নেতাই গণহত্যা

হাইকোর্টে গিয়েও ধৃতদের হাতে পেল না সিবিআই

নেতাইয়ের গণহত্যায় ধৃতদের সিবিআইয়ের হেফাজতে রাখার আবেদন নিম্ন আদালতে আগেই খারিজ হয়ে গিয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টও ওই অভিযুক্তদের সিবিআইয়ের হাতে ছাড়ল না। জেরা করার জন্য ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বৃহস্পতিবার তাদের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০২:৫০
Share:

নেতাইয়ের গণহত্যায় ধৃতদের সিবিআইয়ের হেফাজতে রাখার আবেদন নিম্ন আদালতে আগেই খারিজ হয়ে গিয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টও ওই অভিযুক্তদের সিবিআইয়ের হাতে ছাড়ল না। জেরা করার জন্য ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বৃহস্পতিবার তাদের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।

Advertisement

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি, বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড়-নেতাইয়ে সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির সশস্ত্র শিবির থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় চার মহিলা-সহ ন’জন গ্রামবাসী নিহত হন। আহত হন ২৮ জন। প্রথমে সিআইডি সেই ঘটনার তদন্ত করলেও পরে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার নেয় সিবিআই। ২০১১-র এপ্রিলে ২০ জনের নামে আদালতে চার্জশিটও দেয় তারা। তাতে অভিযুক্ত ২০ জনের মধ্যে আট জনকে ফেরার দেখানো হয়।

অভিযুক্ত ২০ জনের মধ্যে ১২ জন আগেই ধরা পড়েছিলেন। ফেরার ছিলেন আট জন। এ বার লোকসভা ভোটের আগে সিআইডি-র স্পেশ্যাল সুপার (এসএস) ভারতী ঘোষের নেতৃত্বে এক দল গোয়েন্দা হায়দরাবাদ থেকে পাঁচ পলাতক অভিযুক্ত ডালিম পাণ্ডে, জয়দেব গিরি, মহম্মদ খলিলুদ্দিন, তপন দে ও রথীন দণ্ডপাটকে গ্রেফতার করে। তার কয়েক দিন পরে অন্যতম অভিযুক্ত অনুজ পাণ্ডেকে ঝাড়খণ্ড থেকে এবং অন্য অভিযুক্ত চণ্ডী করণকে হুগলির চণ্ডীতলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সব মিলিয়ে এই দফায় ধরা পড়েন পলাতক সাত জন। চার্জশিটে অভিযুক্ত ২০ জনের মধ্যে ১৯ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ফুল্লরা মণ্ডল নামে এক অভিযুক্ত এখনও ফেরার।

Advertisement

সদ্য ধৃত সাত জনকে নিজেদের হেফাজতে রাখার জন্য সিবিআই প্রথমে ঝাড়গ্রাম নিম্ন আদালতে আবেদন জানিয়েছিল। নিম্ন আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। ঝাড়গ্রাম আদালতের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি আবেদন করে হাইকোর্টে।

সিবিআইয়ের অভিযোগ, ধৃতদের হেফাজতে নিতে চেয়ে নিম্ন আদালতে তারা যে-আবেদন করেছিল, রাজ্য সরকারের তরফে তার বিরোধিতা করা হয়। এমনকী ধৃতেরা সিআইডি-র হেফাজতে থাকার সময় তাঁদের জেরাও করতে দেওয়া হয়নি সিবিআই-কে। অথচ নেতাই গণহত্যার তদন্তে ওই

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে সাহায্য করার কথা ছিল রাজ্য পুলিশ এবং সিআইডি-র। সেই অনুসারে রাজ্য পুলিশ, সিআইডি এবং সিবিআইয়ের অফিসারদের নিয়ে একটি বিশেষ তদন্তকারী দলও গঠন করা হয়। দলটি একযোগে তদন্তের কাজ করবে বলেই ঠিক হয়েছিল। কিন্তু সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০১১ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নেতাই কাণ্ডে রাজ্য পুলিশ বা সিআইডি, কেউই তাদের তদন্তে সাহায্য করছে না। এমনকী ফেরারদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও রাজ্য পুলিশ তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি।

ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ধৃতদের কোনও রকম জেরা করতে না-পারায় তদন্ত এখনও তিমিরেই রয়েছে। নতুন কোনও তথ্য জোগাড় করতে পারেনি তারা। সিবিআইয়ের আইনজীবী মহম্মদ আসরাফ আলি বলেন, “সেই জন্যই ধৃতদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আমরা হাইকোর্টে আবেদন করেছি।”

সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এ দিন বলেন, এই মামলায় ঝাড়গ্রাম নিম্ন আদালতের নির্দেশই বহাল থাকবে। তিনি জানান, এই মামলায় ধৃতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়ে গিয়েছে। বিচারের শুনানিও শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় সিবিআই যদি ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেয়, তা হলে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে দেরি হতে পারে। তাই ধৃতদের সিবিআইয়ের হেফাজতে দেওয়া যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন