রাস্তাঘাটে ভারী বুটের আনাগোনা। যাত্রীদের মাঝে ঘোরাফেরা করছেন উর্দিধারী সশস্ত্র সেনা জওয়ান। শুরু হয়ে গিয়েছে ‘অপারেশন টেমপেরর’।
টিভিতে বিবৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে জানান, সন্ত্রাসের আশঙ্কার মাত্রা চূড়ান্ত। তবে ঘাবড়ানোর কিছুই নেই। ‘‘বাড়তি নিরাপত্তার জন্য পথেঘাটে, বাসে, ট্রেনে প্রচুর সশস্ত্র সেনা-পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে,’’ বলেন তিনি। কয়েক মাস আগেই ম্যাঞ্চেস্টারে আরিয়ানা গ্র্যান্ডের রক কনসার্টে জঙ্গি হামলার পরে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয় ব্রিটেনে।
কিন্তু গত কালের হামলার পর থেকেই উঠে আসছে বেশ কিছু প্রশ্ন। বিস্ফোরকে টাইমার লাগানো সত্ত্বেও কেন ট্রেন যখন ঠিক পার্সনস গ্রিন স্টেশনে ঢুকল, তখনই বিস্ফোরণ ঘটল? চলন্ত ট্রেনে বিস্ফোরণ ঘটলে আরও ভয়ানক কিছু হতে পারত! তবে কি আরও বড় কোনও পরিকল্পনা রয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের? প্রশ্নগুলোর সদুত্তর খুঁজে না পেয়েই হয়তো ফের সন্ত্রাস হানার আতঙ্কে রয়েছে ব্রিটেন।
তবে কিছু উত্তর মিলেছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, ট্রেনের কামরার ভিতরে এক কোণে বিস্ফোরক-ভর্তি সাদা বালতিতে রাখা মূল যন্ত্রটিই গত কাল কাজ করেনি। সেটিতেও বিস্ফোরণ ঘটলে, হতাহতের সংখ্যা অনেক বাড়ত। সন্ত্রাসবাদীদের এই ব্যর্থতা থেকেও আতঙ্ক দানা বাঁধছে, ফের ওরা হামলা চালাবে না তো!
১৮ বছর বয়সি এক যুবককে আজ ডোভারের বন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও সে-ই অপরাধী কি না, স্পষ্ট নয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ ডেপুটি অ্যাসিট্যান্ট নীল বসু বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসছে। তদন্তের গতি নিয়ে আমরা খুশি। কিন্তু সন্ত্রাস হামলার আশঙ্কা এখনও রয়েছে। তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হবে।’’ তিনিই জানান, তদন্তের স্বার্থে ধৃত ব্যক্তি সম্পর্কে এখনই কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না।
তবে পুলিশের কথায় এটাও স্পষ্ট, ওই ব্যক্তির আড়ালে হয়তো আরও অনেক মুখ রয়েছে। ফের হামলার আশঙ্কা করার পিছনে সেটাও একটা বড় কারণ। ব্রিটেনের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী বেন ওয়ালেসের কথায়, ‘‘খুব সম্ভবত আরও ভয়ঙ্কর এক জন বা একাধিক লোক প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করতেই হবে আমাদের।’’ ইতিমধ্যে ৪৫ জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান নিয়েছে সংগ্রহ করেছে পুলিশ। প্রশাসনকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে বহু মানুষ। কয়েকশো ছবি-ভিডিও জমা পড়েছে পুলিশের কাছে।
কালই হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যদিও এই দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের অ্যাসিট্যান্ট কমিশনার মার্ক রাউলি। তাঁর কথায়, ‘‘দায় নেওয়া ওদের নিয়মমাফিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয়তো দেখা যাবে আততায়ীর সঙ্গে ওদের কোনও যোগাযোগই নেই।’’