কাবুলে জোড়া বিস্ফোরণ, দশ সাংবাদিক-সহ হত ২৯

প্রথম বিস্ফোরণের পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন সংবাদ সংস্থা এএফপি-র চিত্র সাংবাদিক শাহ মারাই। তাঁর কাছাকাছি টিভি ক্যামেরাম্যান সেজে হাজির হয় এক আত্মঘাতী বোমারু। তার পরেই দ্বিতীয় বিস্ফোরণ। আর উঠতে পারেননি মারাই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাবুল শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ০৪:২১
Share:

আক্রমণ: দ্বিতীয় বিস্ফোরণের কয়েক মুহূর্ত পরে। সোমবার কাবুলে। রয়টার্স

সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই ফের জোড়া বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুলের মাটি।

Advertisement

প্রথম বিস্ফোরণের পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন সংবাদ সংস্থা এএফপি-র চিত্র সাংবাদিক শাহ মারাই। তাঁর কাছাকাছি টিভি ক্যামেরাম্যান সেজে হাজির হয় এক আত্মঘাতী বোমারু। তার পরেই দ্বিতীয় বিস্ফোরণ। আর উঠতে পারেননি মারাই। সোমবারের দুই বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ২৯। মারাই ছাড়াও নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আরও ন’জন সাংবাদিক। আছেন চার পুলিশ অফিসারও। তাদের মুখপত্র আমাক-এ জো়ড়া বিস্ফোরণের দায় নিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।

এ দিন স্থানীয় সময় সকাল আটটা নাগাদ কাবুলের শাশদারক এলাকায় মোটরবাইকে এসে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটায় এক জঙ্গি। ওই এলাকায় আফগানিস্তানের গোয়েন্দা দফতর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, ন্যাটো এবং আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাস রয়েছে। তাই বিস্ফোরণের খবর আসতেই এক ঝাঁক সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিক ছুটে যান সেখানে। আধ ঘণ্টার মধ্যেই ফের বিস্ফোরণ। একেবারে প্রথম বিস্ফোরণের জায়গাতেই। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পরেরটি আরও শক্তিশালী ছিল। সাংবাদিক, পুলিশ থেকে শুরু করে উদ্ধারকর্মী— ছিটকে যান সকলেই। অন্তত ৪৯ জন আহত হন। অল্প আঘাত পেয়েছেন রয়টার্স সংবাদ সংস্থার এক চিত্র সাংবাদিক।

Advertisement

আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, গোয়েন্দা বিভাগের সদর দফতরই ছিল জঙ্গিদের লক্ষ্য। মন্ত্রকের মুখপাত্র নজীব দানিশ জানিয়েছেন, যে জঙ্গি ক্যামেরাম্যান সেজে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটায়, তার কাছে প্রেস কার্ডও ছিল। সাংবাদিকদের জটলার মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছিল সে। চিত্র-সাংবাদিক মারাইকে হারিয়ে এএফপি সংস্থা টুইটারে জানিয়েছে, ‘‘কাবুল অফিসের সব সাহসী কর্মী এবং আমাদের সবার কাছে এটা বিরাট আঘাত। শাহ মারাই সংস্থার মূল্যবান সম্পদ ছিলেন। আমাদের জন্য ১৫ বছরেরও বেশি সময় সন্ত্রাস-দীর্ণ আফগানিস্তানের ছবি ক্যামেরায় ধরে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি।’’

মারাইয়ের ছয় ছেলেমেয়ে। এক কন্যা সবে পৃথিবীর আলো দেখেছে। ২০১৬ সালের লেখা ‘হোয়েন হোপ ইজ গন’ নামে এক প্রবন্ধে মারাই লিখেছিলেন, ‘‘বাচ্চাদের নিয়ে কখনও হাঁটতে যাই না। ওরা সবাই ঘরে এক রকম বন্দি। প্রতিদিন সকালে অফিস যাই, আবার ফিরে আসি। গোটা সময়টা গাড়ি দেখলেই মনে হয়, বোমাঠাসা নেই তো? কখনও ভাবি, ভিড় থেকে আত্মঘাতী জঙ্গি বেরিয়ে আসবে না তো? ঝুঁকি নিতে পারব না!’’ সেই আত্মঘাতী জঙ্গিই কেড়ে নিল মারাইকে!

এ দিন আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশে আর একটি হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি-র এক প্রতিবেদক। আফগানিস্তানে কর্মরত সাংবাদিকরা বলছেন, সোমবারটা কালো দিন হয়ে রইল তাঁদের কাছে।

প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি কাবুলের জোড়া বিস্ফোরণের নিন্দায় এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘মসজিদে প্রার্থনা করতে আসা সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান— এ সব কিছুর উপরে যারা আঘাত করে, তারা যুদ্ধাপরাধী।’’ হামলার সমালোচনা করেছেন আফগানিস্তানে মার্কিন দূত জন বাসও।

গত ২২ এপ্রিল পাঁচ শিশু-সহ ৬০ জন প্রাণ হারান কাবুলের ভোটার নথিভুক্তকরণ কেন্দ্রে। সেটিরও দায় নিয়েছিল আইএস। তা ছাড়া, আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো বিস্ফোরণ ঘটেই চলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন