কলকাতা থেকে রেজিস্টার্ড পোস্টে হাজার চারেক টাকার দু’টি চেক খামে ভরে হাওড়ার কদমতলায় পাঠিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী। তবে হাওড়ায় না গিয়ে সেই খাম চলে যায় সোজা পটনা। কিন্তু সেখানে খামের ভিতর মেলেনি চেক দু’টি। অভিযোগ, ওই দু’টি চেক জাল করে রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কের আমদাবাদ শাখা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে আট লক্ষেরও বেশি টাকা!
ঘটনাটি দেড় বছর আগের। বোধিসত্ত্ব বন্দ্যোপাধ্যায় নামে হাওড়ার ওই ব্যবসায়ী ডাকঘর, ব্যাঙ্ক, লালবাজার-সহ নানা জায়গায় ঘোরাঘুরি করেও টাকা ফেরত পাননি। কলকাতার গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের কমার্স হাউসে বোধিসত্ত্ববাবুর অফিস রয়েছে। টাকা ফেরত না পেয়ে তিনি ব্যাঙ্কশাল আদালতের দ্বারস্থ হন। ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট (২) বিশ্বনাথ প্রামাণিক বৌবাজার থানার ওসি-কে দিন কয়েক আগে নির্দেশ দেন অবিলম্বে জালিয়াতির তদন্ত শুরু করে তাঁর কাছে রিপোর্ট জমা দিতে।
হাওড়ার দাশনগরে ফাউন্ড্রি কারখানা বোধিসত্ত্ববাবুর। গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের অফিস ঘরের মাসিক ভাড়া বাবদ কদমতলার বাড়িওয়ালির কাছে তিনি চেকে টাকা পাঠান গত বছর ফেব্রুয়ারিতে। তাঁর আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র জানান, চেক দু’টি কদমতলায় পৌঁছয়নি জানতে পেরে ডাকঘরে যোগাযোগ করা হয়। পরে জানা যায়, চেক দু’টি যে খামে পাঠানো হয়, সেটি পটনা পৌঁছেছে। তবে তাতে চেক নেই। ডাকঘর-কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, খোঁজ মিলছে না খামের। আইনজীবী জানিয়েছেন, যে ব্যাঙ্কে ওই ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তারই আমদাবাদের আমরেলি শাখা থেকে ভাঙানো হয় চেক দু’টি। ওই ব্যাঙ্কের বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট শাখায় (যেখানে ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট রয়েছে) খোঁজ করে জানা যায়, চন্দননগরের বাসিন্দা জনৈক সোনাদেবী ও নিউ টাউনের জনৈক রাজীব কুমারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৃথক দু’টি চেকের মাধ্যমে যথাক্রমে ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার এবং ৪ লক্ষ ১০ হাজার টাকা জমা পড়েছে।
ব্যবসায়ীর অভিযোগ, যাঁদের অ্যাকাউন্টে ওই চেক জমা পড়েছে, তাঁদের নাম, অ্যাকাউন্ট নম্বর পুলিশকে দেড় বছর আগে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। লালবাজারের এক গোয়েন্দা-কর্তার অবশ্য দাবি, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই ঘটনায় ডাকঘর এবং ব্যাঙ্কের লোকজন জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। যে কায়দায় চেক জালিয়াতি করে টাকা তোলা হয়েছে, তা কোনও পাকা মাথার কাজ। তাঁর দাবি, শীঘ্রই ধরা পড়বে জালিয়াতেরা।