ফাটেনি এই ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রটি। শুক্রবার গাজার রাস্তায়। ছবি: এপি।
নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে কেউ আগুন দিচ্ছে শব্দবাজির সলতেয়। আর পাশেই কেউ দু’হাতে চেপে ধরেছে নিজের কান। শব্দটা বিকট। অতএব আগাম সতর্কতা।
দীপাবলির রাতের সেই পরিচিত ছবি হঠাৎ গাজার রাস্তায়। তবে আলোর-উৎসবের আনন্দ নয়, এই ছবির দোসর ধ্বংসের বীভৎসতা। আকাশ থেকে নেমে আসছে মিসাইল, রাস্তায় কান চেপে বসে পড়ছেন এক দল মানুষ। রয়েছে শিশুও। পর পর চার বার। প্রথম তিনটে কম শক্তিশালী, শুধু ‘চমকে দিতে’। শেষেরটা মারাত্মক। ইজরায়েলি সেনার এফ-১৬ বোমারু বিমান থেকে ছোড়া মিসাইলে এক মুহূর্তে ধূলিসাৎ গোটা একটা আবাসন। একশো মিটার তফাতে দাঁড়িয়ে হতবাক শিশুরাও।
কিছু ক্ষণের জন্য সব নিশ্চল। রাস্তা জুড়ে ছড়ানো টায়ারে বিপদসীমার সঙ্কেত। খানিক পরেই অবশ্য লোক চলাচল স্বাভাবিক। এমন তো কতই হয়! চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকের ঘটনা। সংবাদ মাধ্যমের সৌজন্যে আজই মিলেছে সেই ‘যুদ্ধ কোলাজ’।
ইজরায়েলি সেনার দাবি, হঠাৎ হানা নয়, ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার আগেই ফোনে বাসিন্দাদের এলাকা খালি করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ৩৫ জন আত্মীয়-স্বজন নিয়ে নিমেষের মধ্যে আবাসন খালি করে পালিয়ে যাবেন কোথায়? প্রাণে বাঁচলেও এখন সেই উত্তর খুঁজে মরছেন বছর আটান্নর বসির আল-রামলোয়াবি। ইজরায়েলি হানায় ঘর ছাড়া দু’লক্ষ মানুষের মতো তিনিও আজ বাস্তুহারা।
গাজার বাসিন্দাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে, মূলত রাষ্ট্রপুঞ্জ ও আমেরিকার মধ্যস্থতায়, আজই গাজায় ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল দু’ পক্ষ। কিন্তু দু’ঘণ্টাও স্থায়ী হয়নি সেই যুদ্ধবিরতি। লঙ্ঘনের দায় কার এ নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ অব্যাহত। দিনের শুরুতেই দক্ষিণ রাফায় ইজরায়েলি হানায় নিহত হন ৫০ জন প্যালেস্তাইনি। আহত অন্তত ২০০। ইজরায়েলের দাবি, মারা গিয়েছে তাদের দুই সেনা। এক সেনাকে অপহরণ করার অভিযোগও উঠেছে হামাসের বিরুদ্ধে। গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এখনও কেন মৌন, সেই প্রশ্ন তুলে আজ ফের সংসদে সরব হয়েছিল বিরোধী পক্ষ। দক্ষিণ গাজার জেবেলিয়ার রাষ্ট্রসঙ্ঘ পরিচালিত একটি স্কুলে ইজরায়েলি হামলার কড়া নিন্দা করে আজ তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু সংসদ অধিবেশনের জিরো আওয়ারে বলেন, “গাজায় যে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করা হচ্ছে, এটা তো জলের মতো পরিষ্কার। এই পরিস্থিতিতে মাঝামাঝি অবস্থান নেওয়ার কোনও মানেই হয় না।” তাঁর এই দাবি সমর্থন করেন বাম, কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাংসদরাও।
প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি স্থায়ী না হওয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৮-২০০৯-এর ‘অপারেশন কাস্ট লিড’-এর থেকেও ভয়াবহ আকার নিয়েছে আইডিএফের এ বারের ‘অপারেশন প্রোটেকটিভ এজ’।