যুদ্ধ থামুক, চায় ইয়েমেনের নোরানরা

ইয়েমেনে যুদ্ধ থেমে যাক, চায় নোরান। কারণ ওর মতো অনেক শিশুকে যুদ্ধে আহত হতে হয়। এটা একেবারেই অন্যায্য, বোঝাতে চায় সে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

সানা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩৯
Share:

নোরানের এই ছবিই ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে।

পেরিয়ে গিয়েছে তিনটে বছর। যুদ্ধ, রক্তপাত, বোমার শব্দ এখন রোজনামচা। বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এখন অন্তত ১ কোটি ১৩ লক্ষ শিশু বিপন্ন।

Advertisement

একটি ১৩ বছরের মেয়ের ভিডিয়ো সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। তার নাম নোরান। হুইলচেয়ারে বন্দি মেয়েটার হাত-পা-শরীর বেঁকে গিয়েছে। ঘাড় সোজা করে বসতেও পারে না সে। গোটা বিশ্বের কাছে ভিডিয়োয় বার্তা দিয়েছে সে— সাহায্য করার, তার মতো অগুনতি শিশুর পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ইয়েমেনে যুদ্ধ থেমে যাক, চায় নোরান। কারণ ওর মতো অনেক শিশুকে যুদ্ধে আহত হতে হয়। এটা একেবারেই অন্যায্য, বোঝাতে চায় সে।

হুইলচেয়ারে ঝুঁকে বসেই মেয়েটা বলে যায়, ‘‘হেঁটে হেঁটে স্কুল যেতাম এক সময়। পড়াশোনা করতাম, খেলতাম। অন্য বাচ্চাদের মতোই। স্কুলের ডেস্কে চেয়ারে বসতাম, লিখতাম।’’ দু’বছর আগে আকাশপথে হামলার পরে শিরদাঁড়ায় আঘাত লেগে ভয়ঙ্কর জখম হয় সে। তার পর থেকে পঙ্গুত্বের বোঝা চেপে বসেছে। চিকিৎসা করানোর অর্থটুকুও নেই নোরানের পরিবারের। তাই দিন দিন তার অবস্থা আরও সঙ্গিন হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওর অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু গত ১৮ মাস ধরে বেতন বন্ধ নোরানের বাবার। যখন বাবা বেতন পেতেন, নোরান সঙ্গে যেত ডাকঘর থেকে সেই অর্থ আনতে। চিকিৎসার খরচ কিছুটা জুটত। কিন্তু এখন রোজকার খাবারটা জোগাড় করাও মুশকিল হয়ে পড়েছে।

Advertisement

ক্যামেরার দিকে তাকানো ফ্যাকাশে হাসিমুখটা বলে যায়, ‘‘এখন আর লিখতে পারি না। হাতে ব্যথা করে। পিঠে এমন চোট পেয়েছি... সব চেয়ে দুঃখ হয় যখন খেলতেও পারি না। আগে যেমন পারতাম।’’

যুদ্ধবিমানের চক্কর কাটার শব্দ শুনে ঘুমোতে যাওয়া। রাস্তায় বেরোলে গুলির শব্দ। ঘুম ভেঙে উঠে ধ্বংসের ছবি দেখা। আর দেখতে চায় না নোরানের মতো শিশুরা। আন্তর্জাতিক এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে বার্তা দিয়ে তারা জানিয়েছে, ‘আমরা ইয়েমেনের শিশুরা বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছি। আমরা নিরপরাধ। এই যুদ্ধে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। আমরা কোনও অপরাধ করিনি। আমাদের স্কুলগুলো ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। পড়াশোনা বন্ধ। স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা আর বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারও আমাদের নেই। যত বেশি দিন যুদ্ধ চলবে, আরও বেশি শিশু নিহত হবে। আরও রোগ ছড়াবে। আমাদের পেট ভরানোর জন্য এখনই কাজে নামতে হবে। দেশ, পরিবার, বন্ধুদের জন্য আমাদের কষ্ট হয়। তাই এ বিশ্বে যারা বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাঁদের প্রতি আমাদের আর্জি, ১) শিশু অধিকার রক্ষায় যুদ্ধ থামাতে সাহায্য করুন। ২) শিশুদের উপরে যে হিংসা চলছে, তার নজরদারি ও তদন্ত হোক। ৩) স্কুল সংস্কার হোক, যাতে বাচ্চারা স্কুলে ফিরতে পারে। ৪) যে সব শিশু এই যুদ্ধে সর্বস্ব খুইয়েছে, তাদের আশ্রয় এবং আশ্বাস দেওয়া হোক। ৫) স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ওযুধ বেশি করে থাকুক, হাসপাতাল সংস্কার হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন