মুম্বই থেকে ওয়াশিংটন, পদচিহ্নের রাজনীতি

আবার রেগে গিয়ে জুতো দেখানো তো রাজনীতিরই অঙ্গ। ১৯৬০ সালের ১২ অক্টোবর। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় তৎকালীন রুশ রাষ্ট্রনেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ পা থেকে খুলে ডেস্কের উপর জুতো ঠুকেছিলেন বলে কথিত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৭
Share:

প্রতিবাদ: ওয়াশিংটনে ক্যাপিটলের বাইরে সাত হাজার জুতো।

বনবাসে উদ্যত রামের কাছ থেকে পাদুকা চেয়ে এনেছিলেন ভরত। তারপর ১৪ বছর সিংহাসনে সেই পাদুকা বসিয়ে দাদার প্রতিনিধি হিসেবেই অযোধ্যা শাসন করেছিলেন। পুরাণবিদরা বলবেন, পাদুকা এখানে শুধু মানুষটির প্রতিভূ নয়, সমর্পণের রূপকও বটে। এ দেশে পাদুকা রাজনীতির ভাবনা সেই শুরু।

Advertisement

আবার রেগে গিয়ে জুতো দেখানো তো রাজনীতিরই অঙ্গ। ১৯৬০ সালের ১২ অক্টোবর। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় তৎকালীন রুশ রাষ্ট্রনেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ পা থেকে খুলে ডেস্কের উপর জুতো ঠুকেছিলেন বলে কথিত। সভায় পূর্ব ইউরোপের বাসিন্দাদের সম্পর্কে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ফিলিপিন্সের তৎকালীন প্রতিনিধি লোরেঞ্জো সুমুলং। সেই কথা শুনে খাপ্পা হয়ে জুতো খুলে লোরেঞ্জোকে জুতো দেখান ক্রুশ্চেভ। তারপর নিজের ডেস্কের উপর বেশ কয়েক বার জুতোটি দুমদুম করে ঠোকেন। ঘটনাপ্রবাহের এই দ্বিতীয় অংশটি আদৌ ঘটেছিল কি না, তা নিয়ে অবশ্য দ্বিমত রয়েছে। সে দিন সাধারণ সভায় উপস্থিত অনেকেই পরে বলেছিলেন, লোরেঞ্জোকে যে ক্রুশ্চেভ জুতো দেখিয়েছিলেন, এ বিষয়ে কোনও সংশয় নেই। তবে তারপরেই তিনি আবার জুতো পরে ফেলেন। ডেস্কের উপর জুতো ঠোকার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।

এখনও অরবিন্দ কেজরীবালের মতো অনেক নেতারই কান ঘেঁষে মাঝেমধ্যে বেরিয়ে যায় কোনও ক্ষুব্ধের এক পাটি চটি। পাকিস্তানে দিন দু’য়েক আগে জুতো উড়ে এসেছে দোর্দণ্ডপ্রতাপ ইমরান খানকে লক্ষ্য করে। তবে অনেকেই বলেন, সেই চটি-প্রতিবাদে উষ্মার প্রকাশ যতটা রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি মাত্রায় রয়েছে শালীনতার অভাববোধ।

Advertisement

কিন্তু জুতোকে অস্ত্র করে যে শালীন, সংযত ভাবেও প্রতিবাদ করা যায়, তা দেখিয়ে দিল ওয়াশিংটন। গত কয়েক দিন ধরে হাজার হাজার জুতো জমেছে আমেরিকার রাজধানীর ক্যাপিটল হিলের লনে। বন্দুক-হিংসার বলি হয়েছে যে সব মার্কিন স্কুলপড়ুয়া, তাদেরই পরিবার পাঠিয়েছে এই অসংখ্য জুতো। পাশে দাঁড়িয়েছেন হলিউডের অভিনেতা সুজান সারানডনের মতো বেশ কয়েকজন। ক্যাপিটলের লনে স্কুল পড়ুয়াদের স্নিকার্সের পাশে ভিড় জমিয়েছে তারকাদের ডিজাইনার বুটস, হিলস আর ওয়েজেস।

প্রতিবাদের এই অভিনব ভাষা খুঁজে বার করেছে মানবাধিকার সংস্থা ‘আওয়াজ’। ‘আওয়াজ’-এর ডেপুটি ডিরেক্টর এমা রুবি স্যাক্সের কথায়, ‘‘পড়ুয়ারা তাদের স্কুল থেকে বেরিয়ে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিচ্ছে, সঙ্গে অভিভাবকেরাও। তাঁদের একটাই দাবি— বন্দুক-হিংসায় যেন আর এক জনও বলি না হয়!’’

গত সোমবার মুম্বইয়ে মিছিলের পরে কৃষকের ক্ষতবিক্ষত পা।

ক্যাপিটল চত্বরে প্রতিবাদ জানাতে ছেলে ড্যানিয়েলের সাদা স্নিকার-জোড়াই পরে এসেছিলেন টম মাউজার। যাওয়ার সময়ে খুলে রেখে যান। ১৯৯৯ সালে কলম্বাইন হাইস্কুলে বন্দুকবাজের হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল কিশোর ড্যানিয়েল। টমের কথায়, ‘‘এই প্রতিবাদকে দু’ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। প্রথমত, পা-হীন জুতোগুলো আমাদের সেই সব ছেলেমেয়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, যারা এই জুতো পরত। একই সঙ্গে আমরা এ কথাও বলতে চেয়েছি যে, সেই সব ছেলেমেয়ের হাঁটা থেমে গেলেও আমরা থামিনি। আমাদের প্রতিবাদ চলছেই, যত ক্ষণ না অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।’’ অস্ত্র আইনে বদল আনবে জুতো-রাজনীতি, এই আশায় ফিতে বাঁধছে স্কুল পড়ুয়াদের পরিবার।

আর তা দেখে অনেকেরই মনে পড়ছে, মুম্বইয়ের রাজপথে ১৮০ কিলোমিটার হেঁটে আসা খালি পায়ের ঘা, চামড়া ফেটে বেরনো রক্ত। যে মিছিলের ছবি দেখে দরিদ্র ভারতের কৃষকদের পায়ে জুতো দিতে চেয়েছে শহুরে ইন্ডিয়া।

নতুন করে শুরু হয়েছে পদচিহ্নের রাজনীতি!

ফাইল চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন