আফগানিস্তানে জোড়া জঙ্গি হামলার বলি ৬৩

জঙ্গি হামলায় ফের রক্তাক্ত আফগানিস্তান। আজ সকালে প্রথমে রাজধানী কাবুলে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তি কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে নিজেকে উড়িয়ে দেয় এক আত্মঘাতী জঙ্গি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাবুল শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪৩
Share:

রক্তাক্ত: আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার পরে। কাবুলের রাস্তায়। শনিবার। ছবি: পিটিআই

ছ’মাসের মাথায় পার্লামেন্ট আর জেলা কাউন্সিলের নির্বাচন। আপাতত দেশের নানা প্রান্তে জোরকদমে চলছে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির কাজ। আর সেখানেই এ বার জোড়া হামলা চালাল জঙ্গিরা।

Advertisement

জঙ্গি হামলায় ফের রক্তাক্ত আফগানিস্তান। আজ সকালে প্রথমে রাজধানী কাবুলে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তি কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে নিজেকে উড়িয়ে দেয় এক আত্মঘাতী জঙ্গি। সেই হামলায় মারা যান ৫৭ জন। আহতের সংখ্যা পঞ্চাশেরও বেশি। বিকেলের দিকে বাগলান প্রদেশের পুল-এ-খুমরি শহরে আর একটি নাম নথিভুক্তি কেন্দ্রের সামনে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে একই পরিবারের ছ’জনের। নিহতদের গাড়ি রাস্তার ধারে রাখা একটি বোমায় ধাক্কা খায়। সব মিলিয়ে আজকের জোড়া হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৩।

আফগান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র নাজিব দানিশ প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিলেন, কাবুলের হামলায় তালিবানের হাত থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। যদিও হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি। আফগান বিরোধী দলগুলির দাবি, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সব হামলার ক্ষেত্রেই নিহতের সংখ্যা নিয়ে গড়মসি করে দেশের সরকার। কিন্তু তালিবান সেই হামলার দায় অস্বীকার করে। আর তার পরই আমাক সংস্থার মাধ্যমে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে আইএস। যদিও রাত পর্যন্ত বাগলানের হামলার দায় স্বীকার করেনি কেউ।

Advertisement

কাবুলের সিটি পুলিশ প্রধান দাউদ আমিন জানিয়েছেন, কাবুলে নিহত বেশির ভাগই সাধারণ আফগান নাগরিক। ভোটার তালিকায় নাম তোলাতে লাইন দিয়েছিলেন তাঁরা।

কাবুলের নাম নথিভুক্তি কেন্দ্রটি শিয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে পড়ে। আজ কেন্দ্রের মূল ফটকের সামনে এসে আচমকাই নিজেকে উড়িয়ে দেয় আত্মঘাতী জঙ্গি। মুহূর্তে আর্তনাদ আর হুড়োহুড়ি শুরু হয়। অনেকেই রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন তত ক্ষণে। বিস্ফোরণের জেরে ওই কেন্দ্রের জানলার কাচ ভেঙে রাস্তায় এসে পড়ে। মাটিতে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সরকারি ফর্ম আর ভোটারদের রক্তমাখা ছবি। এই হামলায় বিরক্ত দেশের সাধারণ মানুষও। হামলার পরে ঘটনাস্থলের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকেই চিৎকার করতে থাকেন, ‘‘এই সরকারের মৃত্যু হোক। তালিবানের মৃত্যু হোক।’’ স্থানীয় টিভি চ্যানেলে দেখা গিয়েছে, আহত এক ব্যক্তি কাবুলের হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদছেন। বললেন, ‘‘আমি জানি না, আমার মেয়েরা কোথায়।’’ আজকের বিস্ফোরণে হতাহতদের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি শিশুও। বাবা-মায়ের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়েছিল তারাও।

আগামী ২০ অক্টোবর আফগানিস্তানে ভোট। এই ভোটের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলও। আগামী দু’মাসের মধ্যে মোট সাত হাজার কেন্দ্রে এক কোটি ৪০ লক্ষ আফগানের নাম নথিভুক্তি করার কথা। কিন্তু সেটা যে সহজ হবে না, তা এখন থেকেই টের পাচ্ছে প্রশাসন। নির্বাচন ব্যবস্থায় বাধা দিতে এর আগেও কয়েকটি নাম নথিভুক্তি কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। তবে আজকের মতো এত বড় হামলা প্রথম। কাবুলের এক স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, ‘‘আমরা বুঝে গিয়েছি, এই সরকার আমাদের কোনও নিরাপত্তা দিতে পারবে না। নিজেদের সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে।’’

আজকের জঙ্গি হামলার নিন্দা করেছে পড়শি দেশ ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘নিরীহ আফগানদের উপর এই কাপুরুষোচিত হামলার কড়া নিন্দা করছে ভারত। এই হামলা আসলে গণতন্ত্রের উপর হামলা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন