Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna: শিকাগোর গির্জায় রামকৃষ্ণদেবের মূর্তি, সমন্বয়-বার্তা

বাড়িটিতে সব ধর্ম নিয়ে চর্চারই অবারিত দ্বার। আমেরিকার হেরিটেজ আইন মেনে গির্জার উনিশ শতকীয় লাল ইটের স্থাপত্য অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২২ ০৬:৪৩
Share:

ফাইল চিত্র।

রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ভাব প্রচার বটেই! দুনিয়া জুড়ে ঘৃণা ভাষণ আর জাতি বিদ্বেষের দিনে এই কাজ যেন ইতিহাসের কাছেও দায়বদ্ধতা। বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় স্বামী বিবেকানন্দের সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের বাণীর পীঠস্থান শিকাগোয় বসে এ ভাবেই ভাবছিলেন তিনি। রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী স্বামী ঈশাত্মানন্দের পরিকল্পনা ও উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আশীর্বচন পাঠালেন মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ মহারাজ স্বামী স্মরণানন্দও। তত দিনে শিকাগোর আর্ভিং পার্কে সেজে উঠেছে মিশনের বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটির ‘হোম অব হারমনি’।

Advertisement

এ দেশে মসজিদ-মন্দির জটিলতার দিনে এটা ভাবা কঠিন হতে পারে! কিন্তু শিকাগোর ১২০ বছরের পুরনো ‘আর্ভিং পার্ক ইউনাইটেড মেথডিস্ট চার্চ’-টিতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষজনের সহযোগিতায় মসৃণ ভাবেই বসেছে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সুউচ্চ মূর্তি। বলা হচ্ছে, ১৭ ফুট লম্বা এই কল্পতরু ভাবের পরমহংসদেবই বিশ্বের দীর্ঘতম রামকৃষ্ণ-ভাস্কর্য। তবে বাড়িটিতে সব ধর্ম নিয়ে চর্চারই অবারিত দ্বার। আমেরিকার হেরিটেজ আইন মেনে গির্জার উনিশ শতকীয় লাল ইটের স্থাপত্য অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। ‘হোম অব হারমনি’-র প্রবেশদ্বারে উপনিষদের বাণী, ট্রুথ ইজ় ওয়ান, সেজেস কল ইট বাই ভেরিয়াস নেমস (একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি)! এই লেখাটুকু ঘিরে আঁকা বিভিন্ন ধর্মের প্রতীক। অতিথিশালা, সন্ন্যাসী নিবাস, সুবিশাল সাধনাকক্ষের দোতলা বাড়ি। তাতে রয়েছে ‘স্কুল অব ওয়র্ল্ড রিলিজিয়ন’ও।

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সাবেক গির্জাটির দেখভাল শিকেয় উঠেছিল। তখনই তা কিনে নেয় রামকৃষ্ণ মিশনের শিকাগোর বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি। শিকাগোয় আর্ট ইনস্টিটিউটে স্বামী বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক বক্তৃতাস্থল কলম্বাস হলের নাম এখন ফুলারটন হল। সামনের রাস্তাটি ‘অনারারি স্বামী বিবেকানন্দ ওয়ে’। কিন্তু মিশনের আশ্রমটি শিকাগো শহরের কিছুটা বাইরে। তাই আর্ভিং পার্কের গির্জাটি কিনে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে উৎসাহী ছিলেন আশ্রম কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সম্প্রতি নতুন ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে এসে পূর্বতন গির্জার ধর্মযাজক টমাস রলিনসন বলছিলেন, “এই খ্রিস্টান উপাসনালয়টির রূপান্তরে আমি গর্বিত। ঈশ্বর ভালবাসা থেকে এ পৃথিবী সৃষ্টি করেন, কিন্তু আমরা মানুষেরা নিজের দোষে বার বার গোলমাল পাকিয়েছি। বিভিন্ন ধর্মের মানুষজন এখানে এসে তাঁদের মধ্যে মিলটুকুর চর্চা করবেন, এটা প্রভুরই করুণা (গ্রেস)।” শিকাগোর স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি থেকে ইসলাম, ইহুদি, বৌদ্ধ, পার্সি, শিখ, খ্রিস্ট ধর্মের প্রতিনিধিরা সে দিন বর্ণময় মিছিলে পৃথিবীতে ‘স্বর্গ গড়ে তোলা’-রওশপথ নিলেন।

আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী ঈশাত্মানন্দ (দেবু মহারাজ) বলছিলেন, “প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল গির্জার বাড়িটিতে শুধু কোনও একটি ধর্ম নয়, সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের কিছু করতে হবে। কারণ সেটাই ঠাকুর, মা, স্বামীজির ভাব। ঠাকুর নিজের জীবনে তা পালন করেছেন। শিকাগোয় সব ধর্মকে গ্রহণ করার কথা বলেন স্বামীজি। হোম অব হারমনির মধ্যেও সেইআদর্শের স্মারক।”

শিকাগোর এই কাজটির কথা জেনে গত মাসে ঈশাত্মানন্দকে সৌদি আরবের রিয়াধে ‘সর্ব ধর্ম মঞ্চে’ ডাকে ওয়র্ল্ড মুসলিম লিগ বলে একটি প্রতিষ্ঠান। বিশ্ব জুড়ে জঙ্গিবাদের মোকাবিলায় মুসলিম বিশ্বে তাঁরা সব ধর্মের সহাবস্থান এবং বৈচিত্র উদযাপনের প্রচার করছেন। ঈশাত্মানন্দ সেখানে রামকৃষ্ণদেবের ‘যত মত তত পথের’ আদর্শ ও তার প্রয়োগের কথা বলেন। তবে ইদানীং বিভিন্ন দেশে নানা কারণে হিন্দুধর্মের বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে বলে ঈশাত্মানন্দজি মনে করেন। তাঁর কথায়, “সনাতন হিন্দু ধর্মের সবাইকে এক সঙ্গে নিয়ে চলার আদর্শ আবার মনে করাতে হবে। বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ প্রতি পদে উদ্বুদ্ধ করছেন। বিভেদ নয়, মানুষে মানুষের মিলের কথা বলাটাই হল সময়ের দাবি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন