বিপ্লব মিত্র। — নিজস্ব চিত্র।
দলের কথা বাইরে না বলার জন্য দলীয় নেতৃত্ব বারবার নেতা-কর্মীদের সতর্ক করছেন। ২৪ ঘণ্টা আগেও নেতাজি ইন্ডোরে দলের সাধারণ পরিষদের সভায় একই আবেদন করেছেন নেতারা। সেই সভা থেকে ফেরার পরেই সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুললেন তৃণমূলের অপসারিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। তাঁকে ‘ষড়যন্ত্র’ করে দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে শনিবার অভিযোগ করেছেন বিপ্লববাবু। নাম না করলেও তাঁর অভিযোগের তির মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী গোষ্ঠীর দিকে। বিপ্লববাবু দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগতেই জেলা জুড়ে তৃণমূল শিবিরে ফের আলোড়ন তৈরি হয়েছে। ভোটের আগে দক্ষিণ দিনাজপুরে নতুন করে গোষ্ঠী-সংঘাতের আশঙ্কা করছেন দলের অনেকেই।
বিপ্লববাবু এবং শঙ্করবাবুর অনুগামীদের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব জেলায় বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। গত মঙ্গলবার বিপ্লববাবুকে জেলা সভপাতির পদ থেকে সরানো হয়েছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় বিপ্লববাবু এ দিন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘যারা যড়যন্ত্র করেছে, তারা দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূল দলটাকে ধ্বংস করতে চাইছে। তাদের সঙ্গে সিপিএম, আরএসপি, বিজেপি-সহ অন্যান্য দলের গোপন যোগাযোগ আছে।’’ তাঁর অভিমত, ‘‘এই জেলাতে যখন তৃণমূল সাফল্যের মুখ দেখছে, তখন অনেকেই আতঙ্কিত। আগামী দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই জেলার ৬টি আসনই দখলে আসবে। সেটা ভেস্তে দিতেই এই ষড়যন্ত্র।’’
মুকুল রায়-ঘনিষ্ঠ বিপ্লববাবুর এই প্রতিক্রিয়ার জেরে জেলা তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, দলনেত্রী মমতা থেকে শুরু করে রাজ্য নেতৃত্ব— সকলেই কি এই ষড়যন্ত্রে সামিল? বিপ্লববাবুর দাবি, ‘‘দিনের পর দিন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলেছে। নেত্রীর কান ভারী করার চেষ্টা হয়েছে। ওরা দেখেছে আমি থাকলে সিপিএম-আরএসপি-র অসুবিধা। তাই এই ঘোষণার পরই বামফ্রন্ট উল্লসিত।’’
শঙ্করবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘এর মধ্যে কোনও ষড়যন্ত্র নেই। এ রকম অভিযোগ কেউ করে থাকলে, তা ঠিক নয়। রাজ্য নেতৃত্ব আমাকে মনোনীত করেছেন।’’ বালুরঘাটের সাংসদ অর্পিতা ঘোষও জানিয়েছেন, রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্তেই শঙ্করবাবুকে সভাপতি করা হয়েছে। গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেন রায় এবং দলের পর্যবেক্ষক অলক দাসের বক্তব্য, দলে এই ধরনের রদবদল নেত্রীর সিদ্ধান্তেই হয়। সত্যেনবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের দলনেত্রী অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ও সচেতন ব্যক্তিত্ব। আমি বিশ্বাস করি, নিজস্ব মতামত ও নিজস্ব সূত্র থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলনেত্রীর সিদ্ধান্তই আমাদের মেনে চলতে হবে।’’