শাসককে দুষে আজ বনধ বিজেপি, বামের

দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টা বসিরহাট মহকুমা বনধের ডাক দিল বিজেপি। হামলার প্রতিবাদে একই দিনে বনধ ডেকেছে সিপিএম-ও। বিজেপির জখম কর্মী-সমর্থকদের দেখতে মঙ্গলবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে এসেছিলেন সন্দেশখালির সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। এ সবের প্রেক্ষিতে সিপিএম-বিজেপি আঁতাত নিয়ে কটাক্ষ করার সুযোগ ছাড়েনি তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০২:৪৩
Share:

দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টা বসিরহাট মহকুমা বনধের ডাক দিল বিজেপি। হামলার প্রতিবাদে একই দিনে বনধ ডেকেছে সিপিএম-ও। বিজেপির জখম কর্মী-সমর্থকদের দেখতে মঙ্গলবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে এসেছিলেন সন্দেশখালির সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। এ সবের প্রেক্ষিতে সিপিএম-বিজেপি আঁতাত নিয়ে কটাক্ষ করার সুযোগ ছাড়েনি তৃণমূল।

Advertisement

শাসক দলের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্দেশখালির হালদারঘেরি পাড়ায় বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকদের উপরে পুলিশের উপস্থিতিতেই বোমা-গুলি নিয়ে পাল্টা হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। হামলায় তাঁদের ২১ জন জখম হন। ১৩ জনকে রাতে আনা হয় এসএসকেএমে। অভিযোগ তোলে তৃণমূলও। তাঁদের দলের চার জন জখম বলে দাবি করেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সন্দেশখালিতে গুলিচালনার অভিযোগও মিথ্যা বলে দাবি তাঁর। মঙ্গলবারের ঘটনায় দু’পক্ষই ২৮ জন করে অভিযুক্তের তালিকা দিয়েছে পুলিশের কাছে। তিন তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সন্দেশখালির ওই এলাকায় বুধবার গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। এলাকা এখন প্রায় পুরুষ-শূন্য। মহিলারা শমীকবাবুর কাছে অভিযোগ জানান, এলাকায় লাগাতার সন্ত্রাসে তাঁরা বরক্ত। শমীকবাবু বলেন, “গ্রামের পরিস্থিতি ভয়াবহ। পুলিশ চলে গেলে ফের আক্রমণের আশঙ্কায় আছেন মানুষ।” সন্দেশখালি ছাড়াও রাজ্য জুড়ে শাসক দল সন্ত্রাস করছে বলে রাজ্য বিজেপির অভিযোগ। প্রতিবাদে আজ সমস্ত থানার সামনে অবস্থানের কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি।

Advertisement

এই অবস্থায় সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে প্রশাসনিক অসহযোগিতার অভিযোগও এনেছে বিজেপি। তদন্তের দাবিতে এ দিনই নবান্নে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে দেখা করে রাজ্য বিজেপি-র এক প্রতিনিধিদল। কিন্তু বিজেপি নেতা অসীম সরকারের অভিযোগ, এ দিন সকাল থেকে বার কুড়ি ফোন করলেও মুখ্যসচিবকে পাওয়া যায়নি। পরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি জানালে সন্ধ্যা ৬টার সময়ে মুখ্যসচিব ফোন করে ৭টার মধ্যে তাঁদের নবান্নে আসতে বলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করার পরে নবান্নের প্রেস কর্নারে সাংবাদিক সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, কলকাতা পুলিশের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। কেন প্রেস কর্নারে সাংবাদিক সম্মেলনের অনুমতি মিলবে না, তা নিয়ে পুলিশ ব্যাখ্যা দেয়নি। অসীমবাবুর দাবি, বিষয়টি মুখ্যসচিবকে জানালে তিনিও বলে দেন, প্রেস কর্নারে কথা না-বলাই ভাল। পরে বিজেপি নেতারা নবান্নে লিফ্টের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

লোকসভা ভোটের নিরিখে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে সিপিএম ক্রমশই কোণঠাসা হচ্ছে। পায়ের তলায় জমি খুঁজে পাচ্ছে বিজেপি। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে শক্তিশালী সরকার বাড়তি মনোবল জুগিয়েছে তাদের। ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে জেলায় জেলায় শাসক দলের হামলায় জেরবার বাম কর্মী-সমর্থকদের একাংশ যোগ দিচ্ছেন বিজেপি-তে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল-বিরোধী ভোটব্যাঙ্কের একটি অংশের বিজেপি-ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার প্রবণতা রুখতে মরিয়া বামেরাও। যে কারণে সন্দেশখালির মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপি-র উপরে হামলার প্রতিবাদে বনধ ডেকে দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব।

এ দিন শমীকবাবুরা ফিরে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী, প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, রেখা গোস্বামী প্রমুখ। সুজনবাবু বলেন, “গ্রামে কে কী দল করে, সেটা বড় কথা নয়। সব দলের মানুষই আছেন এখানে। সকলেই আতঙ্কিত। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেই এসেছি।” বিজেপি-র উপরে আক্রমণে কেন তাঁরা বন্ধ ডাকতে গেলেন? সুজনবাবুর ব্যাখ্যা, “গ্রামে অশান্তির প্রেক্ষিতেই এই বনধ। তা ছাড়া, হামলায় আমাদের দলেরও কয়েক জন জখম।” ঘটনার পরে অবশ্য তেমন দাবি শোনা যায়নি বাম নেতৃত্বের মুখে।

সুযোগ পেয়ে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে বিজেপি এবং সিপিএমকে এক বন্ধনীতে রেখে কটাক্ষ করেছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। তাঁর কথায়,“এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক! এত দিন যাদের সাম্প্রদায়িক বলে নিন্দা করে এসেছে, তাদেরই হাত ধরে চলেছে সিপিএম!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন