সারদার টাকাতেই হোটেল বিলাস মদনদের

পাঁচতারা হোটেলটির স্যুইটের এক-এক দিনের ভাড়া ৪০ হাজার টাকা। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অফিসারদের নজর এখন বাইপাসের ধারের ওই হোটেলটিতে। অভিযোগ, একটা সময় দিনের পর দিন ওই হোটেলে ঢালাও যাতায়াত ছিল তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীর। এবং ঘর ভাড়া থেকে শুরু করে তাঁদের খানাপিনা, সব খরচই মেটানো হতো সারদার তহবিল থেকে। বুধবার হোটেল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে ইডি সূত্রের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৪
Share:

পাঁচতারা হোটেলটির স্যুইটের এক-এক দিনের ভাড়া ৪০ হাজার টাকা। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অফিসারদের নজর এখন বাইপাসের ধারের ওই হোটেলটিতে।

Advertisement

অভিযোগ, একটা সময় দিনের পর দিন ওই হোটেলে ঢালাও যাতায়াত ছিল তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীর। এবং ঘর ভাড়া থেকে শুরু করে তাঁদের খানাপিনা, সব খরচই মেটানো হতো সারদার তহবিল থেকে। বুধবার হোটেল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে ইডি সূত্রের দাবি।

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন ওই হোটেলটির সিনিয়র ম্যানেজারকে জেরা করে ইডি জেনেছে, রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, সাংসদ কুণাল ঘোষ, প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদাররা প্রায়ই হোটেলে আসতেন। স্যুইটে থাকতেন। সঙ্গে থাকত এলাহি খাবারদাবারের আয়োজন। কুণাল মাঝেমধ্যে ওই হোটেলে প্রাতরাশও করে যেতেন বলে হোটেল সূত্রে দাবি। হোটেলের কর্মীরা জানিয়েছেন, তৃণমূলের এক সর্বভারতীয় নেতাও এসে বহু বার থেকেছেন। হোটেলের রেকর্ড ঘেঁটে তদন্তকারীরা দেখেছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বুকিং হয়েছে ওই সব নেতার নামে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বুকিং করা হয়েছে সারদার নামেও। তবে বুকিং যে নামেই থাক, হোটেলের বিল মেটানো হয়েছে সারদার তহবিল থেকে। কিছুটা নগদে, কিছুটা চেকে।

Advertisement

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, এমন কোনও ঘটনা দলের গোচরে নেই। তাঁর কথায়, “দল এর সঙ্গে জড়িত নয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য নানা প্রচার চালানো হচ্ছে।”

তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ ইডি-কে জানিয়েছেন, মন্ত্রী ও নেতাদের হয়ে প্রায়ই ওই হোটেলে ঘর বুক করতেন বিধাননগর কমিশনারেটের এক উচ্চপদস্থ অফিসার। তিনি সরাসরি হোটেলে ফোন করে মন্ত্রীদের ঘর দিতে বলতেন বলে অভিযোগ। ওই অফিসারের কাছেও বিস্তারিত জানতে চাইবেন তদন্তকারীরা। ইডি-র এক অফিসারের দাবি, “সারদার টাকায় তৃণমূল নেতারা যে এই পাঁচতারা হোটেলে ফুর্তি করতেন, তার অনেক প্রমাণ মিলেছে।” তিনি জানাচ্ছেন, ওই নেতারা অনেক সময়ে হোটেলে রাত কাটিয়ে সকালে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। আবার সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে আসতেন। সঙ্গে আসতেন অনেক লোকজনও।

বুধবার সল্টলেকের ইডি অফিস থেকে বেরিয়ে পাঁচতারা হোটেলের ওই প্রতিনিধি চিন্ময় সেনগুপ্তও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, কুণাল-মদন মাঝেমধ্যেই আসতেন হোটেলে। তদন্তকারীদের অনুমান, সল্টলেকের এই হোটেল ছাড়াও শহরের অন্য পাঁচতারা হোটেলেও এ ধরনের ‘আসর’ বসতো। ওই সব হোটেলের কাছ থেকেও তথ্য চাওয়া হবে বলে ইডি সূত্রের খবর।

সারদার কোন সংস্থার নামে হোটেলের বিল মেটানো হতো? ইডি অফিসারদের জেরায় হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে সারদার বিভিন্ন সংস্থার নামে চেক দেওয়া হয়েছে। সারদার টাকায় কোন নেতা কবে, কত দিন হোটেলে ছিলেন এবং তাঁদের জন্য কত টাকার বিল মেটানো হয়েছে, হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে ইডি। জানা গিয়েছে, ২০১২-এর ডিসেম্বরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ব্রাজিলের প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী একাদশের মধ্যে যে প্রদর্শনী ম্যাচ হয়েছিল, সেখানে শেষ মুহূর্তে টাকার অভাব দেখা দেয়। তখন আসরে নামেন মদন মিত্র। ইডি সূত্রের খবর, সেই সময়ে ব্রাজিলীয় ফুটবলারদের থাকার খরচও মিটিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, নেতা-মন্ত্রীরা কখনওই হোটেলের খাতায় নিজেরা সই করতেন না। সই করতেন সারদার কোনও অফিসার। বেশির ভাগ সময়ে আমোদ শেষ করে হোটেল থেকে তাঁরা বেরনোর আগেই সারদার কোনও কর্মী এসে বিল মিটিয়ে দিতেন। এ ভাবে ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই হোটেলকেই সুদীপ্ত সেন কয়েক কোটি টাকা দিয়েছেন বলে ইডি সূত্রের দাবি। এমনকী, বিল বাবদ এখনও সারদার কাছ থেকে তাঁদের ২০ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে বলে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ওই টাকা পাওয়ার আগেই গ্রেফতার হয়ে যান সুদীপ্ত সেন। হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৃণমূলের একাংশের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, এক জনের নামে

ঘর বুক হল আর অন্য কেউ বিল মেটাল এমন বন্দোবস্ত মেনে নেওয়া হয়েছিল কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন