একটি দল বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে।
অন্য একটি দল কেন্দ্রেই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে এখন ঠাঁই পেয়েছে বিরোধী আসনে।
বিজেপি এবং কংগ্রেস।
এ বার নির্বাচন কমিশনের কোপের মুখে পড়েছে দু’টি বড় দলই। ভোটে খরচের হিসেব না-দেওয়ায় স্বীকৃতি বাতিলের মতো শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে বলে শুধু বিজেপি বা কংগ্রেস নয়, দেশের আরও ১২টি দলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কমিশন।
লোকসভা হোক বা বিধানসভা, সব ভোটেই প্রচার-সহ সামগ্রিক খরচের সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। নির্বাচন পর্বের শেষে সেই খরচের খতিয়ান দাখিল করাটাই কমিশনের নিয়ম। কিন্তু ভোট মিটে যাওয়ার দীর্ঘদিন পরেও বিধি মেনে সেই খরচের হিসেব দেওয়ার নামগন্ধ নেই। শাসক বিজেপি, বিরোধী কংগ্রেস-সহ মোট ১৪টি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে নির্বাচন কমিশন। নতুন করে ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে তারা ২৮ নভেম্বর ওই সব দলের কাছে নোটিস পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনী খরচের সবিস্তার হিসেব দাখিল না-করলে দলগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু হবে।
প্রার্থীদের জেতাতে নির্বাচনী প্রচারে ঢালাও টাকা খরচ করেছে বিভিন্ন দল। কমিশনের বক্তব্য, সব দলকেই ২২ অক্টোবর চিঠি দিয়ে খরচের হিসেব দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রায় কোনও দলই সেই নির্দেশ মানেনি। এই অবস্থায় স্বীকৃতি বাতিলের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। অভিযুক্ত দলগুলির কাছে নোটিস পাঠিয়ে তারা বলেছে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি বাতিল বা সাসপেন্ড করার অধিকার কমিশনের রয়েছে। কমিশনের ১৯৬৮ সালে জারি করা আদেশনামার ১৬এ ধারায় এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে।
শুধু কংগ্রেস বা বিজেপি নয়, অভিযুক্তের তালিকায় সমাজবাদী দল, অসম গণ-সংগ্রাম পরিষদ, আম-আদমি পার্টির নামও আছে। মূলত গত বছরের লোকসভা নির্বাচন এবং অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভা ভোটে খরচের হিসেব নিয়েই কমিশনের এই হুঁশিয়ারি। কমিশনের এক মুখপাত্র জানান, নিয়মবিধি অনুযায়ী লোকসভা নির্বাচনের ৯০ দিন এবং বিধানসভা ভোটের ৭৫ দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী খরচখরচার হিসেব দাখিল করার কথা। কিন্তু লোকসভার গত নির্বাচন এবং চারটি রাজ্যে বিধানসভা ভোটের শেষে নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ওই দলগুলি এখনও কমিশনের কাছে খরচের হিসেব পেশ করেনি।
২৮ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলির সভাপতি বা কোষাধ্যক্ষদের কাছে কমিশন যে-নোটিস পাঠিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে দীর্ঘদিন কেটে গেলেও আপনার দল এখনও খরচের কোনও হিসেব দাখিল করেনি। এটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গত ২২ অক্টোবর চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কোনও সাড়া মেলেনি। হিসেব দাখিল করার জন্য এ বার চূড়ান্ত সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই নোটিস হাতে পাওয়ার পক্ষকালের মধ্যে হিসেব দাখিল করতেই হবে। নইলে নির্দিষ্ট ধারা মেনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ধীরেন্দ্র ওঝা বুধবার দিল্লিতে বলেন, “১৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ১৫ দিন সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের বলা হয়েছে, এর মধ্যে কোনও দল হিসেব না-দিলে কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।”
হিসেব না-দিলে প্রার্থী বা দলের কী ধরনের শাস্তি হতে পারে?
কমিশনের এক কর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী ভোটের পরে প্রার্থী এবং স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলিকে পৃথক পৃথক ভাবে খরচের হিসেব পেশ করতে হয়। নিয়ম না-মানলে প্রার্থীদের ছ’বছর পর্যন্ত সাসপেন্ড করা যেতে পারে। সাসপেন্ড মানে ওই প্রার্থী পরবর্তী ছ’বছর আর নির্বাচনে দাঁড়াতেই পারবেন না। রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে স্বীকৃতি বাতিলের সুযোগ রয়েছে কমিশনের। স্বীকৃতি বাতিল মানে জাতীয় বা রাজ্য স্তরের দল হিসেবে কমিশনের দ্বারা সংরক্ষিত প্রতীক হাতছাড়া হয়ে যাবে।