সফির শেষ যাত্রায় বন্ধুকৃত্য বিমানদের

লোকসভা ভোটের আগে অসুস্থ শরীরেই বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে আলিমুদ্দিনে গিয়েছিলেন তিনি। তখন খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁর প্রস্তাব। মৃত্যুর পরে এ বার সেই সৈফুদ্দিন চৌধুরীর জন্যই বন্ধুকৃত্য করতে এল আলিমুদ্দিন! মারণ-রোগের সঙ্গে যুদ্ধে সফির অবস্থা সঙ্গীন হচ্ছে খবর পাওয়ার পর থেকেই আনাগোনা বাড়িয়েছিলেন তাঁর প্রাক্তন দল সিপিএমের নেতারা। মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরে দিল্লির হাসপাতালে গিয়েছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১২
Share:

সৈফুদ্দিনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিমান বসু। মঙ্গলবার পিডিএস দফতরে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

লোকসভা ভোটের আগে অসুস্থ শরীরেই বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে আলিমুদ্দিনে গিয়েছিলেন তিনি। তখন খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁর প্রস্তাব। মৃত্যুর পরে এ বার সেই সৈফুদ্দিন চৌধুরীর জন্যই বন্ধুকৃত্য করতে এল আলিমুদ্দিন!

Advertisement

মারণ-রোগের সঙ্গে যুদ্ধে সফির অবস্থা সঙ্গীন হচ্ছে খবর পাওয়ার পর থেকেই আনাগোনা বাড়িয়েছিলেন তাঁর প্রাক্তন দল সিপিএমের নেতারা। মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরে দিল্লির হাসপাতালে গিয়েছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও। সফির শেষকৃত্যের দিন কোনও ব্যবধান রাখলেন না বিমান বসুরাও। মৌলালিতে সফির দল পিডিএসের দফতর ঘুরে মঙ্গলবার প্রাক্তন সাংসদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হল সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের দফতরেও। দলের সঙ্গে সম্পর্ক চুকে যাওয়ার পরে সিপিএমের কোনও নেতার ক্ষেত্রে যা সচরাচর ঘটে না!

দিল্লির হাসপাতালে রবিবার রাতে প্রয়াত হয়েছিলেন সফি। তাঁর মরদেহ সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরে নামিয়ে মধ্য কলকাতার ‘পিস হেভনে’ রাখা পর্যন্ত সহযোগিতার দায়িত্বে ছিলেন নেপালদেব ভট্টাচার্য-সহ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের নেতারা। ওই সংরক্ষণাগার থেকেই এ দিন সকালে পিডিএস দফতরে প্রায় আড়াই ঘণ্টার জন্য আনা হয়েছিল প্রয়াত সফিকে। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু, রাজ্য নেতা রবীন দেব, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের জয়ন্ত রায়, আরসিপিআইয়ের মিহির বাইনের মতো সব বাম শরিক দলের নেতারা। রাজ্য সরকারের তরফে শ্রদ্ধা জানিয়ে যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। ‘সৎ, আদর্শনিষ্ঠ ও সজ্জন’ রাজনীতিক সফির কথাই বলেছেন পার্থবাবু। এসএফআই, ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য দফতর দীনেশ মুজমদার ভবনে সফিকে শ্রদ্ধা জানান সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা শ্যামল চক্রবর্তী। সঙ্গে ছিলেন সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের যুব ও ছাত্র সংগঠনের গোটা রাজ্য নেতৃত্ব।

Advertisement

কয়েক মাস আগে সফির প্রস্তাব যে তাঁরা মেনে নেননি, এ দিন পিডিএস দফতরে রাখা শোকবার্তা লেখার খাতাতে তা নিজেই লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন বিমানবাবু। লিখেছেন, ‘দলের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে নানা রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। লোকসভা ভোটের আগে আমাদের কাছে জোটের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। তবে তা যে সম্ভব নয়, তা আমরা জানিয়ে দিয়েছিলাম’। পরে বিমানবাবু এ-ও বলেছেন, “সফির সঙ্গে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটেছিল। কিন্তু ওঁর অতীত গৌরব তাতে ম্লান হয়ে যায় না!” শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে শ্যামলবাবু স্মরণ করেছেন সাংসদ হিসাবে সফির ভূমিকার কথা। তাঁর কথায়, “বিশেষত শাহ বানু মামলার সময় সংসদে সফির ভূমিকা ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে।” শ্রদ্ধা জানাতে সশরীর হাজির হতে না পারলেও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির আর এক সদস্য গৌতম দেবেরও বক্তব্য, “সাধারণ জায়গা থেকে লড়াই করে উঠেছিলেন সফি। সোমনাথদা (চট্টোপাধ্যায়) আর ওঁর দক্ষ সাংসদ হয়ে ওঠার মধ্যে এই জায়গায় ফারাক আছে!”

ডিওয়াইএফআই দফতর থেকেই সোজা বর্ধমানের মেমারির দিকে পাড়ি দেয় সফির শবযাত্রা। সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন সাংসদের স্ত্রী রুখসানা, দুই ছেলে, তাঁর অকৃত্রিম বন্ধু তথা পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ড ও তাঁর সহধর্মিনী অনুরাধা দেব। মেমারির ইছাপুর গ্রামে পারিবারিক সমাধিস্থলে সম্পন্ন হয়েছে সফির শেষকৃত্য।

এই গোটা পর্বে সামনে এসে দেখা দেননি শুধু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, তাঁর অত্যন্ত স্নেহভাজন ও বন্ধুস্থানীয় সফির যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ দেখতে চাননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন