সীমান্তের নদীনালায় এ বার সিঙ্গাপুরি বেড়া

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নদীনালা ও জলা এলাকাতেও এ বার বেড়া দিতে চায় ভারত সরকার। এই বিশেষ ধরনের বেড়ার জন্য সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রক সূত্রের খবর, সমুদ্র-সৈকতে এক বিশেষ ধরনের বেড়া দিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকাতে সফল হয়েছে দ্বীপ-রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর।

Advertisement

দিবাকর রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৮
Share:

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নদীনালা ও জলা এলাকাতেও এ বার বেড়া দিতে চায় ভারত সরকার। এই বিশেষ ধরনের বেড়ার জন্য সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

Advertisement

মন্ত্রক সূত্রের খবর, সমুদ্র-সৈকতে এক বিশেষ ধরনের বেড়া দিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকাতে সফল হয়েছে দ্বীপ-রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। ২০০৩ সালে পুলাউ উবিন সমুদ্র সৈকতে এই লম্বা প্রাচীর তৈরি করা হয়। অনুপ্রবেশকারীদের নৌকা যাতে কোনও ভাবেই সিঙ্গাপুরের তটে ভিড়তে না পারে, সে জন্য জলে ডোবা প্রাচীরের সঙ্গে ভাসমান ড্রামের দেওয়ালও বসানো হয়। সিঙ্গাপুর দিল্লিকে জানিয়েছে দৃষ্টিকটু লাগলেও অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রুখতে এই বেড়া খুবই কার্যকর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও মনে করছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের যে সব জায়গায় জলের কারণে কাঁটাতারের বেড়া থমকে গিয়েছে, সেখানে এই ‘সিঙ্গাপুরি প্রাচীর’ বসাতে পারলে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধের কাজ অনেক সহজ হবে।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৩৯০৯ কিলোমিটার। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম এই আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৩৩২৬ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ। কাজ চলছে আরও ৮০ কিলোমিটার সীমান্তে। এ জন্য কয়েক দফায় মোট ৪০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এ বার বাকি ৫০৩ কিলোমিটার বেড়ার কাজ শেষ করতে হবে এই সরকারকে। কিন্তু, এত দিন বেড়া তৈরি হয়েছে ডাঙায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজিজুর দাবি, “সীমান্তের যে অংশে বেড়ার কাজ বাকি রয়েছে, তার বেশির ভাগটাই নদীনালা ও জলাভূমি। সেখানে বেড়া বসাতে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” আসলে বহু জায়গায় নদী ও জলাভূমিই দু’দেশের সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। সেখানে কাঁটাতারের বেড়া বসানো কঠিন। আবার ডাঙায় বেড়া পড়লেও নদী ও জলা পথে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালানের সুযোগ থেকেই যায়। এই সমস্যা মেটাতেই মোদী সরকার সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছে।

Advertisement

সম্প্রতি বিএসএফের এক অনুষ্ঠানে সদ্য-প্রাক্তন সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নেচল সান্ধু বলেন, “আমাদের একটা ‘ইন্টিগ্রেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ প্রয়োজন। সীমান্তে বেড়া দেওয়াটা তারই একটি অঙ্গ। পাশাপাশি, সেন্সরও বসানো হচ্ছে সীমান্তে। নিকটতম সীমান্ত চৌকিতে পৌঁছবে সেন্সরের তথ্য।” সান্ধু পরে ফোনে জানান, নদীনালার কারণে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় যে ফাঁক তৈরি হচ্ছে, তা বোধহয় সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা দিয়েই পূরণ করা সম্ভব। সিঙ্গাপুরের সৈকতে ওই বিশেষ ধরনের বেড়া যথেষ্ট কার্যকর হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের আদলে সীমান্তের জলা জায়গায় বেড়া বসানোর কাজ যে বেশ কঠিন, তা মানছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সুরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডাঙায় কাঁটাতারের বেড়া বসানোর যা খরচ, এ ক্ষেত্রে খরচ তার দ্বিগুণ। কিন্তু কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির পরামর্শ, ব্যয়বহুল হলেও তা করা হোক। কারণ দেশের সুরক্ষা সবার আগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন