সিটের বিরুদ্ধে আবার তথ্যগোপনের অভিযোগ

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে তথ্য ধামাচাপার অভিযোগ আগেই উঠেছিল রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে। এ বার অন্য বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়েও প্রায় একই অভিযোগ উঠল। রাজ্য পুলিশের তদন্তকারী দল সিট-এর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। তাদের দাবি, সারদা ছাড়া অন্য অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি নিয়ে সিকিভাগ মামলার কথা চেপে গিয়েছে সিট।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০১
Share:

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে তথ্য ধামাচাপার অভিযোগ আগেই উঠেছিল রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে। এ বার অন্য বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়েও প্রায় একই অভিযোগ উঠল। রাজ্য পুলিশের তদন্তকারী দল সিট-এর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। তাদের দাবি, সারদা ছাড়া অন্য অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি নিয়ে সিকিভাগ মামলার কথা চেপে গিয়েছে সিট।

Advertisement

সিবিআই সূত্রে খবর, সম্প্রতি সিট-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকর্তা এডিজি (সিআইডি)-কে চিঠি দিয়ে তারা বলেছে, সারদা ছাড়া অন্য অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিষয়ে এখনও পর্যন্ত ৪৯১টি মামলার তালিকা সিবিআই হাতে পেয়েছে। আদালতের মাধ্যমে এই তালিকা তাদের কাছে পেশ করেছে সিট। কিন্তু মামলার সংখ্যা তার চেয়ে ঢের বেশি বলে সিবিআই জানতে পেরেছে। রাজ্যের বিভিন্ন থানার অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রেই বিষয়টি তাদের কাছে খোলসা হয়েছে।

সিবিআইয়ের অভিযোগ যে ঠিক, পরোক্ষে তা মেনে নিয়েছেন সিট-এর কর্তারা। তাঁদের তরফে যত দ্রুত সম্ভব সিবিআই-এর চিঠির জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সিট-এর এক কর্তার কথায়, “এ রাজ্যের বিভিন্ন থানায় সারদা ছাড়া বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে মামলার সংখ্যা অন্তত ৬৫১টি। এর মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ মামলার কথা সিবিআই-কে দেওয়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে। জেলাস্তরে খোঁজখবর করে এই তথ্য পাওয়ার পর সিবিআইয়ের কাছে নতুন তালিকা পাঠানো হবে। সেই প্রস্তুতি চলছে। ”

Advertisement

বিষয়টি ইচ্ছাকৃত নয় বলেই সিট কর্তাদের দাবি। সূত্রের খবর, প্রধানত চারটি জেলা জলপাইগুড়ি, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের মামলাগুলির ক্ষেত্রে নথি অন্তর্ভুক্ত করতে ভুল হয়েছে। এই মামলাগুলি চলতি বছরেই দায়ের হয়েছে। মে মাসে সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার পরে এই মামলাগুলির তালিকা দিতে গিয়েই ভুলটা হয়ে গিয়েছে।

সিবিআই এ নিয়ে বেশ বিরক্ত। সংস্থার এক কর্তা জানান, সিট-এর কাছ থেকে মামলার তালিকা হাতে পাওয়ার পরে গোড়ায় কোনও গোলমাল বোঝা যায়নি। পরে মামলাগুলির আলাদা আলাদা কেস ডায়েরি সংগ্রহ করার সময়েই ত্রুটিটা চোখে পড়ে। বিভিন্ন থানায় তদন্তকারী অফিসারদের মারফত কেস ডায়েরির নথি সিবিআই-এর হাতে আসে। দেখা যায়, সিট-এর দেওয়া সামগ্রিক তালিকায় বেশ কিছু মামলার উল্লেখই নেই। এই ঘটনাকে নিতান্ত ভুল বলে মনে করছে না সিবিআই। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “সিট-এ প্রতিটি জেলার এসপি রয়েছেন। তা সত্ত্বেও তদন্ত শুরু হওয়ার ছ’মাস পরেও সারদার বাইরে থাকা মামলাগুলির কথা কারও নজরে এল না, এটা মেনে নেওয়া সম্ভব?” তদন্তকারীদের একাংশের মতে, সারদার বাইরে থাকা অন্য অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিকে আড়াল করতেই মামলাগুলি চেপে যাওয়া হয়েছিল।

এই ভুলের জন্য মাসুল দিতে হতে পারে বলে মনে করেন সিট-এর অফিসারদের একাংশ। তাঁদের আশঙ্কা, বিষয়টি কার্যত আদালত অবমাননার সামিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সারদা-সহ অভিযুক্ত অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির যাবতীয় মামলা সিবিআই-কে হস্তান্তর করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল।

সে ক্ষেত্রে এই ধরনের ত্রুটি প্রকাশ আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়তে পারে।

সারদা মামলা হস্তান্তরের পরেই কিন্তু সিবিআই ও সিট-এর মধ্যে চাপান-উতোরের আবহ তৈরি হয়েছিল। সিট তাদের কাছে তথ্য চেপে যাচ্ছে বলে সরব হয়েছিল সিবিআই। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সিবিআই কর্তারা রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেন। তার পরে দু’তরফের সম্পর্ক খানিকটা স্বাভাবিক হয়। এই অবস্থায় ফের সিবিআই-এর পত্রাঘাত নিয়ে রাজ্যের আমলা শিবিরে জল্পনা শুরু হয়েছে।

সিবিআই-কে তথ্য দিতে ত্রুটির সূত্র ধরে এখন সিট-এর কাজের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা শনিবার এ ব্যাপারে গাফিলতির কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর ব্যাখ্যা, সিট গঠন হওয়ার পরে প্রথম দিকে নিয়মিত বৈঠক হত। গত বছর পুজোর পর থেকে এ বছরের মে মাসে সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার মধ্যে সিটের কোনও সমন্বয় বৈঠক হয়নি। সিটের অনেক সদস্যের কাছে আলাদা করে সারদা মামলার বিষয়টি অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। ওই পুলিশকর্তার দাবি, তথ্য নথিবদ্ধ করায় অপেশাদারিত্ব ও গা-ছাড়া ভাবের ফলেই এখন সিবিআই তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন