হাতির গ্রামে পর্যটন, উদ্যোগী বন দফতর

বুনো হাতিদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নন ঝাড়গ্রামের বরাশুলি গ্রামের বাসিন্দারা। বরং জঙ্গলের হাতির সঙ্গে বছরভর সহাবস্থানের দিনযাপনকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে তাঁদের ভরসা হাতিঠাকুর। সম্প্রতি রাজ্যের বনমন্ত্রী নিজে হাতিঠাকুর দর্শন করে গিয়েছেন। এ বার সেই হাতি গ্রামে ‘হোম স্টে ট্যুরিজম’ চালু করতে উদ্যোগী হল বন দফতর।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭
Share:

পর্যটকদের জন্য সেজে উঠবে বরাশুলি গ্রাম (বাঁ দিকে)। ইতিমধ্যে সংস্কার হয়েছে হাতিদিঘির (ডান দিকে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

বুনো হাতিদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নন ঝাড়গ্রামের বরাশুলি গ্রামের বাসিন্দারা। বরং জঙ্গলের হাতির সঙ্গে বছরভর সহাবস্থানের দিনযাপনকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে তাঁদের ভরসা হাতিঠাকুর। সম্প্রতি রাজ্যের বনমন্ত্রী নিজে হাতিঠাকুর দর্শন করে গিয়েছেন। এ বার সেই হাতি গ্রামে ‘হোম স্টে ট্যুরিজম’ চালু করতে উদ্যোগী হল বন দফতর।

Advertisement

বন দফতর মনে করছে যাঁরা অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে বরাশুলিই হয়ে উঠবে আদর্শ জায়গা। বন দফতর সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের মধ্যে বরাশুলিতে হোম স্টে ট্যুরিজম প্রকল্পটি চালু হবে। প্রকল্পটি চালু হলে ঘন শাল জঙ্গলে-ঘেরা বরাশুলি গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকা ছাড়াও স্থানীয় খাবার-দাবার ও জীবনযাত্রার এক অনন্য স্বাদ পাবেন পর্যটকেরা। বুনো হাতি দেখার সুযোগও মিলতে পারে। কেরল, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশের মতো একাধিক রাজ্যে ‘হোম ট্যুরিজম’ রীতিমতো জনপ্রিয়। এ রাজ্যের উত্তরবঙ্গেও ‘হোম ট্যুরিজম’-এর ব্যবস্থা রয়েছে। এ বার তালিকায় ঢুকতে চলেছে ঝাড়গ্রামের হাতির গ্রাম।

ঝাড়গ্রামের ডিএফও (মেদিনীপুরেরও দায়িত্বে রয়েছেন তিনি) বিজয় সালিমঠ বলেন, “বরাশুলি গ্রামে হোম স্টে ট্যুরিজম চালু করার জন্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। গ্রামবাসীরা খুবই আগ্রহী। প্রকল্প রূপায়ণে কিছুটা সময় লাগবে।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাশুলি গ্রামে হোম ট্যুরিজম চালু করার আগে গ্রামবাসীর জীবন জীবিকার মানোন্নয়ন ও গ্রামের পরিকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি মৎস্য দফতরের সহযোগিতায় গ্রামের হাতি দিঘিতে আড়াই কুইন্ট্যাল মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে। মাছ বিক্রির লভ্যাংশ পাবেন বন সুরক্ষা কমিটিভুক্ত গ্রামবাসীরা। এ ছাড়া আইএপি প্রকল্পে ২২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই টাকায় গ্রামের হাতি দিঘির চারপাশে ১০টি মাছধরার জায়গা (ফিশিং প্ল্যাটফর্ম), বসার জন্য ৬টি সুদৃশ্য কংক্রিটের বেঞ্চ, দু’টি স্নানের ঘাট তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামের মোরাম রাস্তাটির সংস্কার করা হবে। সেচের জন্য একটি গভীর নলকুপ বসানো হবে। ওই গভীর নলকুপ থেকে পানীয় জলও পাবেন বাসিন্দারা। কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।

Advertisement

১৯৯৮ সালে বরাশুলির জঙ্গলে এক সঙ্গিনী হাতির সঙ্গলাভের জন্য দু’টি পুরুষ হাতির মধ্যে ধুন্ধুমার লড়াই বেধেছিল। প্রায় আঠারো ঘন্টা লড়াইয়ের পরে একটি পুরুষ হাতির মৃত্যু হয়। সেই মৃত হাতির স্মরণে স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা ২০০১ সালে গ্রামের হাতি দিঘির ধারে সিমেন্টের তৈরি হাতির মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বছর থেকেই হাতিঠাকুরের বার্ষিক পুজো ও মেলা শুরু হয়। প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর বরাশুলি গ্রামের হাতি মেলা দেখতে আসেন দূর দূরান্তের মানুষ। এবার বনমন্ত্রী বিজয়কৃষ্ণ বর্মন হাতি মেলায় এসে আপ্লুত হয়েছিলেন। তখনই মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যভুক্ত বাসিন্দাদের মানোন্নয়নে তাঁর দফতর উদ্যোগী হবে। এক বন কর্তার বক্তব্য, “প্রকল্পটি চালু হলে বাসিন্দারা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। যাঁরা অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে বরাশুলিই হয়ে উঠবে আদর্শ জায়গা।”

স্থানীয় বাসিন্দা পরমেশ্বর মাহাতো, ধনঞ্জয় মাহাতো, মিহির মাহাতো, তমাল মাহাতো-র বক্তব্য, “গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলে সারা বছরই তিন-চারটি স্থানীয় হাতি ঘোরাফেরা করে। দলমার হাতির পালও মরশুমে এই এলাকা দিয়েই যায়। জঙ্গলের বুনো হাতিরা আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। হাতি ঠাকুর আছেন বলে ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক ভাবে কম হয় বলে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের গাঁয়ে পর্যটকেরা বেড়াতে ও থাকতে এলে বিকল্প রোজগারের বন্দোবস্ত হবে। গ্রামের সবাই লাভবান হবেন।” হাতিঠাকুরের কল্যাণে সেই দিন বদলের স্বপ্নই দেখছেন বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন