সুশীল-হত্যায় আট জনের যাবজ্জীবন

চিকিৎসক সুশীল পাল হত্যায় দোষী সাব্যস্ত ১২ জনের মধ্যে আট জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাবাসের নির্দেশ দিল আদালত। দোষী আরও চার জনের সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছে। মঙ্গলবার হাওড়ার জেলা জজ তন্ময় গুপ্ত ওই নির্দেশ দেন। সোমবার ১২ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সুশীল পালকে ষড়যন্ত্র করে খুন ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে বিশ্বজ্যোতি বসু, পিয়ালি দাস মণ্ডল, অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রহ্লাদ সরকার, শুভনারায়ণ ঘোষ, সন্তোষ অগ্রবাল, সুরেন্দ্রকুমার অগ্রবাল ও মুমতাজ আহমেদ খানের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫১
Share:

আদালত কক্ষের বাইরে পিয়ালি। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসক সুশীল পাল হত্যায় দোষী সাব্যস্ত ১২ জনের মধ্যে আট জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাবাসের নির্দেশ দিল আদালত। দোষী আরও চার জনের সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছে। মঙ্গলবার হাওড়ার জেলা জজ তন্ময় গুপ্ত ওই নির্দেশ দেন। সোমবার ১২ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

Advertisement

সুশীল পালকে ষড়যন্ত্র করে খুন ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে বিশ্বজ্যোতি বসু, পিয়ালি দাস মণ্ডল, অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রহ্লাদ সরকার, শুভনারায়ণ ঘোষ, সন্তোষ অগ্রবাল, সুরেন্দ্রকুমার অগ্রবাল ও মুমতাজ আহমেদ খানের। খুনের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের দায়ে সাত বছর কারাবাসের নির্দেশ হয়েছে বিশ্বনাথ কংসবণিক, রাজীব নাথ, জয়ন্ত ঘোষ এবং চন্দন ডোম ওরফে গব্বরের।

সিআইডি জানায়, ২০০৪-এর ২ জুলাই বালির একটি নার্সিংহোমে খুন হন শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের চিকিৎসক সুশীল পাল। পরদিন সাঁকরাইলে একটি খালে তাঁর দেহ মেলে। মৃতদেহে ২৩টির বেশি ক্ষতচিহ্ন ছিল।

Advertisement

এ দিন বেলা ১টা ১০ মিনিটে জেলা জজ শাস্তি ঘোষণা করতে এজলাসে ওঠেন। আদালত কক্ষের ভিতরে-বাইরে তখন উপচে পড়া ভিড়। দোষীদের নিরাপত্তায় হাওড়া সিটি পুলিশের বড় বাহিনীও মোতায়েন ছিল। আদালত কক্ষের এক কোণে বসেছিলেন সুশীল পালের স্ত্রী কণিকা পালও। এ দিন তাঁর দুই মেয়ে আদালতে আসেননি।

খুনের দায়ে দোষী পিয়ালি, বিশ্বজ্যোতি-সহ আট জনকে একে একে কাঠগড়ায় তুলতে বলেন বিচারক। দোষীদের জানান, তাঁদের শাস্তি হয় মৃত্যুদণ্ড, নয় যাবজ্জীবন কারাবাস। দোষীদের কিছু বলার থাকলে আদালতে তা জানাতে নির্দেশ দেন তিনি। দোষীরা প্রত্যেকেই জানান, তাঁরা নির্দোষ।

পিয়ালি আদালতে বলেন, “আমার ছোট একটি মেয়ে রয়েছে। আমার শাস্তি হলে তাকে দেখাশোনার কেউ থাকবে না। ঘটনার সময়ে আমি ওই নার্সিংহোমেই ছিলাম না। অন্য একটি নার্সিংহোমে ছিলাম। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন পিয়ালি।

বিশ্বজ্যোতি বিচারককে জানান, ভাড়াবাড়িতে তাঁর মা, স্ত্রী, ছেলে থাকেন। তিনি শাস্তি পেলে তাঁদের দেখার কেউ থাকবে না। বিশ্বজ্যোতি বলেন, “আমি সুশীল পালকে চিনতামই না। ওই নার্সিংহোমেও যেতাম না। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমি নির্দোষ।” বাকিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।

তথ্যপ্রমাণ লোপাটের দায়ে দোষী চার জনকে কাঠগড়ায় তুলেও তাঁদের বক্তব্য জানাতে নির্দেশ দেন বিচারক। প্রত্যেকেই জানান, তাঁরা নির্দোষ।

আধ ঘণ্টা পরে ফের এজলাসে ওঠেন বিচারক। প্রথমে খুনে যুক্ত থাকার দায়ে আট জনকে যাবজ্জীবন কারাবাস ও দশ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন। পরে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের দায়ে সাত বছর কারাবাস ও দু’ হাজার টাকা জরিমানা করেন। শাস্তি শুনে দোষী ১২ জনই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কণিকাদেবী বলেন, “বিচারকের রায়ে আমি খুশি। বিচারব্যবস্থার প্রতি বরাবরই আস্থা ছিল। এই রায়ে আমার স্বামীর আত্মা শান্তি পাবে।” তবে, দোষীদের আইনজীবীরা এ দিন জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন