২০ বছরে জ্বলুনিতে নজির কলকাতার

গ্রীষ্মের ময়দানে যেন টি টুয়েন্টি ম্যাচ চলছে। স্লগ ওভারে ব্যাটিং করছে সূর্যদেব! রবি-সোমবার আকাশে যদিও বা একটু আধটু মেঘ ছিল, মঙ্গলবারের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে সেটুকুও উধাও! ফলে এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা লাফিয়ে উঠল ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত বিশ বছরের নথিপত্র হাতড়ে গ্রীষ্মের কলকাতায় যার চেয়ে বেশি তাপমাত্রার নজির আলিপুর খুঁজে পাচ্ছে না!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০২:৫৪
Share:

গ্রীষ্মের ময়দানে যেন টি টুয়েন্টি ম্যাচ চলছে। স্লগ ওভারে ব্যাটিং করছে সূর্যদেব! রবি-সোমবার আকাশে যদিও বা একটু আধটু মেঘ ছিল, মঙ্গলবারের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে সেটুকুও উধাও! ফলে এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা লাফিয়ে উঠল ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত বিশ বছরের নথিপত্র হাতড়ে গ্রীষ্মের কলকাতায় যার চেয়ে বেশি তাপমাত্রার নজির আলিপুর খুঁজে পাচ্ছে না!

Advertisement

গত কুড়ি বছরের রেকর্ডটি ছিল ২০১৪-রই ১২ মের দখলে, যে দিন কিনা কলকাতায় থার্মোমিটারের পারা ৪১.৪ ডিগ্রি ছোঁয়। আবহবিদেরা মনে করেছিলেন, কলকাতার পক্ষে এ-ই যথেষ্ট, চলতি গ্রীষ্মে আর হয়তো কলকাতা ৪১ ডিগ্রিতে পৌঁছবে না। তা অবশ্য হয়নি। ১৬ মে উঠেছিল ৪১.১ ডিগ্রি। আর এ দিন সেই গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতা তৈরি করল দু’দশকের রেকর্ড। প্রসঙ্গত, আলিপুর হাওয়া অফিসে সংরক্ষিত নথি অনুযায়ী মে মাসের কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ পর্যন্ত ৪৩.৩ ডিগ্রি। সেটা অবশ্য ষাট বছর আগের ঘটনা। দিনটা ছিল ১৯৫৪-র ২৫ মে।

শুধু তা-ই নয়, এ বারের গরম নানা বিচারে ব্যতিক্রমী। যেমন, গত ন’দিনে সাত দিনই কলকাতা তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে। এমনটা শেষ কবে ঘটেছে, আবহবিদেরা তা মনে করতে পারছেন না। এ বার এপ্রিলেও টানা চার দিন শহরে তাপপ্রবাহ চলেছে। মে’র প্রথম সপ্তাহে টানা তিন দিন। আলিপুরের বিজ্ঞানীরা খাতাপত্র খুলে দেখেছেন, ১৯৭৯-এর এপ্রিল-মে মাসে দক্ষিণবঙ্গে মোট ১৭ দিন তাপপ্রবাহ চললেও তার আওতায় কলকাতা পড়েনি। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর বা বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে এপ্রিল-মে মিলিয়ে দিন সাতেক তাপপ্রবাহ স্বাভাবিক। কিন্তু এ বার কলকাতাতেও তাপপ্রবাহের এ হেন রমরমা আবহবিদদের রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে। “কলকাতায় এই সময়টায় আর্দ্রতার বাড়াবাড়িতে ঘেমে-নেয়ে একশা হওয়াটাই ছিল দস্তুর। এ বার আর্দ্রতা আর শুকনো বাতাসে দড়ি টানাটানি চলছে। এটা অস্বাভাবিক।” মন্তব্য এক আবহবিদের।

Advertisement

দড়ি টানাটানির দৃষ্টান্তও দিচ্ছেন তাঁরা। কী রকম?

গত তিন দিনের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, গত শনি ও রবিবার অত্যধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতার সুবাদে মহানগরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াতে পারেনি। সোমবার শুকনো তপ্ত হাওয়া ঢুকে ৪০ ডিগ্রি পার করে দেয়। এ দিন শুখা গরম আরও জাঁকিয়ে বসায় জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, লু বইতে শুরু করেছে। আলিপুরের বার্তা: আজ, বুধবার শুকনো বাতাসের প্রভাব কমলে ফের আর্দ্রতা বাড়বে, সঙ্গে অস্বস্তিও। নচেৎ আবার লু’র জন্য কলকাতাবাসীকে তৈরি থাকতে হবে।

মার্চ থেকে মে’র এই কুড়ি তারিখের মধ্যে কলকাতায় অন্তত সাতটা কালবৈশাখীর আছড়ে পড়ার কথা। সে জায়গায় জুটেছে সাকুল্যে একটা। এ মরসুমে মহানগরের কপালে কালবৈশাখী আদৌ আর জুটবে কি না, আবহবিদেরা তা বলতে অপারগ। ওঁদের বক্তব্য, কালবৈশাখী আর না-এলে দহনজ্বালা জুুড়ানোর জন্য নগরবাসীকে প্রাক বর্ষার বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা ছাড়া গতি নেই। এ দিকে মৌসুমি বায়ুর চরিত্র এখনও অস্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে না, বর্ষা দক্ষিণবঙ্গে ঢুকবে ঠিক কবে। যাত্রাপথে বিলম্বের সম্ভাবনাও প্রবল। তাই প্রাক বর্ষার বৃষ্টির আগমন নির্ঘণ্টও অনিশ্চিত। অর্থাৎ, দুর্ভোগে দাঁড়ি পড়ার আশু কোনও ইঙ্গিত নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন