সুদ ছাড়ে মমতার দাবি খারিজ অর্থমন্ত্রীর

অতীতে বামেদের মতোই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার রাজনীতি ইদানীং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম ভোট হাতিয়ার। কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে দেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তৃণমূল সরকারের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিক বৈঠকে আজ চিদম্বরম বলেন, “পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ও পরে আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বহু বার আলোচনা করেছি।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৩
Share:

অতীতে বামেদের মতোই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার রাজনীতি ইদানীং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম ভোট হাতিয়ার। কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে দেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।

Advertisement

তৃণমূল সরকারের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিক বৈঠকে আজ চিদম্বরম বলেন, “পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ও পরে আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বহু বার আলোচনা করেছি। অর্থমন্ত্রী হিসাবে প্রণববাবুর জমানায় পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন তহবিলের আওতায় রাজ্যের জন্য সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। সেই প্রকল্প এখনও চালু রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের দাবি তা নয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাইছে, তাঁদের ঋণের ওপর সুদ মকুব করা হোক। তা সম্ভব নয়।”

কেন সম্ভব নয়? আজ তা-ও সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন চিদম্বরম। বলেন, “সাংবিধানিক ভাবে এমন কোনও ব্যবস্থা নেই যাতে কোনও রাজ্যের ঋণের ওপর সুদ মকুব করা যাবে। দ্বিতীয়ত, তা করলে পঞ্জাব ও কেরলও সেই দাবি জানাবে। দেশের সব রাজ্যের মধ্যে এই তিন রাজ্যই সব থেকে বেশি ঋণগ্রস্ত। বাকিদের ঋণ ব্যবস্থাপনা তুলনায় ভাল। এদের ঋণের ওপর সুদ ছাড় দিলে অন্য রাজ্যগুলিও সুর চড়াতে পারে। তারাও বলতে পারে, এমন সুবিধা আমরা পেলে, নিজেদের রাজ্যের অর্থনৈতিক ও পরিকাঠামোর বিকাশ আমরাও ভাল ভাবে করতে পারতাম।”

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি নিয়ে চিদম্বরমের বক্তব্যের সঙ্গে বিজেপি-র অবস্থানের ফারাকটাও এখন পরিষ্কার। সুদ ছাড়ের দাবি চিদম্বরম খারিজ করে দিলেও, সম্প্রতি কলকাতায় প্রচারে গিয়ে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ বলেন, এ ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের দাবি ন্যায্য। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আসলে বিজেপি নেতারাও জানেন,তাঁরা ক্ষমতায় এলেও মোরাটোরিয়াম দেওয়াটা সম্ভব নয়। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা এও বুঝতে পারছেন, লোকসভা ভোটের পর কেন্দ্রে সরকার গড়তে যদি তৃণমূলের সমর্থন প্রয়োজন হয়, তা হলে আর্থিক প্যাকেজের মতো কিছু একটা অঙ্গীকার করতে হবে। সেই গান আগেভাগেই গেয়ে রেখেছেন রাজনাথ।

অন্য দিকে কংগ্রেসের তাগিদটা অন্য। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, লোকসভা ভোটের পর কী সমীকরণ হবে সেটা পরের কথা। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাই তৃণমূল সম্পর্কে কোনও নরম মনোভাব দেখানো এখন রাজনৈতিক ভাবে সমীচীন হবে না। তাতে রাজ্যে কংগ্রেস কর্মীদের মনোবল আরও ভেঙে যাবে। আর সেই কারণেই, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়ে রাজ্যের সমালোচনা করেন রাহুল গাঁধী। এও জানান, রাজ্যের উন্নয়নের জন্য যে টাকা পাঠাচ্ছে কেন্দ্র, তা ঠিক মতো খরচ করতে পারছে না রাজ্য সরকার।

এই অবস্থায় তৃণমূলের পাল্টা রাজনীতিটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের অধিকার নিয়ে সরব হয়ে মমতার বক্তব্য, এমন নয় যে কংগ্রেস নিজের পকেট থেকে খয়রাতি করছে। যে টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে তা খুবই কম। এবং তা রাজ্যের হকের টাকা। তা ছাড়া কর সহ বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রে ৭২ হাজার কোটি টাকা রাজ্য থেকে আদায় করছে। সেই টাকা হাতে থাকলে রাজ্যে আরও উন্নয়ন করতে পারত তৃণমূল কংগ্রেস সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন