সেতু বিকল, পৌষমেলা পৌঁছতে হিমশিম

এক দিকে সেতুর প্লেট খুলে যাওয়ায় যেতে হচ্ছে ঘুরপথে। অন্য দিকে নিত্য সমস্যা যানজট। ফলে রাজ্যের নানা প্রান্ত, বিশেষ করে কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায় পৌঁছতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। বুধবার রাতে ভাতারের বড়ার চৌমাথার কাছে বর্ধমান-সিউড়ি রাস্তায় অস্থায়ী সেতুর তিনটি লোহার প্লেট খুলে যাওয়ায় পুলিশ সেতুটি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলা থেকে শান্তিনিকেতনে যেতে গেলে ওই সেতুর ঠিক আগে রাস্তা ছেড়ে গ্রামের ভিতরের রাস্তা ধরে ঘুরে যেতে হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪১
Share:

সেতুতে ওঠার আগেই শিলাকোট গ্রামের রাস্তায় ঢুকে যাচ্ছে গাড়িগুলো। ছবি: উদিত সিংহ।

এক দিকে সেতুর প্লেট খুলে যাওয়ায় যেতে হচ্ছে ঘুরপথে। অন্য দিকে নিত্য সমস্যা যানজট। ফলে রাজ্যের নানা প্রান্ত, বিশেষ করে কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায় পৌঁছতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। বুধবার রাতে ভাতারের বড়ার চৌমাথার কাছে বর্ধমান-সিউড়ি রাস্তায় অস্থায়ী সেতুর তিনটি লোহার প্লেট খুলে যাওয়ায় পুলিশ সেতুটি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলা থেকে শান্তিনিকেতনে যেতে গেলে ওই সেতুর ঠিক আগে রাস্তা ছেড়ে গ্রামের ভিতরের রাস্তা ধরে ঘুরে যেতে হচ্ছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতেই বর্ধমান-সিউড়ি রাস্তা দিয়েই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতার দিকে রওনা দেন। সেতু নড়বড়ে হওয়ায় তাঁকেও গ্রামের মধ্যে দিয়ে ঘুরে যেতে হয়। ওই রাস্তা দিয়ে বর্ধমান থেকে শুধু বীরভূম ও মুর্শিদাবাদেরই প্রায় ৬০টি বাস যাতায়াত করে। বাসযাত্রীদের অভিযোগ, ঘুরপথে যেতে হচ্ছে বলে অনেক সময়েই বাস গুসকরার পরে যেতে চাইছে না। নির্মাণকারী সংস্থা জানায়, সেতুটি সারানোর জন্য ডায়মন্ড হারবার থেকে একটি যন্ত্র আনতে হবে।

বৃহস্পতিবার গুসকরার বাসিন্দা উমাপদ কর্মকার বলেন, “ঘুরপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বাস আর ট্রাক বড়ার চৌমাথা থেকে দেবপুর হয়ে গুসকরা যাচ্ছে, সেখান থেকে সিউড়ি। ছোট গাড়ি শিলাকোট গ্রামের ভিতর দিয়ে গ্রামডিহি মোড়, ওরগ্রাম, রামচন্দ্রপুর হয়ে সিউড়ি রোডে উঠছে। তাতে এলাকার মানুষের তত সমস্যা না হলেও কলকাতা থেকে যাঁরা শান্তিনিকেতনে যাচ্ছেন, তাঁরা বিপাকে পড়ছেন।”

Advertisement

এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে অন্য যে রাস্তা ধরতে পারতেন যাত্রীরা, সেই পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কে পৌঁছতে গেলে আবার অন্য বিপত্তি। কলকাতার দিক থেকে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে গিয়ে পানাগড় পেরিয়ে দার্জিলিং মোড় থেকে ওই রাস্তা ধরা যায়। কিন্তু চার লেনের জাতীয় সড়ক পানাগড় বাজার এলাকায় দু’লেন রয়ে যাওয়ায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। পৌষমেলার গাড়ির চাপে তা কিছুটা হলেও বেড়েছে। ফলে, পর্যটকেরা নির্ঝঞ্ঝাটে শান্তিনিকেতন যাতায়াতের পথ পাচ্ছেন না।

পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, যানজট কমাতে জাতীয় সড়কের চার জায়গায় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের এক আধিকারিক জানান, পৌষমেলার কথা মাথায় রেখে সোমবার থেকেই বাড়তি নিয়ন্ত্রণ চালু করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “গুসকরা হয়ে না গিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে পৌষমেলা যাতায়াত করতে অনেকে স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করেন। তাই প্রতি বছরই এই দিনগুলিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে হয়।” তবে গাড়ির চাপ এত বেশি যে যানজট পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত অসম্ভব, তা-ও মেনে নিচ্ছেন পুলিশকর্তারা।

ঘটনা হল, বর্ধমান-সিউড়ি রাস্তাটি কয়েক বছর আগেই নতুন করে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ভারী ট্রাক যাতায়াতের ফলে গত বছর নভেম্বরেই রাস্তার একটি কালভার্ট ভেঙে পড়ে। সেচ না পূর্ত কোন দফতর সেটি মেরামত করবে তা নিয়ে টানাপড়েনে আর তা মেরামত হয়নি। পরে পূর্ত দফতর সেখানে পরপর দু’টি অস্থায়ী লোহার প্লেট দেওয়া সেতু বসিয়েছে। সেগুলিরই একটির তিনটি প্লেট আলগা হয়ে পড়েছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, সেতুটি মেরামত করে খুলে দিতে কয়েক দিন সময় লাগবে।” কাজেই সমস্যা যে রাতারাতি মিটবে, এমন আশাও নেই।

এ দিন শান্তিনিকেতন থেকে গাড়িতে কলকাতায় ফেরার পথে এক মহিলা পর্যটক বলেন, “পৌষমেলায় যাওয়ার সময়ে তো দিব্যি পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফেরার পথে গুসকরার পরেই গাড়ি ঘুরিয়ে গ্রামের রাস্তায় ঢুকিয়ে দেওয়া হল। অনেক ঘুরে, সময় নষ্ট করে ফের সিউড়ি রোডে উঠতে হচ্ছে।” কিছু পর্যটকের অভিযোগ, গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে কিছু জায়গায় গাড়ি আটকে স্থানীয় কোনও পুজোর নামে চাঁদাও চাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য তা মানতে চাননি। এ ব্যাপারে কেউ নির্দিষ্ট অভিযোগও করেনি বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন