সারদায় লাভ কাদের, জানতে জেরা দিনভর

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে লাভবান কারা, রাজ্য সরকারের কাছে বারে বারেই তা জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের বেঁধে দেওয়া সেই অভিমুখ ধরে এগিয়ে এই কেলেঙ্কারিতে ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী’ ব্যক্তিরা জড়িত বলেই এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। কারা সেই প্রভাবশালী, মঙ্গলবার সারদা-প্রধান সুদীপ্ত সেন, তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে দফায় দফায় জেরা তাঁদের সন্ধান শুরু করে দিল সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০৩:৩৫
Share:

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে লাভবান কারা, রাজ্য সরকারের কাছে বারে বারেই তা জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের বেঁধে দেওয়া সেই অভিমুখ ধরে এগিয়ে এই কেলেঙ্কারিতে ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী’ ব্যক্তিরা জড়িত বলেই এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। কারা সেই প্রভাবশালী, মঙ্গলবার সারদা-প্রধান সুদীপ্ত সেন, তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে দফায় দফায় জেরা তাঁদের সন্ধান শুরু করে দিল সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দল।

Advertisement

সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার সারা দিন ছয় অভিযুক্তকে জেরা করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে। তবে সেই সব তথ্য কী, তদন্তের স্বার্থেই তা জানানো হয়নি।

আলিপুর আদালতের নির্দেশে সোমবারেই সারদা কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়া ছ’জন অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ওই রাতেই তাঁদের এক প্রস্ত জেরা করেন তদন্তকারীরা। রাতে তাঁদের রাখা হয় সল্টলেকের দু’টি এবং নিউ টাউনের একটি থানায়। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টায় মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত, কুণাল ছাড়াও দেবযানী মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ দত্ত, মনোজ নাগেল ও অরবিন্দ চৌহানকে নিয়ে আসা হয় সল্টলেকে সিবিআইয়ের কার্যালয়ে। সেখানে আলাদা আলাদা ঘরে ছ’জনকে জেরা শুরু করে তদন্তকারীদের ছ’টি দল।

Advertisement

সিবিআই সূত্রের খবর, কী ভাবে সারদার ব্যবসার এতটা বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল, ওই সংস্থার কর্ণধার এবং অন্য কর্তাদের জেরা করে তা জানার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। কোটি কোটি টাকার এই কেলেঙ্কারির পিছনে প্রভাবশালী কোনও কোনও নেতা-মন্ত্রী ও সরকারি আমলা জড়িত বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। ছয় অভিযুক্তকে জেরা করে সেই সব নেতা-মন্ত্রী-আমলার নাম জানারও চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা।

সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তা জানান, সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার সারা দিন জেরা করে অভিযুক্তদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। তদন্তকারীরা জানান, তাঁদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জুগিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কুণাল। এই কেলেঙ্কারির পিছনে যে অত্যন্ত প্রভাবশালী বেশ কয়েক জন যুক্ত, তা-ও সিবিআইকে জানিয়েছেন তিনি। সিবিআইয়ের খবর, কুণালের বক্তব্য ঠিক কি না, সুদীপ্ত ও দেবযানী, সোমনাথদের কাছ থেকে তা যাচাই করার চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে ওই তিন অভিযুক্তকে কুণালের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে বলে তদন্তকারীরা এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সন্ধ্যায় সুদীপ্তের আইনজীবী নরেশ বালোটিয়া এবং মনোজ, অরবিন্দ ও দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই দফতরে যান। বেরিয়ে যাওয়ার মুখে তাঁরা জানান, তাঁদের মক্কেলরা ভাল আছেন। সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা তাঁদের সঙ্গে ভাল ব্যবহারও করছেন।

তদন্ত সংস্থা সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের চা-বিস্কুট ছাড়াও দুপুরে নিরামিষ খাবার দেওয়া হয়েছে। দেবযানীকে সিবিআই দফতরে নিয়ে যাওয়ার আগে নিউ টাউন থানায় ধোসাও খাওয়ানো হয় বলে তাঁর আইনজীবীরা জানান। দিনভর জেরা পর্বের পরে ছ’জনকে ফের তিনটি থানার লক-আপে নিয়ে যাওয়া হয়। থানার লক-আপ হলেও অভিযুক্তদের দেখভাল ও নজরদারি নিজেদের হাতে রেখেছে সিবিআই। এমনকী ধৃতেরা জল চাইলেও পুলিশকর্মীরা তা দিচ্ছেন সিবিআইয়ের অনুমতি নিয়েই।

আগেই ডায়মন্ড হারবার রোডে সারদার অফিসে অসংখ্য সংস্থাকে ঢালাও লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন কলকাতা পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়। এ দিনও তিনি সল্টলেকে সিবিআইয়ের দফতরে গিয়ে কিছু অভিযোগ জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন