বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার রাতে তাঁদের আবাসনে এসে শাসিয়েছিলেন বলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছিলেন হাওড়ার বাসিন্দা, চিকিৎসক নগেন্দ্র রাই। তাঁর অভিযোগপত্রের জবাবি চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর নজরে এসেছে। বিরোধীরা যেখানে দিস্তে দিস্তে চিঠি পাঠিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর জবাব পান না, সেখানে হাওড়ার চিকিৎসকের কাছে মমতার উত্তর পৌঁছনো তাৎপর্যপূর্ণ বলেই ধরা হচ্ছে। যদিও প্রশ্ন থাকছে, অভিযুক্ত সোনালির বিরুদ্ধে দল বা প্রশাসনিক স্তরে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি?
নগেন্দ্রবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে নিরাপত্তার আশ্বাস চেয়েছিলেন। ডেপুটি স্পিকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকেও পৃথক চিঠি পাঠিয়েছিলেন হাওড়ার গোলাবাড়ি এলাকার সালকিয়া স্কুল রোডের বাসিন্দা নগেন্দ্রবাবু। স্বরাষ্ট্রসচিব এখনও পর্যন্ত সেই চিঠির উত্তর না দিলেও মুখ্যমন্ত্রী সাড়া দিয়েছেন। নগেন্দ্রবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দু’লাইনের চিঠিতে লিখেছেন, তিনি অভিযোগপত্র পেয়েছেন। বিষয়টি তাঁর নজরে এসেছে। সরাসরি ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ অবশ্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে ওই চিকিৎসক বৃহস্পতিবার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠি পেয়ে আমি এবং আমার পরিবার অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছি। অন্তত ঘটনাটা খোদ মুখমন্ত্রীর নজরে রয়েছে বোঝা যাচ্ছে। আশা করছি, এ বার সঠিক বিচার পাব।”
ডেপুটি স্পিকার সোনালি অবশ্য বিষয়টিকে শুধু মুখ্যমন্ত্রীর ‘সৌজন্য’ হিসেবেই দেখাতে চাইছেন। তিনি এ দিন বলেন, “দিদি সকলের মুখ্যমন্ত্রী। কেউ যদি তাঁকে চিঠি দেন, সৌজন্য দেখিয়ে তিনি তার উত্তর দিয়েছেন।” যদিও তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, “এক চিকিৎসকের পাঠানো অভিযোগের জবাব মুখ্যমন্ত্রী লিখে পাঠাচ্ছেন, এর ইঙ্গিত গুরুত্বপূর্ণ। এর পরে উনি কোনও পদক্ষেপ করতে বলেন কি না, নজর রাখতে হবে।” এর আগে গুরুতর অভিযাগে আরাবুল ইসলাম দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও প্রশাসনিক কোনও পদক্ষেপ হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে। আবার সাংসদ তাপস পাল শুধু দলীয় স্তরে ক্ষমা চেয়েই পার পেয়ে গিয়েছেন। তাঁর হয়ে রাজ্য সরকার আদালতে মামলাও লড়েছে। এ সবের জেরে সোনালির ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়ে সংশয় থাকছেই।
চলতি মাসের ১০ তারিখ রাতে হাওড়ার এক আবাসনে তিনতলার ভাড়াটে বেদপ্রকাশ তিওয়ারির সঙ্গে লিফ্ট নিয়ে গোলমাল হয় চার তলার বাসিন্দা নগেন্দ্রবাবুর পরিবারের। অভিযোগ, বেদপ্রকাশ দলবল নিয়ে এসে ওই চিকিৎসক এবং তাঁর ছেলেকে বেধড়ক মারধর করেন এবং তার পরে ফোন করে সোনালিকে ডাকেন। ‘রাখি ভাই’-এর ডাকে রাত দেড়টা নাগাদ পুলিশ ও লোকজন নিয়ে ওই আবাসনের নীচে হাজির হন ডেপুটি স্পিকার। অভিযোগ, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চিকিৎসক ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে শাসান তিনি।
অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ সরাসরি এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু না করে ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। বিচারকের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতে জমা পড়ার কথা। কত দূর এগিয়েছে পুলিশি তদন্ত? পুলিশ সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশ কাজ শুরু করার পরেই প্রথমে নগেন্দ্রবাবুদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি যে ব্যক্তির মোবাইলে সোনালির ভয়েস রেকর্ড হয়েছিল, তা সংগ্রহ করে সেই কণ্ঠস্বর পরীক্ষার জন্য চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই রির্পোট আসার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রের বক্তব্য।
বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম জানাচ্ছেন, ফৌজদারি অপরাধে পুলিশ প্রয়োজনে ডেপুটি স্পিকারকে গ্রেফতার করতেই পারে। পরে তা স্পিকারকে জানিয়ে দিলেই হল। এমনকী, ফৌজদারি অপরাধে স্পিকারেরও ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। হালিমের প্রশ্ন, “কণ্ঠস্বর পরীক্ষা তো পরের কথা। প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই তো পুলিশ চাইলে পদক্ষেপ করতে পারে!”
যদিও সোনালির দাবি, “কারও কথায় তো কিছু হবে না! তথ্যের ভিত্তিতে হবে।” তাঁর বক্তব্য, বিষয়টি এখন আদালতেরই বিচার্য। ডেপুটি স্পিকার এ দিনই পুরী রওনা হয়েছেন। যাওয়ার আগে অভিযোগকারী নগেন্দ্রবাবুর পরিবারকেও বড়দিন ও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন!