ফ্রান্সের ট্রেনে বানচাল বন্দুকবাজের হানার ছক

পনেরো সেকেন্ড। আর সেটাই বড়সড় একটা ঝড় বইয়ে দিল সাড়ে পাঁচশো ট্রেনযাত্রীর মনে। কাল বিকেলের ঘটনা। ছুটছে আমস্টারডাম থেকে প্যারিসগামী ট্রেন। মাঝ রাস্তায় কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে যাত্রীদের উপর হামলা চালাতে উদ্যত হয় এক যুবক।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

প্যারিস শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

অ্যান্টনি স্যাডলার (বাঁ দিকে) ও আলেক স্কারলাটোস। এই দুই যুবকের তৎপরতায় পণ্ড হয়েছে নাশকতার ছক। ছবি: এপি।

পনেরো সেকেন্ড। আর সেটাই বড়সড় একটা ঝড় বইয়ে দিল সাড়ে পাঁচশো ট্রেনযাত্রীর মনে।

Advertisement

কাল বিকেলের ঘটনা। ছুটছে আমস্টারডাম থেকে প্যারিসগামী ট্রেন। মাঝ রাস্তায় কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে যাত্রীদের উপর হামলা চালাতে উদ্যত হয় এক যুবক। তিন মার্কিন নাগরিকের চেষ্টায় শেষমেশ ধরাশায়ী হয় জঙ্গি। হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন ট্রেনের সাড়ে পাঁচশো জন যাত্রী। যদিও আহত হয়েছেন ৩ যাত্রী। ফরাসি পুলিশ জানিয়েছে, আটক করা হয়েছে ওই জঙ্গিকে। কী ভাবে অস্ত্র নিয়ে সে ট্রেনে উঠল, তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারী অফিসারদের। পুলিশ ওই যুবকের নাম-পরিচয় সংবাদমাধ্যমকে জানায়নি। তবে একটি সূত্র জানাচ্ছে, সে মরক্কোর নাগরিক। কয়েক বছর ধরে ফ্রান্সে থাকছিল। তার আগে থাকত স্পেনে। উগ্র মৌলবাদীদের সঙ্গে ওই যুবকের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বেলজিয়ামে গুলি চালনার ঘটনার সঙ্গেও এক সময় নাম জড়িয়েছিল ওই যুবকের। বড় ধরনের নাশকতার উদ্দেশ্যেই সে কাল ট্রেনে উঠেছিল বলে দাবি পুলিশের।

ওই ট্রেনে স্বামী জোয়ের সঙ্গে প্যারিস যাচ্ছিলেন অ্যামি নামে এক মার্কিন মহিলা। তিনি জানিয়েছেন, বারো নম্বর কামরায় বসেছিলেন তাঁরা। হঠাৎই শোনেন কাচ ভাঙার ঝনঝন শব্দ। দেখেন, মাথার উপরের জানলার কাচভেঙে পড়ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা দেখেন, এক যুবক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে করিডর দিয়ে এগোতে শুরু করেছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওই জঙ্গির দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন এক ব্যক্তি। নাম, স্পেনসার স্টোন। স্পেনসার আমেরিকার বায়ুসেনার সদস্য। তিনিই প্রথম জঙ্গির হাত থেকে কালাশনিকভ কেড়ে ছুড়ে ফেলে দেন।

Advertisement

ঝাঁপিয়ে পড়েন আরও দুই মার্কিন, আলেক স্কারলাটোস এবং অ্যান্টনি স্যাডলার। এঁরা দু’জনেই স্পেনসারের ছোটবেলার বন্ধু। আলেক জাতীয় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। তিনি জানান, বন্দুকবাজের হাতে ছিল আরও একটি ছোট বন্দুক, একটা ছুরিও। তাঁরা যখন ওই জঙ্গিকে ধরাশায়ী করতে ব্যস্ত, তখন সে পকেট থেকে ছুরি বার করে আক্রমণ শুরু করে। তাতে আহত হয়েছেন স্পেনসার। তাঁর সঙ্গেই আহত হয়েছেন আরও দু’জন। যাঁদের মধ্যে ক্রিস নরম্যান নামে এক ব্রিটিশ নাগরিকও রয়েছেন। তত ক্ষণে অবশ্য মারধরে অজ্ঞান হয়েছে জঙ্গি। তত ক্ষণে অবশ্য ট্রেনের যাত্রীরা ভয়ে অস্থির। মিনিট দশেক পরে ফ্রান্সের আরা শহরে ট্রেনটি থামানো হয়। পুলিশ এসে আটক করে ওই যুবককে।

এত বড় একটা হামলা রোখার জন্য ওই তিন মার্কিন নাগরিককে অভিনন্দন জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। হোয়াইট হাউস একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই তিন জনের এই সাহসিকতার জন্য একটা বড় নাশকতা এড়ানো গেল।

ওই ট্রেনেই ছিলেন ফরাসি অভিনেতা জঁ ইউগুয়েস অঙ্গলান্দ। ট্রেন থেকে নেমে এক ফরাসি পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জঁ বলেছেন, ‘‘আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, আমরা সকলে মরতে চলেছি। আমরা ওই ট্রেনটায় কার্যত বন্দি ছিলাম। ওই তিন জন না থাকলে কী হতো ভাবতেই পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন