মানিকচক

সাবিত্রীর জামাই-সহ ধৃত সাত

বিকেল পাঁচটার মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তার আগেই মানিকচকের ঘটনায় শুক্রবার রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের জামাই সোমদীপ ওরফে টিঙ্কু সরকার-সহ তৃণমূলের চার নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে মানিকচকে কমিশনের কর্মী-অফিসারদের মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “ধৃত চার জনকে আজ, শনিবার আদালতে তোলা হবে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫৭
Share:

থানার পথে সাবিত্রী মিত্রের জামাই সোমদীপ সরকার (ডান দিকে)। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

বিকেল পাঁচটার মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তার আগেই মানিকচকের ঘটনায় শুক্রবার রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের জামাই সোমদীপ ওরফে টিঙ্কু সরকার-সহ তৃণমূলের চার নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে মানিকচকে কমিশনের কর্মী-অফিসারদের মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “ধৃত চার জনকে আজ, শনিবার আদালতে তোলা হবে।”

Advertisement

পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে মানিকচকের ঘটনায় চার মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে রিপোর্ট দিতে বলে নির্বাচন কমিশন। বিকেল পাঁচটার মধ্যে ডিজি-র কাছ থেকে ওই রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল। সেই মোতাবেক চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পরই বিকেল পাঁচটায় পুলিশ সুপার গোটা ঘটনার রিপোর্ট ডিজিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তার পরেই জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদি বলেন, “মূল অভিযুক্ত চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছেও রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।” এই চার জনকে নিয়ে মানিকচকের ঘটনায় মোট সাত তৃণমূল নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

জেলা তৃণমূল সভানেত্রী তথা মন্ত্রী সাবিত্রীদেবীর জামাই টিঙ্কুবাবু অবশ্য ধরা পড়ার আগেই আইনজীবীর মাধ্যমে জেলা দায়রা বিচারকের কাছে আগাম জামিনের আর্জি জানিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর আইনজীবী অমিতাভ মৈত্র জানিয়েছেন, ওই মামলার শুনানি ২৩ এপ্রিল হবে। সে কথা জানাজানি হওয়ার পরেই পুলিশ টিঙ্কুবাবুদের গ্রেফতার করে। তাঁদের ইংরেজবাজার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। টিঙ্কুবাবুর শাশুড়ি মন্ত্রী সাবিত্রীদেবী বলেন, “রাজ্য সরকার যে নিরপেক্ষ, তা আবার প্রমাণ হল। আমার জামাই অভিযুক্ত বলে পুলিশ তাকেও ছাড় দেয়নি। আইন আইনের পথে চলবে। আমরা কোনও হস্তক্ষেপই করব না।”

Advertisement

বৃহস্পতিবার শতাধিক বাইক নিয়ে তৃণমূলের মিছিল আটকাতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের মডেল কোড অব কন্ডাক্ট (এমসিসি) রক্ষায় নিযুক্ত অফিসারেরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের হাতে প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। ভেঙে ফেলা হয়েছিল কমিশনের ক্যামেরাও। অভিযোগ, প্রহৃত হন এমসিসি সেলের ওসি দিলীপ সাহা, ভিডিও টিমের ওসি অজিত দাস এবং তাঁদের এক কর্মী সিদ্ধার্থ মণ্ডল-সহ বেশ কয়েকজন। কমিশনের অফিসার-কর্মীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে মানিকচকের বিডিও সাংগে তাসি ডুগপা মানিকচক থানায় টিঙ্কুবাবু, মানিকচক ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি মুকুলেশ্বর রহমান, জামাল খান ও মতিউর রহমান-সহ প্রায় ৩০-৪০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।

তবে কমিশনের আক্রান্ত কর্মীদের মধ্যে তিন জনের সঙ্গে সিপিএমের যোগসাজশ রয়েছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, “সিদ্ধার্থবাবু বাম আমলে চাকরি পেয়েছিলেন এবং দিলীপবাবু সক্রিয় সিপিএম কর্মী বলে আমরা খবর পেয়েছি। অজিতবাবুও আগে সিপিএম করতেন।” কমিশনের এই তিন কর্মীর সঙ্গে সিপিএমের যোগসূত্রের কারণেই তাঁদের মারধর করা হয়েছে কি না, তার সদুত্তর মেলেনি। কিন্তু তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকেরই দাবি, কমিশনের কর্মীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই গোলমাল পাকিয়েছেন। তবে কমিশনের কর্মীদের মারধর করা ঠিক হয়নি বলে তাঁরা স্বীকার করে নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের পাল্টা বক্তব্য, “তৃণমূল প্রলাপ বকছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্কই নেই।”

তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন এ দিন সাবিত্রীদেবীর কথার প্রতিধ্বনি করে বলেন, “অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়েছে। কারণ আমরা বলছি, আইন আইনের পথে চলবে।” কিন্তু সেই সঙ্গে ডেরেকের দাবি, “মালদহের দুই কেন্দ্রের দুই কংগ্রেস প্রার্থী মৌসম নূর ও আবু হাসেম খান চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকরা যদি বাইক নিয়ে প্রচার করতে পারেন, আমাদের ক্ষেত্রে তা হলে বাধা কেন?” তাঁর দাবি, কমিশনের উচিত বাইক নিয়ে মিছিলের ব্যাপারে সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই সজাগ করা।

মানিকচকের ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন কঠোর মনোভাব দেখানোর পরেই বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য বিপিনবিহারী মণ্ডল, দুই তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী কালু শেখ ও নীলকান্ত সিংহকে গ্রেফতার করে। এ দিন ওই তিন জনকে আদালতে তোলা হলে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অমিতাভ দাস তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে দু’দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন।

এর আগে হাওড়া ও হাবরাতেও আক্রান্ত হয়েছিলেন কমিশনের কর্মীরা। সপ্তাহ খানেক আগে হাওড়ার শিবপুরের কাসুন্দিয়া-শিবতলায় সরকারি বাতিস্তম্ভে এবং সরকারি সম্পত্তিতে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন খুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন নির্বাচন দফতরের এক কর্মী। তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় তিন জন তৃণমূূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। আরও তিন তৃণমূল নেতাকে পুলিশ ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। হাবড়া-২ ব্লকের কিছু এলাকাতেও সরকারি সম্পত্তি থেকে তৃণমূলের ব্যানর-ফেস্টুন খুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিডিও দীনবন্ধু গায়েনের সঙ্গে অশোকনগরের বিধায়ক ধীমান রায় ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে গোলমাল হয়। বিডিও-র অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ১৫ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করে। এই ঘটনার পরেই নির্বাচন কমিশন জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলকে সরিয়ে দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন