বলছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি না, যেটা হওয়ার সেটা শেষ বেলায় পাল্টে দেওয়া যায়! আমি পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলছি।”

প্রবীণ তৃণমূল প্রার্থী এ দিন সকালে কাঁথি টাউনে প্রচারের পরে পটাশপুরে খান দুয়েক সভা করেছেন। হেসে বললেন, “আমার কেন্দ্রে সারা দিনে মোট ৩০টারও বেশি সভা হয়েছে। ভোটটা আমাদের পুরো মেশিনারি লড়ছে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন